৭৫ শতাংশ রোগী ডেন ২ সেরোটাইপে আক্রান্ত, ৬৫ ভাগই পুরুষ

ডেঙ্গু নিয়ে ছয় প্রতিষ্ঠানের যৌথ গবেষণা

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ১৬ নভেম্বর, ২০২৩ at ৬:২৮ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত ৭৫ শতাংশ রোগী ডেন ২ সেরোটাইপে আক্রান্ত। এদের মধ্যে ৬৫ শতাংশই পুরুষ। ডেঙ্গু রোগীদের প্রতি ৫ জনের মধ্যে একজন শিশু রয়েছে। চট্টগ্রামের বেশ কয়েকটি এলাকাকে ডেঙ্গুর হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসপেরিয়া হেলথ রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধানে সম্প্রতি চট্টগ্রামের ছয়টি প্রতিষ্ঠানের গবেষকদের যৌথ গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণার সময়কাল ছিল জুলাই থেকে নভেম্বরের দ্বিতীয় দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত।

গতকাল বুধবার বিকেলে এসপেরিয়া হেলথ রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করা হয়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মেডিসিন ও পেডিয়াট্রিক নেফ্রোলজি বিভাগ, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল, বিআইটিআইডি, আইসিডিডিআরবি এবং নেক্সট জেনারেশন সিকোয়েন্সিং, রিসার্চ এন্ড ইনোভেশন ল্যাব চিটাগাংয়ের গবেষকরা গত চার মাস ধরে চট্টগ্রামের ১ হাজার ৫৫০ জন ডেঙ্গু আক্রান্তদের নিয়ে গবেষণা করেন। এই রোগীদের রোগতত্ত্ব, জনস্বাস্থ্যগত প্রভাব, ভাইরাসের ধরন, জিনোমের প্রকরণ উক্ত গবেষণায় উঠে এসেছে।

গবেষণায় চট্টগ্রামের ৯৯ শতাংশ রোগীদের মধ্যে জ্বরের প্রাধান্য দেখা যায়। তবে শিশুদের ক্ষেত্রে ১০০ শতাংশ রোগীর মাঝেই জ্বরের লক্ষণ দেখা যায়। এছাড়া স্বল্পশিক্ষিত মানুষের মাঝে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি দেখা যায়। পঞ্চম শ্রেণির বেশি পড়াশোনা করেননি এমন ডেঙ্গু রোগী ছিল চট্টগ্রামে ৪৫ শতাংশ। চট্টগ্রামের ৬০ শতাংশ ডেঙ্গু রোগীর আবাসস্থল পাঁচটি এলাকায়, যা গবেষকরা হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এলাকাগুলো হলো, বাকলিয়া, চকবাজার, কোতয়ালী, ডবলমুরিং এবং বায়েজিদ বোস্তামী। এছাড়াও গ্রামাঞ্চলের মধ্যে সীতাকুন্ড, হাটহাজারী, পটিয়া এবং কর্ণফুলী এলাকা থেকে সবচেয়ে বেশী রোগী পাওয়া গেছে। তাছাড়া চট্টগ্রামের যাদের মধ্যে সেরোটাইপ ১ পাওয়া গেছে তাদের মধ্যে ৭০ শতাংশই ছিল শিশু। চট্টগ্রামের ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশু শহর এলাকায় বেশী, শিশুদের মধ্যে ৭০ শতাংশ এসেছে শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। শহর ও গ্রাম উভয় জায়গাতেই প্রাপ্তবয়স্ক মানুষদের মধ্যে ডেঙ্গু সেরোটাইপ ২ বেশী দেখা গিয়েছে, যা প্রায় ৭৫ ভাগ। রোগীদের মাঝে সচেতনতার অভাব দেখা গেছে। চট্টগ্রামের ২০ শতাংশ মানুষ এখনো জানেন না, ডেঙ্গুর মূল কারণ মশা। জমাটবাধা পানি থাকলে সেখানে ডেঙ্গু মশার বিস্তার বাড়ে, সেই তথ্যও ১৫ শতাংশ মানুষ জানেন না। ডেঙ্গু আক্রান্তদের ৪০ শতাংশ মশারি ব্যাবহার করতেন না।

গবেষণায় আরো দেখা যায়, ৫ শতাংশ মানুষের আগেও ডেঙ্গু হওয়ার ইতিহাস ছিল। গবেষণায় আরো দেখা যায়, চট্টগ্রামে ১১ শতাংশ লোকের মধ্যে ডেন ১ এবং ১৪ শতাংশ লোকের মধ্যে ডেন ৩ পাওয়া যাচ্ছে।

গবেষণা প্রকল্পটির পরিচালক হিসেবে ছিলেন এসপেরিয়া পরিচালক এবং চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক ডা. আবদুর রব, প্রধান গবেষক হিসেবে ছিলেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. এম এ সাত্তার, প্রকল্পের সহপরিচালক হিসেবে ছিলেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ডা. আবুল ফয়সাল মো. নুরুদ্দীন চৌধুরী এবং চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের ডা. এইচ এম হামিদুল্লাহ মেহেদী, সহপ্রধান গবেষক হিসেবে ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এবং বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. আদনান মান্নান এবং আইসিডিডিআরবি’র বিজ্ঞানী ড. মুস্তাফিজুর রহমান। এছাড়া সহগবেষক হিসেবে ছিলেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের পেডিয়াট্রিক নেফ্রোলজি বিভাগের ডা. মারুফুল কাদের, ডা. নূর মোহাম্মদ ও হামিদ হোসেন সাগর, বিআইটিআইডির ল্যাব ইনচার্জ ডা. জাকির হোসেন, ফটিকছড়ি হেলথ কমপ্লেঙের ডা. ইমরুল কায়সার, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এবং বায়োটেকনোলজি বিভাগের শিক্ষক মহব্বত হোসেন ও আফরোজা আক্তার তন্বী, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের ডা. তারেকুল মজিদ। এছাড়াও গবেষণাগারে সহযোগিতা করেন ইশতিয়াক উদ্দিন আহমেদ ও কল্যাণ চাকমা, তানজিনা আক্তার, ইসমাইল আল রশিদ। গবেষণার সমন্বয় ও তত্ত্বাবধানে ছিল স্বাস্থ্যবিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান এসপেরিয়া হেলথ রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচিটাগাং এরিস্টোক্রেট রোটারি ক্লাব ও প্রবর্তক স্কুলের সমঝোতা চুক্তি
পরবর্তী নিবন্ধআগামী প্রজন্মকে হতে হবে যোগ্যতাসম্পন্ন