কয়েকদিন আগে সন্ধ্যাবেলায় এক মর্মস্পর্শী দৃশ্য দেখি স্টেডিয়ামের সামনে। শরিফুল নামের এক ব্যক্তি একটি হুইল চেয়ারকে ট্রলি বানিয়ে সেখানে শোয়া অবস্থায় নিজে নিজে ট্রলিটা চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন আর স্পীকারের মাধ্যমে দুর্ঘটনায় তাঁর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঘটনা বলছিলেন আর সাহায্য প্রার্থনা করছিলেন। দুর্ঘটনায় তাঁর কোমর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে তিনি হাঁটতে পারেন না, তাই এভাবে ট্রলি চালিয়ে ভিক্ষা করে তাঁর দিন কাটে। দেখছিলাম ওই রাস্তা দিয়ে যারা যাচ্ছিলেন সকলেই যে যার মতন করে সাহায্য করছিলেন উনাকে। আমার কাছে সেই মুহূর্তে তাঁকে সাহায্য করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু নিজের অজান্তেই বেরিয়ে এসেছিলো একটা শব্দ ‘আহারে’! যাই হোক, যে কারণে আমি লেখাটি লিখলাম পরদিন ‘আজাদী’ পত্রিকা পড়তে গিয়ে দেখি শেষের পাতায় একটা হৃদয়স্পর্শী ছবি। ছবিটিতে দেখতে পেলাম সিআরবি এলাকায় দুটি শিশু আমার দেখা সেই শরিফুল নামের ব্যক্তিটির হুইল চেয়ারসহ ট্রলিটিকে টেনে নীচ থেকে উপরের দিকে নিয়ে যেতে সাহায্য করছিলেন যাতে একা একা ট্রলিটি টেনে তুলতে উনার কষ্ট না হয়, তাই সাহায্য করার জন্য বাচ্চাগুলো এগিয়ে এসেছিলো। অনেকের কাছে এটা স্বাভাবিক একটা ঘটনা মনে হতে পারে, কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে এটা একটা অন্যরকম অভূতপূর্ব দৃশ্য! দুটো ছোট ছোট শিশু সাত আট বছর বয়স হতে পারে বা আরও কমও হতে পারে, কী করে বুঝলো ওই ব্যক্তিটির কষ্ট হচ্ছে ট্রলি চালিয়ে উপরে উঠতে! তারা তো এটাকে তেমন কোনও গুরুত্ব না দিলেই পারতো, দেখে বরং একটু হাসাহাসি করতো বা খেলাধূলা করতে চলে যেতো বা নিজেদের কাজের দিকেই মনোযোগ দিতো।
কিন্তু তারা তা করেনি, এগিয়ে এসেছিলো অসহায় মানুষটিকে সাহায্য করতে। কে শেখালো তাদের এই মানবিকতা! আমরা বলি মানবিকতা হারিয়ে গেছে, মানবিক মানুষ এখন আর খুব একটা দেখা যায় না। এখনকার ছেলেমেয়েদের কাছ থেকে মানবিকতা আশা করা যায় না। কিন্তু এই নীতিবাক্যগুলোকে মিথ্যা প্রমাণ করলো ছোট ছোট শিশুগুলো। একটা অসহায় মানুষের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া এর চাইতে বড় মানবিকতা আর কী হতে পারে! এরা হয়তো টাকা দিয়ে সাহায্য করতে পারেনি ওই ব্যক্তিকে কিন্তু অদ্ভুতভাবে বুঝিয়ে দিয়েছে ‘মানুষ মানুষের জন্য’। মানবিকতার চাইতে বড় আর কিছু হতে পারে না। ফুলের মতন ছোট্ট শিশু তোমরা আমি তোমাদের চিনি না কিন্তু স্যালুট জানাই তোমাদের। একদিন তোমরাই ভালো মানুষ হয়ে দেশের জন্য কাজ করবে। আমার ছেলেটাও যেন তোমাদের মতন মানবিক মানুষ হতে পারে। এরকম কত মানবিক মানুষ যে আমাদের চারপাশে ছড়িয়ে আছে হয়তো আমরা জানি না,তাদের চিনতে পারি না। তবে সেদিনের সেই ছবিটি যিনি তুলেছেন তাঁর নাম অনুপম বড়ুয়া। তাঁকেও ধন্যবাদ জানাই এ জন্য, হয় তো পেপারে এ রকম একটা ছবি দেখে অনেক বিত্তশালী মানুষ এগিয়ে আসবেন, এই অসহায় মানুষটির প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে।
লেখক : শিক্ষক