কক্সবাজার রুটের নতুন রেলপথ পরিদর্শনে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশে ছেড়ে গেছে একটি ট্রেন।
চট্টগ্রাম রেল স্টেশন থেকে আজ রবিবার (৫ নভেম্বর) সকাল সোয়া ৯টায় ট্রেনটি ছেড়ে যায়। নতুন রেলপথ ট্রেন চলাচলের জন্য নিরাপদ কি না সেটি দেখতেই ট্রেন চালিয়ে এটি পরিদর্শন করছেন রেল কর্মকর্তারা।
সরকারি রেল পরিদর্শক (জিআইবিআর) রুহুল কাদের আজাদ বেলা সোয়া ১১টার দিকে বলেন, “আমরা এখন দোহাজারীর কাছাকাছি আছি। এখন পর্যন্ত ভালোভাবেই ট্রেন নিয়ে এসেছি। এর আগে সকাল পৌনে ১০টার দিকে পরিদর্শন ট্রেনটি মেরামত হওয়া কালুরঘাট সেতু পার হয়। কক্সবাজারের পথে যাওয়া এই ট্রেনে রয়েছে আটটি বগি৷”
চট্টগ্রাম রেল স্টেশনে সকালে পূর্ব রেলের জিএম নাজমুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, “নতুন নির্মিত রেলপথ ট্রেন চলাচলের জন্য নিরাপদ কি না তা দেখার জন্যই এ পরিদর্শন। এটি রেলের রুটিন কাজ। এটা কোনো ট্রায়াল রান নয়, এটা পরিদর্শন ট্রেন।”
নবনির্মিত এই রেলপথের মাধ্যমেই প্রথমবারের মতো কক্সবাজারের সঙ্গে রেল যোগাযোগ তৈরি হচ্ছে। শনিবার কালুরঘাট সেতুতে তিনটি ইঞ্জিন চালিয়ে ট্রায়াল দেওয়া হয়। আগামী ১১ নভেম্বর নতুন এই রেলপথ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এ রেলপথ নির্মাণের আগে কক্সবাজারের সঙ্গে কোনো রেল যোগাযোগ ছিল না। শুরুতে এটি ছিল ‘দোহাজারী হতে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু হতে ঘুমধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েল গেজ ট্র্যাক নির্মাণ’ প্রকল্প। এতে মোট ১২৯ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার রেল লাইন নির্মাণের কথা ছিল।
পরে রামু থেকে ঘুমধুম অংশের কাজ স্থগিত করা হয়। এখন চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণের কাজ করা হচ্ছে।
মোট ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকার এই প্রকল্পে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ১৩ হাজার ১১৫ কোটি টাকা প্রকল্প সহায়তা দিয়েছে। বাকি ৪ হাজার ১১৯ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে।
প্রকল্পের জন্য কক্সবাজার জেলায় ১ হাজার ৩৬৫ একর জমি অধিগ্রহণ করতে হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় নির্মাণ করা হয়েছে নয়টি রেলওয়ে স্টেশন, চারটি বড় ও ৪৭টি ছোট সেতু, ১৪৯টি বক্স কালভার্ট এবং ৫২টি রাউন্ড কালভার্ট।
বর্তমান সরকার ২০১০ সালে প্রকল্পটির প্রথম অনুমোদন দেয়। তখন প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা। প্রকল্প শেষ করার কথা ছিল ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে।
পরে জমি অধিগ্রহণের ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনা করে প্রকল্পটিতে অর্থায়নের জন্য এডিবিকে প্রস্তাব দেয় সরকার।
এডিবি বিশদ সমীক্ষা পরিচালনা করে ট্রান্স এশিয়ান রেল লাইনের আওতায় প্রকল্পটিতে অর্থায়নে সম্মতি দেয়। এরপর ২০১৭ সালে প্রথম সংশোধনীতে প্রকল্পটির ব্যয় ১৮ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত।
এরপর মহামারীর কারণে কাজের অগ্রগতি প্রত্যাশিত না হওয়ায় প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়। তবে তার আগেই উদ্বোধন হতে যাচ্ছে এই রেলপথ।