শারদীয় দুর্গোৎসবের মহাঅষ্টমীতে গতকাল অনুষ্ঠিত হয় কুমারী পূজা। পূজায় কুমারীরূপী দেবী দুর্গার জীবন্ত প্রতিমার কাছে অশুভ শক্তির বিনাশ আর শুভ শক্তির সূচনা কামনা করেন পুণ্যার্থীরা। পঞ্জিকা অনুযায়ী গতকাল ৯টা ৪৯ মিনিটে দুর্গাদেবীর মহাঅষ্টমী কল্পারম্ভ, মহাষ্টমীবিহিত পূজা প্রশস্তা ও মহাঅষ্টমীর ব্রতবাস শুরু হয়। দুপুর ১২টার পর পুষ্পাঞ্জলি প্রদান ও কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হয়। বিকাল ৪টা ৫ মিনিট থেকে ৪টা ৫৩ মিনিটের মধ্যে সন্ধিপূজার মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে মহাঅষ্টমীর আনুষ্ঠানিকতা। প্রতি বছরের মতো এবারও মহাঅষ্টমীতে নগরীর পাথরঘাটায় রাধাগোবিন্দ ও শান্তনেশ্বরী মাতৃমন্দিরে কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এবার এই মন্দিরে ১১ জন কুমারীর অংশগ্রহণে কুমারী পূজা হয়। এতে পৌরহিত্য করেন শ্যামানন্দ দাস মোহন্ত মহারাজ। কুমারী পূজার জন্য মাতৃভাবের পবিত্রতার প্রতীক হিসেবে এ বছর কুমারী মায়ের আসনে বসানো হয়েছে ৮ বছর থেকে ১২ বছর বয়সী ১১ জন কুমারী মেয়েকে।
কুমারী পূজায় ভৈরবী নামে পূজিত হয়েছেন ১২ বছরের পূজা দাশ, রুদ্রাণী নামে ১১ বছরের অস্মিতা সেন, কালসন্দর্ভা নামে ৯ বছরের সুভদ্রা বিশ্বাস, মালিনী নামে ৭ বছরের নিভৃতি দত্ত, তিথি দাশ, আদ্রিতা বিশ্বাস ও আদ্রিতা চৌধুরী, কুব্জিকা নামে ৮ বছরের পৌষালী রায় ও প্রীত ধর, অপরাজিতা নামে কৃত্তিকা চৌধুরী ও কালসন্দর্ভা নামে আনমোল বণিক। এদিকে প্রথমবারের মতো আন্দরকিল্লা রাজাপুর লেইন পঞ্চমাতা বিগ্রহ মন্দিরে কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হয়। প্রেমময়ানন্দ ব্রহ্মচারীর পৌরহিত্যে ৫ বছরের ঋত্বিকা সাহাকে মাতৃদেবীর ‘সুভগা’রূপে পূজা করা হয়। মণ্ডপে দুর্গাপ্রতিমার সামনে বেনারসি শাড়ি পরা, সালঙ্কারা কুমারীকে নিয়ে আসা হয় বেলা ১১টায়। সেখানেই হয় মায়ের পূজা। কুমারী পূজার পর অনুষ্ঠিত হয় সন্ধিপূজা।
শারদীয় দুর্গোৎসবের আজ মহানবমী। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মতে, মহানবমীর দিন হচ্ছে দেবী দুর্গাকে প্রাণভরে দেখে নেওয়ার ক্ষণ। অগ্নি সব দেবতার যজ্ঞভাগ বহন করে যথাস্থানে পৌঁছে দিয়ে থাকেন। আজ সকাল ৯টা ৪৯ মিনিটে পুরোহিতের মন্ত্র উচ্চারণ আর চণ্ডীপাঠসহ বিহিত পূজার মাধ্যমে উদযাপিত হবে মহানবমী। নবমী তিথি শুরু হয় সন্ধিপূজা দিয়ে। অষ্টমীর শেষ ২৪ মিনিট ও নবমীর প্রথম ২৪ মিনিট, মোট ৪৮ মিনিটে সন্ধিপূজা হয়। মূলত দেবী চামুণ্ডার পূজা করা হয় এ সময়। এ সময়ে দেবী দুর্গার হাতে বধ হয়েছিল মহিষাসুর। আর রাম বধ করেছিলেন রাবণকে। এই তিথিতে মানবকল্যাণে রামসহ সকল দেব–দেবীকে আশীর্বাদ করেন দেবী দুর্গা। এদিনই দুর্গাপূজার অন্তিম দিন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারণ পরের দিন বিসর্জনের পর্ব। নবমীর রাতে শারদীয় দুর্গাপূজার পাঁচদিনের উৎসবের রাত শেষ হয়। নবমী রাতে তাই মণ্ডপে মণ্ডপে বিদায়ের ঘণ্টা বাজে। ভক্তদের হৃদয় ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে।
গতকাল মহাঅষ্টমীতে বিকালের পর থেকে মণ্ডপে মণ্ডপে দেবী দর্শনে বের হন ভক্তরা। সন্ধ্যার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মণ্ডপে মণ্ডপে ছিল নারী–পুরুষ–শিশুসহ সব বয়সী ভক্তের ঢল। নগরীর বেশ কয়েকটি মণ্ডপ ঘুরে দেখা গেছে, সন্ধ্যার পর থেকে থিমভিত্তিক পূজামণ্ডপগুলোতে নানা বয়সী মানুষের ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হয়েছে আয়োজকদের। বিশেষ করে নগরীর হাজারী গলি পূজামণ্ডপ, আগ্রাবাদ একতা সংঘ, সতীশবাবু লেইন, কুসুম কুমারী সিটি কর্পোরেশন পূজামণ্ডপ, জেএম সেন হল পূজামণ্ডপ, আগ্রাবাদ গোসাইলডাঙ্গা পূজামণ্ডপ, দক্ষিণ নালাপাড়া পূজামণ্ডপ, পাথরঘাটা দুর্গা মন্দির, চেরাগী পাহাড় পূজামণ্ডপ, ঘাটফরহাদবেগ পূজামণ্ডপ, এনায়েত বাজার পূজামণ্ডপগুলোতে প্রতিমা দেখার জন্য নারী–পুরুষ থেকে শুরু করে বয়োবৃদ্ধ এবং শিশুরাও লাইন ধরে গভীর রাত পর্যন্ত প্রতীমা দর্শন করেছেন। এছাড়া নগরী এবং জেলার সবগুলো মণ্ডপে গতকাল মহাঅষ্টমীতে ভক্তদের উপচে পড়া ভিড় ছিল।
মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি লায়ন আশীষ ভট্টাচার্য বলেন, আমরা একাধিক টিম নগীর সবগুলো পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করেছি। সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছি। উৎসবমুখর পরিবেশে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম জেলা পূজা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সুগ্রীব মজুমদার দোলন বলেন, ১৫ উপজেলার সব জায়গায় পূজা কমিটির পক্ষ থেকে মনিটরিং টিম রয়েছে। আমরা ১৫ উপজেলার প্রায় সব পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করেছি। সবখানে উৎসবমুখর পরিবেশে পূজা উদযাপন হচ্ছে।
চট্টগ্রামের সকল মন্ত্রী–এমপি ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দও পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করেছেন।
রামকৃষ্ণ মিশন সেবাশ্রমে দশমী পূজার সময়সূচি : চট্টগ্রাম রামকৃষ্ণ মিশন সেবাশ্রম প্রাঙ্গণে আগামীকাল সকাল সাড়ে ৮টায় পূজাতত্ত্ব আলোচনার পর দশমী পূজার পুষ্পাঞ্জলি প্রদান হবে সকাল সাড়ে ৯টায়। সাড়ে ১০টায় দর্পণ, বিসর্জন এবং সন্ধ্যারতির পর প্রতিমা নিরঞ্জন ও শান্তিজল গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।