চিকিৎসার জন্য খালেদাকে বিদেশে পাঠানোর সুযোগ নেই : আইনমন্ত্রী

| সোমবার , ২ অক্টোবর, ২০২৩ at ৪:২৩ পূর্বাহ্ণ

চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর সুযোগ নেই। ৪০১ ধারার ক্ষমতাবলে যে দরখাস্ত নিষ্পত্তি করা হয়েছে, তা খোলার আর কোনো সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক। গতকাল দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রীর নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।

আইনমন্ত্রী বলেন, আইনের ৪০১ ধারার কোনো দরখাস্ত যদি একবার নিষ্পত্তি করা হয়, সেই নিষ্পত্তিকৃত দরখাস্ত পুনর্বিবেচনা করার কোনো অবকাশ আর আইনে থাকে না। ঠিক সেই ফৌজদারি কার্যবিধি ৪০১ ধারার উপধারা ১, , , , ৫ ও ৬ ব্যাখ্যা করে আমরা আমাদের মতামত পাঠিয়ে দিয়েছি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সেখানে আমরা মতামত দিয়েছি, ৪০১ ধারার ক্ষমতাবলে যে দরখাস্ত নিষ্পত্তি করা হয়েছে সেটা পাস্ট অ্যান্ড ক্লোজড ট্রানজেকশন। এটি খোলার আর কোনো উপায় নেই। খবর বাংলানিউজের।

এখন যদি বেগম জিয়ার পরিবার তাকে বিদেশে পাঠাতে চায়, তাহলে কী প্রক্রিয়ায় যেতে হবেএমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, তাকে এখন যে আদেশ বলে ৪০১ ধারায় দুটি শর্তে ছয় মাসের জন্য সাজা স্থগিত রেখে মুক্তি দেওয়া হয়েছে, তা বাতিল করে পুনরায় বিবেচনা করার সুযোগ থাকলে সেটা করা হবে।

তাহলে আবার আদালতে যেতে হবে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আদালতে যাওয়ার বিষয়টি সবসময় আছে। তবে বিষয়টি আরও স্পষ্ট করে বলছি। আমাদের এই উপমহাদেশে ৪০১ ধারার ক্ষমতা যখন সরকার প্রয়োগ করে তখন সেটাকে আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যায় না বলে সিদ্ধান্ত আছে। প্রধানমন্ত্রী যেটা বলেছেন, সেটা হলো এ রকম, এখন যে আদেশ আছে সেটা যদি বাতিল করা হয়, বাতিল করে তাকে যদি আবার কারাগারে নেওয়া হয়, তাহলে তিনি আদালতে যেতে পারবেন। এই অবস্থায় তিনি আদালতে যেতে পারবেন, এমন কোনো সুযোগ নেই।

তাহলে আদেশ বাতিল করা হবে কিনা, জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, বাতিল করা অমানবিক হবে। বাতিল করব না। ২৪ সেপ্টেম্বর আদেশ জারি করলেন। তার কয়েকদিন না যেতে আবেদন করা হলো, এ নিয়ে সরকারের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা, জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমাদের সঙ্গে তাদের কোনো আলাপ আলোচনা হয়নি।

আনিসুল হক বলেন, আপনারা জানেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আইনি মতামতের জন্য বেগম খালেদা জিয়ার ভাইয়ের যে সর্বশেষ দরখাস্ত, সেখানে বলা হয়েছে তাকে স্থায়ীভাবে মুক্তি দেওয়ার জন্য এবং তাকে বিদেশ পাঠানোর অনুমতি দেওয়ার জন্য। সে বিষয়ে আইনি মতামতের জন্য আমাদের কাছে পাঠানো হয়েছিল। আমরা আইনি মতামত দিয়ে কিছুক্ষণ আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি।

কী মতামত দেওয়া হয়েছে, এ নিয়ে তিনি বলেন, প্রথম কথা হলো, প্রথম যে দরখাস্তটা ছিল, সেটি ২০২০ সালের মার্চ মাসে নিষ্পত্তি হয়। সেখানে বলা হয়েছিল বেগম খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ। তাকে কারাগার থেকে মুক্তি দিয়ে তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা যেন করা হয়। সেই দরখাস্তের ওপর আমরা একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। দুটি শর্তে তার দণ্ডাদেশ ছয় মাসের জন্য স্থগিত রেখে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। এটি ফৌজদারি কার্যবিধি ৪০১ ধারার উপধারা ১এর ক্ষমতাবলে। শর্ত দুটি হলো, তিনি বাসায় থেকে চিকিৎসা নেবেন, তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না। সেই শর্ত মেনে তিনি কারাগার থেকে মুক্ত হন এবং বাসায় তিনি যান। সেভাবেই দরখাস্ত নিষ্পত্তি করা হয়।

মন্ত্রী বলেন, নিষ্পত্তি করার পর দরখাস্তের মধ্যে এইটুকু জিনিস উন্মুক্ত ছিল যে, তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল ছয় মাসের জন্য এবং প্রত্যেক ছয় মাসে বাড়ানো যাবে কিনা, সে বিষয়ও ছিল। প্রত্যেক ছয় মাসে তা বাড়িয়ে এ পর্যন্ত আটবার বাড়ানো হয়েছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারার কোনো দরখাস্ত যদি একবার নিষ্পত্তি করা হয়, সেই নিষ্পত্তিকৃত দরখাস্ত পুনর্বিবেচনা করার কোনো অবকাশ আইনে থাকে না।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার ৫ বছরের সাজা হয়। সেদিন থেকে কারাবন্দি হন তিনি। পরে হাই কোর্টে এ সাজা বেড়ে ১০ বছর হয়। এরপর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার আরও ৭ বছরের সাজা হয়।

২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার খালেদা জিয়ার দণ্ড ছয় মাসের জন্য স্থগিত করে। এরপর প্রতি ছয় মাস পরপর তার মুক্তির মেয়াদ বাড়াচ্ছে সরকার। সবশেষ ১২ সেপ্টেম্বর সাজা স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়ানো হয়। খালেদা জিয়া বর্তমানে রাজধানীর এভায়কেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমাকে মাদক বিক্রির প্রস্তাব, রাজি না হওয়ায় শিশুকে অপহরণ
পরবর্তী নিবন্ধহৃদয়কে হত্যার পর শরীর থেকে মাংস আলাদা করে খুনিরা