সুভাষ দত্ত (১৯৩০–২০১২)। চলচ্চিত্র নির্মাতা, সিনেমা চিত্রশিল্পী ও অভিনেতা। তিনি ষাটের দশক থেকে বাংলা চলচ্চিত্রের পরিচিত মুখ। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার–এ শ্রেষ্ঠ প্রযোজক–পরিচালকের পুরস্কারে ভূষিত করে। এবং ১৯৯৯ সালে একুশে পদক প্রদান করে। সুভাষ দত্ত জন্মগ্রহণ করেন মামার বাড়িতে ১৯৩০ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি দিনাজপুরের মুন্সিপাড়ায়। তার কর্মজীবনের শুরু হয়েছিল সিনেমার পোস্টার এঁকে। এ দেশের প্রথম সবাক চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’–এর পোস্টার ডিজাইনার হিসেবে কাজ করেন তিনি। মাটির পাহাড় চলচ্চিত্রে আর্ট ডিরেকশনের মধ্য দিয়ে তার পরিচালনা জীবন শুরু হয়। এরপরে তিনি এহতেশাম পরিচালিত এ দেশ তোমার আমার ছবিতে প্রথম অভিনয়ের সুযোগ পান। তার পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘সুতরাং’ (১৯৬৪)। এবং সর্বশেষ চলচ্চিত্র ‘ও আমার ছেলে’ ২০০৮ সালে মুক্তি লাভ করে। তার অন্যতম সেরা কাজ আলাউদ্দিন আল আজাদের বিখ্যাত উপন্যাস ‘তেইশ নম্বর তৈলচিত্র’ অবলম্বনে সিনেমা ‘বসুন্ধরা’ (১৯৭৭)। জাতীয় পুরস্কারের আসরে তার এই সিনেমা সেরা পাঁচটি পুরস্কার জিতে নেয়। এছাড়াও তার উল্লেখযোগ্য কাজের আরেকটি হলো– ডক্টর আশরাফ সিদ্দিকীর গল্প ‘গলির ধারের ছেলেটি’ অবলম্বনে সিনেমা ‘ডুমুরের ফুল’ (১৯৭৮)। মূলত তিনি ক্রমাগত তার আগের সিনেমাগুলোর গণ্ডি থেকে বের হয়ে নতুন সব সিনেমা নির্মাণ করেছেন। কলাকৌশলের দিক থেকে তিনি রেখেছেন পরিপক্কতার ছাপ। তবে তাকেও কখনও কখনও বেছে নিতে হয়েছে ফর্মূলা সিনেমার ধারাকে। তার আরও বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সিনেমা হলো-‘কাগজের নৌকা’ (১৯৬৬), ‘আয়না ও অবশিষ্ট (১৯৬৭), ‘পালাবদল’, ‘আলিঙ্গন’, ‘আকাঙ্ক্ষা’, ‘সকাল–সন্ধ্যা’, ‘ফুলশয্যা’, ‘সবুজসাথী’, ‘নাজমা’ (১৯৮৩), ‘স্বামী–স্ত্রী’ (১৯৮৭)সহ আরও অন্যান্য। তার নির্মিত সর্বশেষ সিনেমা ‘আমার ছেলে’ (২০০৮)। সিনেমায় বিশেষ অবদানের জন্য তাকে ১৯৯৯ সালে একুশে পদকে ভূষিত করা হয়। মূলত সিনেমায় তিনি বিকল্প ধারার পাশাপাশি বাণিজ্যিক ঘরানার কাজও করেছেন। তবে তিনি তথাকথিত বাণিজ্যিক সিনেমার ফর্মূলার মতো করে সিনেমা নির্মাণ করেননি। তার কাহিনীতে ছিলো নতুনত্ব। পর্দায় ছিলো রসবোধ। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পে তার সুদীর্ঘ কর্ম জীবনে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ বাংলাদেশ সরকার তাকে ১৯৭৭ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার–এ শ্রেষ্ঠ প্রযোজক–পরিচালকের পুরস্কারে ভূষিত করে। এবং ১৯৯৯ সালে একুশে পদক প্রদান করে। এছাড়াও তিনি দেশি–বিদেশি অসংখ্য সম্মাননা লাভ করেছিলেন। মহান এই নির্মাতা এবং অভিনেতা ২০১২ সালের ১৬ নভেম্বর মৃত্যুবরণ করেন।