বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসকে নিয়ে ‘আক্রমণাত্মক’ মন্তব্য করায় আওয়ামী লীগের চট্টগ্রামের বাঁশখালীর চাম্বল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুজিবুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ।
বিষয়টি নিয়ে তুমুল আলোচনার মধ্যে বৃহস্পতিবার রাতে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সভা শেষে গণভবন গেইটে সাংবাদিকদের এ কথা জানান দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
মুজিবুলের সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, “মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে নিয়ে ‘শিষ্টাচারবহির্ভূত’, ‘অশোভন, আক্রমণাত্মক’ যে বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে তা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের দৃষ্টিগোচরে এসেছে।”
গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, “এজন্য চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার চাম্বল ইউনিয়নের ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ফজলুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে আমরা দলীয়ভাবে ডিসিপ্লিনারি অ্যাকশন নেব। এ ধরনের শিষ্টাচারবহির্ভূত আচরণ করা মোটেও উচিত নয়। এ ব্যাপারে আমাদের নেত্রী সবাইকে সতর্ক করে দিতে বলেছেন।”
প্রসঙ্গত, গত সোমবার বিএনপি’র হরতাল-অবরোধবিরোধী এক সভায় দেওয়া বক্তব্যে রাষ্ট্রদূত হাসকে পেটানোর হুমকি দেন মুজিবুল হক চৌধুরী।
চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় দেওয়া ওই বক্তব্যে তিনি বলেন, “পিটার হাস বলছেন, এখানে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। পিটার হাস আমরা আপনাকে ভয় পাই না। আমরা মোটা চালের ভাত খাই। আপনি বিএনপি’র ভগবান কিন্তু আমরা আওয়ামী লীগ ঈমান বেচি না। আপনাকে এমন মারা মারব, বাঙালি কত দুষ্টু তখন বুঝতে পারবেন।”
যুক্তরাষ্ট্রের কড়া প্রতিক্রিয়া
বিষয়টি নিয়ে কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে সংবাদ প্রকাশিত হলে বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ব্রিফিংয়ে বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করেন বাংলাদেশী এক সাংবাদিক।
জবাবে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল বলেন, “বিষয়টিকে বিস্তৃত দৃষ্টিকোণ থেকে তুলে ধরব আমি। সেটি হচ্ছে, আমাদের কূটনীতিক ও কূটনৈতিক স্থাপনার নিরাপত্তা ও সুরক্ষা সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। আমি মনে করি এ ধরনের উগ্র বক্তব্য অতিশয় অসহযোগিতামূলক।”
পিটার হাসের প্রতি ইঙ্গিত করে ওবায়দুল কাদের বলেন, “সম্মানিত ব্যক্তি, তিনি কূটনীতিক হোক, আর যেই হোন, তার বিরুদ্ধে কোনো শিষ্টাচারবহির্ভূত বক্তব্য হতে পারে না। সবার মর্যাদা আছে এবং এ ধরনের বক্তব্য থেকে ভবিষ্যতে আমাদের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
পিটার হাস গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে নির্বাচন, মানবাধিকারসহ নানা বিষয়ে সোচ্চার।
এর আগে গত বছরের মধ্য ডিসেম্বরে ঢাকার শাহীনবাগে ‘মায়ের ডাক’ নামের একটি সংগঠনের অনুষ্ঠানে গিয়ে ‘মায়ের কান্না’ নামে আরেকটি সংগঠনের তোপের মুখে পড়েন ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস।
হট্টগোলের মধ্যে অনুষ্ঠানটি নির্ধারিত সময়ের আগে শেষ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের কাছে নিজের উদ্বেগের কথা জানিয়েছিলেন রাষ্ট্রদূত।
মুজিবুল হক চৌধুরী এর আগেও গণমাধ্যমে আলোচনায় এসেছিলেন। ২০২২ সালের জুনে চাম্বল ইউনিয়নে ভোটের আগে তিনি গোপন কক্ষে কর্মী রেখে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে বাটন চেপে নিজের পক্ষে ভোট নিয়ে নেওয়ার কথা বলেছিলেন প্রকশ্যেই।
তার বক্তব্যের ভিডিও গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর সেটি আমলে নিয়ে সেই ইউনিয়নে ভোট স্থগিত করে দেওয়া হয়। পাশাপাশি মুজিবুলের বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশ দেয় নির্বাচন কমিশন।
আইনি লড়াই শেষে গত বছরের ১২ অক্টোবর ভোট হলে জয় পান মুজিবুলই।
পিটার হাসকে নিয়ে বক্তব্য দেওয়ার পর সেটি নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হলে মুজিবুল হক চৌধুরীর ফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।
বাঁশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল উদ্দিন জানান, তার বিরুদ্ধে ৩-৪টি মামলা আছে।