দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন আহমেদকে অবহিত করেছে কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাত করার পর বঙ্গভবন থেকে বেরিয়ে সিইসি বলেন, দ্রুত আমরা তফসিল ঘোষণা করব, কারণ সময় হয়ে গেছে। আর নির্বাচনের ব্যাপারে আমরা বলেছি, প্রথম সপ্তাহে বা দ্বিতীয় সপ্তাহে, আমরা এখনও ওই অবস্থায় আছি। আমরা বসে চূড়ান্ত যখনই করব, আপনাদের অবহিত করব। নির্বাচন কমিশন যে সাংবিধানিক দায়িত্ব অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনে ‘বদ্ধপরিকর’, সে কথা রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করার কথাও সিইসি বলেন। খবর বিডিনিউজের।
জাতীয় নির্বাচনের আগে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ইসির এই সাক্ষাৎ বেশ গুরুত্ব বহন করে। ভোটের তফসিল ঘোষণার আগে আগে এই সাক্ষাতের প্রথা রয়েছে। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনের পর সংসদের প্রথম অধিবেশন বসে ৩০ জানুয়ারি। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর বিধান অনুযায়ী এর আগে ৯০ দিনের মধ্যে ভোট হতে হবে। সেই হিসাবে গত ১ নভেম্বর নির্বাচনের ক্ষণ গণনা শুরু হয়ে গেছে। ২৯ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের বাধ্যবাধকতা আছে। সেজন্য নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহেই তফসিল আসতে পারে বলে এর আগে কমিশনের তরফ থেকে আভাস দেওয়া হয়েছিল। তফসিলের আগে সার্বিক বিষয়ে রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করার আনুষ্ঠানিকতা সারতে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল এবং চার নির্বাচন কমিশনার মো. আহসান হাবিব খান, বেগম রাশেদা সুলতানা, মো. আলমগীর এবং মো. আনিছুর রহমান গতকাল বেলা ১২টায় তারা বঙ্গভবনে প্রবেশ করেন এবং প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে তাদের বৈঠক চলে। পৌনে ১টার দিকে বঙ্গভবন থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন সিইসি ও অন্য নির্বাচন কমিশনাররা। হাবিবুল আউয়াল বলেন, আমাদের আসার মূল্য উদ্দেশ্য ছিল মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে আসন্ন নির্বাচন বিষয়ে যে প্রস্তুতি গৃহীত হয়েছে সেটা অবহিত করা। আমরা মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে আমাদের সার্বিক প্রস্তুতি অবহিত করেছি। উনি শুনেছেন সন্তুষ্ট হয়েছেন। মহামান্য রাষ্ট্রপতি আশা ব্যক্ত করেছেন, আসন্ন নির্বাচন অবাধ নিরপেক্ষ সুন্দর সুষ্ঠু হবে, সু–শৃঙ্খলভাবে হবে, এ ব্যপারে উনার সহযোগিতার প্রয়োজন হলে উনি আশ্বাস দিয়েছেন, আমরাও বলেছি, প্রয়োজনে আমরাও আপনার সাহায্য সহযোগিতা কামনা করব।
সিইসি বলেন, তিনি (রাষ্ট্রপতি) আমাদের আশ্বস্থ করেছেন, অবাধ নির্বাচনের স্বার্থে যে কোনো সাহায্য সহযোগিতা দিতে তিনি সদা প্রস্তুত থাকবেন। তিনি বলেছেন, গণতান্ত্রিক যে ধারাকাহিকতা, সাংবিধানিক যে ধারাবাহিকতা, এটাকে যে কোনো মূল্যে অব্যাহত রাখতে হবে। আমরা উনাকে জানিয়েছি, আমরা নির্বাচন কমিশন, আমাদের উপর সাংবিধানিক যে দায়িত্ব আরোপিত হয়েছে, সেখানে যে বাধ্যবাধকতা রয়েছে, আমরা সে অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে নির্ধারিত পদ্ধতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে বদ্ধপরিকর। আমরা উনাকে বলেছি, সকল রাজনৈতিক দল সরকার এবং জনগণের সহযোগিতা কামনা করে যাচ্ছি।
হাবিবুল আউয়াল বলেন, আমরা উনাকে আশ্বস্ত করেছি, আমরা সকলের সহযোগিতায় আসন্ন জাতীয় সংসদ যে নির্বাচনে সাংবিধানিক যে বাধ্যবাধকতা, এর আলোকে যথা সময়ে নিস্পন্ন করতে সমর্থ হব। সম্ভাব্য সময়সূচি নির্ধারণ হয়েছে কিনা জানতে চাইলে সিইসি বলেন, সম্ভাব্য সময় সূচির বিষয়ে আমরা উনাকে জানিয়েছি, যেটা উনিও জানেন, যে কোনো মূল্যে আমাদের যে সময়সীমা, ২৯ জানুয়ারির আগেই (নির্বাচন) করতে হবে। আমরা জানিয়েছি, নির্দিষ্ট তারিখের ব্যপারে আমরা এখনও পুরোপুরি সিদ্ধান্ত নিইনি। আমরা আজকে উনার সাথে সাক্ষাৎ করেছি, মতবিনিময় করে গেলাম, আমরা নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সম্ভাব্য সময়সূচি জানিয়ে দেব। দ্রুতই তফসিল ঘোষণা করা হবে জানিয়ে হাবিবুল আউয়াল বলেন, কমিশন বসে দিন তারিখ চূড়ান্ত করলেই গণমাধ্যমকে সেটা জানানো হবে।
বিরাজমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনা হয়েছে কিনা, সিইসির কাছে তা জানতে চেয়েছিলেন সাংবাদিকরা। জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আলোচনা হয়নি। সংলাপ নিয়েও কোনো কথা হয়নি। আমরা শুধু আমাদের কথা বলেছি। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে যাতে নির্বাচন হয় সে ব্যাপারে সবার সহযোগিতা প্রত্যাশা করেছি। রাজনৈতিক মতানৈক্য নিয়ে এ সময় কোনো মন্তব্য করতে চাননি সিইসি। চার নির্বাচন কমিশনারের পাশাপাশি ইসি সচিবও এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন।
বঙ্গভবনের তরফ থেকেও আলাদাভাবে বৈঠকের বিষয়বস্তু জানানো হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, সাক্ষাৎকালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি সম্পর্কে রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করেন। সিইসি জানান, সুন্দর ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করেছে। নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে নির্বাহী বিভাগ সহ–সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, নির্বাচন হচ্ছে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় জনগণের মতামত প্রতিফলনের ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম’। নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করে এবং প্রতিনিধির মাধ্যমেই জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হয়ে থাকে। সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করে মন্তব্য করে রাষ্ট্রপতি বলেন, গণতন্ত্র ও উন্নয়ন একসাথে চলে। রাষ্ট্রপতি বলেন, দেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে হলে দেশের গণতান্ত্রিক ধারাকে অব্যাহত রাখতে হবে। নির্বাচন কমিশনের একার পক্ষে সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব নয়। একটি সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচনের জন্য প্রয়োজন নির্বাহী বিভাগসহ জনগণের সক্রিয় সহযোগিতা। রাজনৈতিক দলগুলোকে এ লক্ষ্যে এগিয়ে আসতে হবে । আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে সরকার নির্বাচন কমিশনক সার্বিক সহযোগিতা করবে বলে আশা প্রকাশ করেন রাষ্ট্রপ্রধান। সেই সঙ্গে নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সাংবিধানিক রীতি–নীতি ও বিধি–বিধান অনুসরণ করে কমিশনকে ‘সাহসিকতা ও আন্তরিকতার সাথে’ দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান। রাষ্ট্রপতির সচিবরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।