শারদীয় ঐতিহ্য ও সমপ্রীতির বন্ধন

মুহাম্মদ সাজিদুল হক | মঙ্গলবার , ২৪ অক্টোবর, ২০২৩ at ৬:৪১ পূর্বাহ্ণ

ধর্ম যার যার, উৎসব সবার এ রকম সমবেত ধ্বনিকে সামনে রেখে এদেশে সর্বদা ধর্মীয় উৎসব উদযাপিত হয়ে আসছে। জাতিধর্ম নির্বিশেষে সবাই উৎসবের আয়োজনে অংশগ্রহণ করেন। গত বছর করোনা ভাইরাসের কারণে শারদীয় দুর্গোৎসব উদযাপনে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটেছিল। এইবছর যথারীতি শারদীয় দুর্গোৎসব উদযাপনে ভিন্ন ধারারই প্রতিফলন ঘটেছে। সনাতন ধর্ম মতে, শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রতি বছর এ শরৎকালে স্বর্গলোক থেকে মর্ত্যলোক অর্থাৎ এ পৃথিবীতে আগমন ঘটে দেবী দুর্গার। শুক্লপক্ষের ষষ্ঠ তিথি অর্থাৎ মহালয়ায় দেবী দুর্গার আগমন, আর বিসর্জনের মধ্য দিয়ে সে উৎসবের আনুষ্ঠানিক পরিসমাপ্তি ঘটে। কারণ তিনি উৎসব শেষে ঠাঁই নেন পূজারীর অন্তরে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের এ পূজা একই সঙ্গে একটা নিগূঢ় সামাজিক ঐতিহ্যপূর্ণ উৎসব, যা এ বাংলায় আবহমানকাল থেকেই পালিত হয়ে আসছে। এটি বাঙালি হিন্দুদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসবও বটে। সামপ্রদায়িক সমপ্রীতির অনন্য নিদর্শন বাংলাদেশে এ উৎসব আনন্দঘন ভাবে উদযাপিত হচ্ছে এটাই আমাদের আনন্দের বিষয়।

স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দুর্গাপূজা ছিল চাবাগান ও গ্রামকেন্দ্রিক এক আনন্দঘন আয়োজন। প্রায় প্রতিটি গ্রামে পূজা অনুষ্ঠিত হত এবং স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বারগণ ধর্মীয় ভাবনার ঊর্ধ্বে উঠে সার্বিক সহযোগিতা করতেন। দুর্গাপূজা মণ্ডপের আঙ্গিনায় রামায়ণের কীর্তন, পালাগান, কবির লড়াই অনুষ্ঠিত হওয়ার দৃশ্যই ছিল গ্রামের সকল মানুষের মাঝে আনন্দঘন এক মহামিলনের কেন্দ্রস্থল।এছাড়াও দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে মেলাপ্রাঙ্গণে বসত বিভিন্ন রকমের গ্রামীণ মেলা তাতে নাগরদোলা থেকে আরম্ভ করে মুরগির লড়াই সবই ছিল বিশাল আয়োজনের অংশ। বিভিন্ন রকমের নারিকেলের সন্দেশ, নাড়ু, নানা রকমের পিঠামিঠাই এসবই ছিল বাংলার শারদীয় উৎসবের প্রধান আকর্ষণ এবং মিলনমেলার চিরচারিত অংশ।

আমার স্মৃতিতে এখনো আছে স্কুলের সনাতন ধর্মালম্বীর বন্ধুর আয়োজনে পূজামণ্ডপ ঘুরে দেখা আর বাসায় গিয়ে নারিকেল নাড়ুর স্বাদ ছাড়া আসতাম না। চট্টগ্রামের শপিং কমপ্লেঙের পিছনে গোরাংগ বাড়ি পূজামন্ডপসহ গোলপাহাড় কালী বাড়ি, চট্টেশ্বরী, এনায়েতবাজার সংগীত ভবন, মোমিন রোড চেরাগি পাহাড়, আন্দরকিল্লা রাজাপুকুর লেইন, দেওয়ানজি পুকুর ছাড়াও হাজারি গলির পূজামণ্ডপ কথা এখনো আমার স্মৃতিতে ঠাঁই করে আছে। এখন পূজার প্রসাদ হিসাবে দেখামেলে খিচুড়ি বা পোলাও বা মিষ্টিমিঠাই। ঐতিহ্যবাহী নাড়ু বা সন্দেশের আয়োজন চোখে পড়ে না সেই আগের মতো।

আমার সকল সনাতন ধর্মালম্বী বন্ধু ও সোশ্যাল মিডিয়ার শুভাকাঙ্‌ক্ষী সহ বাংলাদেশে জনগণের মাঝে বিরাজমান সামপ্রদায়িক সমপ্রীতির ঐতিহ্য আরো সমৃদ্ধ হোক। আরো সুসংহত হোক বাংলাদেশে অসামপ্রদায়িক চেতনা এই দিনে এমনটাই প্রত্যাশা থাকবে আমার প্রার্থনায়। সমপ্রীতির বন্ধন অটুট থাকুক।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদুর্গতিনাশিনী মা
পরবর্তী নিবন্ধশ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় বিজয়া দশমী