বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম তীর্থস্থান রাঙামাটি রাজবন বিহারে বেইন কর্মীদের পঞ্চশীল গ্রহণ ও বেইন ঘর উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে দু’দিনব্যাপী ৪৮তম কঠিন চীবর দানোৎসব।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে বেইন ঘর উদ্বোধন করেন, রাজবন বিহার উপাসক–উপাসিকা পরিষদের সভাপতি গৌতম দেওয়ান এবং চরকা থেকে সুতা কাটার মধ্যে দিয়ে বেইনের আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট নারী উদ্যেক্তা মঞ্জুলিকা চাকমা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রাঙামাটি রাজবন বিহারের আবাসিক প্রধান, বিহার অধ্যক্ষ প্রজ্ঞালঙ্কার মহাস্থবির এবং বিহারের ভিক্ষু সংঘসহ এ দান অনুষ্ঠানে রাজবন বিহারের সহ–সভাপতি নিরুপা দেওয়ান, রাজবন বিহার উপাসক উপাসিকা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অমীয় কান্তি খীসাসহ গণ্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। রাজবন বিহারের কার্যকরী কমিটির সূত্রে জানা গেছে, রাজবন বিহারের বিশাল এলাকা জুড়ে প্রায় ১২৬টি বেইন ঘর স্থাপন করা হয়েছে। এতে প্রায় ৫ শতাধিক মহিলা–পুরুষ এই চীবর প্রস্তুত কাজে অংশগ্রহণ করে। উৎসবকে ঘিরে যথাযথ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
রাজবন বিহার উপাসক উপাসিকা পরিষদের সভাপতি গৌতম দেওয়ান বলেন, বৃহস্পতি ও শুক্রবার এ দুদিনব্যাপী কঠিন চীবর দান উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এর সফলতা কামনা করছি। পাশাপাশি ভগবান গৌতম বুদ্ধের বাণীর মধ্যে দিয়ে সারা বিশ্বে শান্তি বিরাজ করুক। এদিকে, কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠানকে ঘিরে পাহাড়ের দূর–দূরান্ত থেকে লক্ষাধিক নর–নারী বৌদ্ধ ধর্মালম্বীর সমাগম ঘটে। কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠান সার্বিক নিরাপত্তা ও সুষ্ঠু পরিবেশে উদযাপনের জন্য পুলিশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এখানে ৫৩০ জন কর্মী সার্বিকভাবে স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্ব পালন করছেন। বেইন ঘর ও সুতা কাটার কার্যক্রম উদ্বোধনের পরে শুরু হয় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে চীবর প্রস্তুতের আনুষ্ঠানিকতা। সুতা সিদ্ধ ও রং করা, সুতা টিয়ানো, সুতা শুকানো, সুতা তুম ও সুতা নলীতে ভরা, বেইন টানা দেওয়া, বেইন বুননের মধ্য দিয়ে সারারাত চীবর বুনন কাজ চলে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রাজবন বিহারের অধ্যক্ষ প্রজ্ঞালঙ্কার মহাস্থবির বলেন, কঠিন চীবর দান হচ্ছে বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দান। ভগবান বুদ্ধের সেবিকা বিশাখা কর্তৃক প্রবর্তিত কঠিন চীবর দান উপলক্ষে তিনি পৃথিবীর সকল প্রাণীর হিতসুখ ও মঙ্গল কামনা করেন। এদিকে, রাঙামাটি কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আরিফুল আমিন বলেন, দুদিনব্যাপী রাজবন বিহারের কঠিন চীবর দান উৎসব সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য রাঙামাটি পুলিশ থেকে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। এখানে প্রায় ৩শ পুলিশ সদস্য নিয়োজিত রয়েছে।