বিএনপি যেন কোনো অশুভ পদক্ষেপের মাধ্যমে আগামী জাতীয় নির্বাচন বানচাল করতে না পারে সেজন্য দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যেভাবেই হোক এ দেশে নির্বাচন হবেই। জনগণ স্বাধীনভাবে ভোট দেবে। গতকাল শনিবার ঢাকার কাওলায় আওয়ামী লীগের সুধী সমাবেশে বক্তব্য রাখছিলেন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশের প্রধান বিমানবন্দর শাহজালালে থার্ড টার্মিনাল উদ্বোধন উপলক্ষে ৭ অক্টোবর এ সমাবেশ হওয়ার কথা ছিল। তবে অতি বৃষ্টির কারণে ওই সময় তা স্থগিত করা হয়।
নাটকেরও সীমা আছে : খালেদা জিয়ার জন্য বিএনপির নেতাকর্মীদের অনশনকে ‘নাটক’ বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী। অসুস্থ মাকে দেখতে ছেলে কেন আসে না সেই প্রশ্নও করেন তিনি। বিএনপির চেয়ারপারসনের মুক্তির জন্য দলের অনশন কর্মসূচির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আজকে দেখি খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য বিএনপি নেতারা অনশন করে। আমি জিজ্ঞেস করি তারা কয়টা থেকে অনশন শুরু করেছিল? বাসায় কী দিয়ে নাস্তা করে এসেছে? বাড়িতে কী দিয়ে ভাত খাবে? কয় ঘণ্টার অনশন? নাটক করারও একটা সীমা থাকে। এই নাটকই করে যাচ্ছে। খবর বাসস, বিডিনিউজ ও বাংলানিউজের।
বিভিন্ন অসুস্থতা নিয়ে ঢাকার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিএনপি ও সমমনা জোট–দলের নেতাকর্মীরা রাজধানীসহ মহানগর ও জেলায় তিন ঘণ্টার অনশন কর্মসূচি পালন করেন। এ কর্মসূচি নিয়ে বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, তার মা তো অসুস্থ। আপনারা অনশন করেন। তাহলে ছেলে কেন মাকে দেখতে আসে না। এটা কেমন ছেলে, সেটা আমার প্রশ্ন। মা তো অসুস্থ, মরে মরে, সে নাকি যখন তখন মরে যাবে… হ্যাঁ বয়সও হয়েছে, অসুস্থ তো বটে। মাকে দেখতে আসে না কেন? আমি তো বলব মাকে দেখতে আসুক।
সরকারপ্রধান বলেন, তার বড় বোন, বোনের জামাই, ভাই আমার সঙ্গে গণভবনে দেখা করতে আসে। কান্নাকাটি করে। সরকারপ্রধান হিসেবে আমি যকটুকু ক্ষমতা, যদিও ক্ষমতায় থাকতে আমাকে হত্যার জন্য গ্রেনেড হামলা, কোটালিপাড়ায় বোমা পুঁতে রাখা, বারবার হামলা করেছিল। যখন সে এক একটা বক্তৃতা দিয়েছে তারপরই হামলা হয়েছে। আল্লাহ আমাকে রক্ষা করেছে। নেতাকর্মীরা জীবন দিয়ে রক্ষা করেছে। অথচ আমি তাকে বাসা থেকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিয়েছি।
সমাবেশে তিনি বলেন, এ দেশের মানুষ সরকার উৎখাতের চেষ্টা করতে দেবে না। তারা নাকি আমাদের উৎখাত করে দেবে। সময় দিয়েছিল ১০ ডিসেম্বর। বিজয়ের মাসে আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত করবে? যে সরকার জনগণের রায় নিয়ে বারবার নির্বাচিত হয়েছে। দেশের মানুষ এটা মেনে নিতে পারে না। বিএনপির দুর্নীতি, লুটপাট, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, অর্থপাচারের কারণে ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা জারি হয়েছিল বলে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, সেই সময় মুচলেকা দিয়ে খালেদা জিয়ার ছেলে বিদেশে পালিয়ে যায়। যে নাকি জীবনে আর রাজনীতি করবে না। কিন্তু যে টাকা সে পাচার করেছে, সেই মামলায় এফবিআই স্বাক্ষ্য দিয়ে গিয়েছিল। সে ওই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। তাদের ব্যবসা ছিল অস্ত্র চোরকারবারি, অর্থ পাচারকারী।
বিএনপি ভোট কারচুপি করেছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা অনেক সংগ্রাম করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছি। গণতান্ত্রিক ধারা থাকলে পরে একটা দেশের উন্নতি হয়। আর গণতান্ত্রিক ধারায় যারা বিশ্বাস করে তারা ক্ষমতায় থাকলে দেশের যে উন্নয়ন হয় সেটা আজকে প্রমাণিত।
২০০১ সালে দেশের সম্পদ বিক্রির মুচলেকা দিয়ে বিএনপির ক্ষমতায় আসার অভিযোগ করে শেখ হাসিনা বলেন, গ্যাস বিক্রির প্রস্তাব আমার কাছেও এসেছিল। বলেছিলাম, আমি শেখ মুজিবের মেয়ে, দেশের স্বার্থ কখনও বেচি না। ক্ষমতার লোভ আমার নেই। খালেদা জিয়া এসে গ্যাস তো দিতেই পারিনি, উল্টো বাংলাদেশকে পাঁচ পাঁচবার দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন করেছে। আর নিজে বিদেশ থেকে টাকা এসেছিল এতিমখানার জন্য, এতিম একটা টাকাও পায়নি, সব টাকা মেরে দিয়েছে। খালেদা জিয়ার নাইকো দুর্নীতি মামলার বিরুদ্ধে স্বাক্ষ্য দিতে কানাডার পুলিশ এবং আমেরিকা থেকে গোয়েন্দা সংস্থার লোক আসার জন্য তৈরি। যখনই তারা আসতে বলে তখনই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থাকতে ক্ষমতার দাপট দেখিয়েছিল। ক্ষমতায় থাকতে সে বলেছিল আওয়ামী লীগ ১০০ বছরেও ক্ষমতায় আসতে পারবে না। বলেছিল শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী দূরে থাক বিরোধী দলীয় নেতাও হতে পারবেন না। আল্লার মাইর দুনিয়ার বাইর, এখন তিনি না প্রধানমন্ত্রী, না বিরোধী দলীয় নেত্রী কিছু হতে পারেননি। কিন্তু দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি।
আগামী নির্বাচনে বিএনপির নেতাটা কে, প্রধানমন্ত্রী কে হবে? : আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির নেতা কে হবেন এবং (তারা যদি জেতে) প্রধানমন্ত্রী কে হবেন, এমন প্রশ্ন তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিএনপি নির্বাচন বানচাল করতে চায় বলে অভিযোগ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ একমাত্র নৌকা মার্কাই পারে। তাই আপনাদের কাছে আমার এটাই আবেদন থাকবে, আগামী নির্বাচন, আমি জানি বিএনপি নির্বাচনে আসবে কি আসবে না, তারা দ্বিধা–দ্বন্দ্বে ভোগে। খুব স্বাভাবিক, তারা যে নির্বাচন করবে তাদের নেতাটা কে? তারা যে নির্বাচন করবে, তাদের প্রধানমন্ত্রী কে হবে? ওই দুর্নীতিবাজ পলাতক আসামি নাকি এতিমের অর্থ আত্মসাৎকারী? তিনি নাকি যায় যায়, আরেকটা পলাতক, তাহলে কে করবে? এজন্য তাদের একটাই চিন্তা, তা হচ্ছে নির্বাচন বানচাল করা।
নৌকা মার্কায় ভোট দিতে সবাইকে ওয়াদা করার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা চাই নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আবারও যেন আমরা আপনাদের সেবা করতে পারি। আপনারা আমাদের কথাটা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেবেন যে, উন্নয়ন চাইলে নৌকা মার্কা। নৌকা মার্কায় ভোট দেন, আপনাদের সেবা করার সুযোগ দেন। আমি আপনাদের কাছে ওয়াদা চাই। শুধু নিজে দিলে হবে না, পরিবার, বন্ধু–বান্ধব সবার কাছে প্রচার করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনাদের কাছে অনুরোধ, প্রত্যেকের এক ইঞ্চি জমি যেন অনাবাদি না থাকে, সবাই উৎপাদন করেন। বিশ্বব্যাপী খাদ্য মন্দা, বাংলাদেশে যেন খাদ্যের অভাব না হয়।
ঢাকা ঘিরে এলিভেটেড এঙপ্রেসওয়ে : রাজধানীর যানজট কমাতে আগামীর পরিকল্পনাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। নতুন একটি এঙপ্রেসওয়ে করার ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, কোনো জমি অধিগ্রহণ করে না, পুরো ঢাকা ঘিরে হবে এলিভেটেড এঙপ্রেসওয়ে। সেটার জন্য চিন্তাভাবনা আছে, আমরা কাজ করছি। রেললাইনের কারণে ঢাকায় যেসব এলাকায় যানজট হয়, সেসব এলাকা ঘিরেও বিশেষ পরিকল্পনার কথা জানান তিনি।
মজুতদার, কালোবাজারির সাজা হবে : নিত্যপণ্যের দরে ঊর্ধ্বগতির বিষয়টিও উঠে আসে শেখ হাসিনার দীর্ঘ বক্তব্যে। এজন্য তিনি দায়ী করেন মজুতদার ও কালোবাজারিদের। তিনি বলেন, অনেক সময় দেখি অনেকে কোনো কোনো জিনিস মজুদ করে। কে, কোথায় মজুত রেখে পেঁয়াজ পচাবে, ডিম পচাবে, আর মানুষকে বেশি দামে কিনতে হবে। এটা চলবে না। ওই মজুদ যারা করে তাদেরকে খুঁজে বের করতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা আমরা নেব, যথাযথ সাজার ব্যবস্থা করা হবে। যাতে দেশের মানুষ যেন কষ্ট না পায়।