মেজবান‘ ফারসি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ হলো অতিথি আপ্যায়নকারী গৃহস্থ বা নিমন্ত্রণকারী আর মেজবানি হলো ভোজের উৎসব বা আতিথেয়তা। আমাদের চট্টগ্রামে আমরা মেজবান বলতে বুঝি বড় ধরনের ভোজের আয়োজন। চট্টগ্রামের ভাষায় ‘মেজবান‘ কে ‘মেজ্জান‘ বলা হয়।
বিভিন্ন উপলক্ষে চট্টগ্রামে মেজবানের আয়োজন করা হয়ে থাকে। কুলখানি, চল্লিশা, ওরস শরীফ, মৃত্যু বার্ষিকী, মৃত্যু দিবস, জন্ম দিবস, ব্যক্তিগত সফলতা, নতুন ব্যবসা শুরু করা, নতুন বাড়িতে প্রবেশ, শিশুর জন্মের পর আকিকা, নবজাতকের নাম রাখা, গায়ে হলুদ, বিবাহ, শুভ ঘটনা এবং আরো নানা রকম সামাজিক কাজ উপলক্ষে মেজবানির আয়োজন করা হয়ে থাকে। বলা বাহুল্য, সুখ কিংবা দুঃখ উভয় কারণেই পাড়া–প্রতিবেশী, আত্মীয়–স্বজন ও বন্ধু–বান্ধবদের নিমন্ত্রণ করে খাওয়ানোর নামই হলো মেজবান। ঐতিহাসিকভাবে মেজবানি চট্টগ্রামের একটি অন্যতম ঐতিহ্যগত উৎসব যেখানে সাদা ভাত গরুর মাংস দিয়ে খাওয়ানোর জন্য অতিথিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। ঠিক কবে থেকে মেজবানের প্রচলন শুরু হয়েছে তা বলা মুশকিল। তবে ধারণা করা হয়, ১৫০০–১৬০০ সালেও মেজবানের প্রচলন ছিলো। বিজয় গুপ্তের ‘পদ্মপুরাণ‘ কাব্যগ্রন্থে শাহ বারিদ খানের রচনায় ‘মেজমান‘ এবং ‘মেজোয়ানি‘ শব্দ দুটির অস্তিত্ব পাওয়া যায়। যা থেকে কালের পরিক্রমায় পরবর্তীতে ‘মেজবান‘ শব্দটি এসেছে বলেই ধারণা করা হয়।
আমাদের চট্টগ্রামের মেজবানের উৎপত্তির ইতিহাস খুঁজতে গিয়ে জানা যায় ভূঁইয়া, চৌধুরী, খান, মিয়া বংশ এবং বিশেষ বনেদি পরিবারের লোকজন জাঁকজমকপূর্ণ মেজবানের আয়োজন করতেন। তখনকার সময়ে মেজবানের খাদ্য তালিকায় প্রধানত সাদা ভাতের সাথে ঝাল ঝাল করে রান্না করা গরু, মহিষের মাংস, নলা বা নেহারির ঝোল এবং মাশকলাইয়ের ডাল থাকতো। পরবর্তীতে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে খাদ্যের পদ তালিকা। যেখানে যোগ হয় ভুনা ডাল, হাঁড়–মাংসের সাথে লাউ দিয়ে বুটের ডাল, চর্বি ও হাড় মাংস দিয়ে রান্না করা বুট কিংবা মটরের ডাল, গরুর নলায় কম ঝালও মসলা এবং অল্প টক সহযোগে রান্না করা ‘নলা কাঁজি‘, ভুনাডাল (মাসকলাইয়ের ডাল ভেজে খোসা ছাড়িয়ে ঢেঁকিতে বা মেশিনে ডালের গুড়া বানিয়ে এ ডাল রান্না করা হয়)।
আগে মেজবানি মাংস রান্না করা হতো পিতল বা তামার তৈরি বড় বড় পাত্রে। লোহার তৈরি বালতি ভর্তি করে পরিবেশন করা হতো গরম গরম মাংস। নারিকেলের মালা এবং বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি করা হতো বড় বড় চামচ। মাটির তৈরি বাসনে খেতে দেয়া হতো মেহমানদের। মাটির শানকিতে পরিবেশন করা হতো বুটের ডাল এবং নলার ঝোল। এমনও রেওয়াজ ছিলো কারো বাড়িতে মেজবান খেতে যাওয়ার সময় মেহমানদের হাতে করে নিয়ে আসতে হতো নিজের জন্য প্রয়োজনীয় বাসন। যে বাসনগুলো ছিলো মাটির তৈরি কিংবা টিনের। পাটি, চাটাই কিংবা ধারা বিছিয়ে পরিবেশন করা হতো খাবার। সারিবদ্ধভাবে বসে মেহমানেরা তৃপ্তির সাথে আনন্দ নিয়ে মেজবান খেতেন। শামিয়ানার নিচে প্রচণ্ড গরমে মেজবান খেতে খেতে ঘর্মাক্ত হয়ে যেতেন লোকজন। তখন ছিল না কোনো বৈদ্যুতিক পাখা। তবুও অনেক আনন্দ নিয়ে চলতো মেজবানের আয়োজন। দূর দূরান্ত থেকে আত্মীয়–স্বজন এলাকার লোকজন মেজবান খেতে এসে অনেক আনন্দ পেতেন।
নামকরা সম্ভ্রান্ত চৌধুরী, ভূঁইয়া, মিয়া, খান বংশের লোকেরা দোয়া পাওয়ার আশায় এবং আত্মীয়–স্বজন, পাড়া–প্রতিবেশী ও গ্রামবাসীদের সাথে একত্রে খাবার খাওয়ার আনন্দে অংশীদার হওয়ার উদ্দেশ্যে মেজবানের আয়োজন করতেন।
মেজবানের দিন নির্ধারণ করে আত্মীয়–স্বজনদের দাওয়াত দিতেন এবং মেজবানের দুদিন আগে বাড়ির সামনের উঠোনে বিশিষ্ট ব্যক্তি, গ্রাম সর্দার এবং মেজবানের আয়োজক আর যারা সার্বিক দায়িত্বে থাকবেন তারা সকলে মিলে ‘পানসালাহ‘ করতেন। ‘পানসালাহ‘ হলো মূলত ছোট একটা মিটিং যেখানে সবকিছুর শলা–পরামর্শ করা হয় এবং সে মিটিং এর খাদ্য তালিকায় প্রধানত পান সুপারি থাকবেই। পান সুপারির সাথে পরিবেশন করা হতো ঘরে তৈরি নানা রকম পিঠাপুলি ও গরুর দুধের তৈরি মজার চা। এখনো গ্রামে সে রীতি বিদ্যমান আছে।
নামকরা বড় গৃহস্থ গাড়িগুলোতে মেজবান রান্নার জন্য মজুদ থাকতো বিভিন্ন সরঞ্জাম। মণি ডেক (যে ডেকচিতে একসাথে কমপক্ষে এক মণ, দুই মণ মাংস রান্না করা যায়), মাটির তৈরি বাসন, পেয়ালা, পানি খাওয়ার কত্তি (মাটির তৈরি বদনা), মাংস বেড়ে দেওয়ার জন্য মালা কাডি, (নারিকেলের মালা ছিদ্র করে তাতে শক্ত বাঁশের কঞ্চি ঢুকিয়ে তৈরি চামচ), তরকারির হাওতা (মাটির পাত্র), মাংস ও ভাত রান্নার সময় নাড়ানোর প্রয়োজনে তৈরি করা হতো কাডি (নতুন বাঁশ কেটে তা পরিষ্কার করে চেঁছে তৈরি একপ্রকার বড় চামচ জাতীয় দরকারি জিনিস)। মেহমানদের খাবার খেতে বসতে দেয়ার জন্য থাকতো বাঁশের তৈরি ধারা, শীতলপাটি ও চাটাই। ভাত রান্না হওয়ার পর গরম ডেকচি নামানোর জন্য শক্ত বাঁশ দিয়ে তৈরি করা হয় ‘ডেকবাড়ি‘ (তিন চার ফুট লম্বা দুটি বাঁশের এক প্রান্তে বাঁধা থাকে শক্ত রশি দ্বারা)। তারপর ভাত ঝরঝরে করার জন্য ফুটন্ত ভাতগুলো খুবই সাবধানতার সাথে বাঁশের তৈরি বড় বড় লাইয়ে ঢেলে ফ্যান গলানো হয়। ‘পানসালাহ‘র সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মেজবানের আগের দিন সন্ধ্যায় গরু জবাই করা হয়। সারারাত ধরে চলে রান্নার আয়োজন। খুবই উৎসব মুখর পরিবেশে মেজবানি খাবার রান্না করা হয়। রাতজেগে হইহুল্লোড়, হাসি তামাশা আর আনন্দে মেতে থাকেন ছোট থেকে বড়, পুরুষ আর মহিলা সকলেই। অনেক মানুষ রান্নার আয়োজনে সম্পৃক্ত থাকেন। কেউ মসলা বাটেন, কেউ পেঁয়াজ–কাঁচামরিচ–ধনেপাতা কাটেন, কেউ মাংস কাটেন, কেউ নলা তৈরি করেন, কেউ শামিয়ানা টাঙ্গান,এভাবে আগের রাতেই মেজবানের যাবতীয় প্রস্তুতি নেয়া হয়। চট্টগ্রামে মেজবানে বিশেষ ধরনের মসলা ব্যবহৃত হয়। ব্যবহৃত মরিচ হলুদ ইত্যাদি মসলা চট্টগ্রামের বিশেষ অঞ্চলের বিশেষ স্বাদ যুক্ত হয়ে থাকে। মেজবানের মাংসে ব্যবহৃত হয় গুরুত্বপূর্ণ মসলা মরিচ যার উপরে মাংসের স্বাদ অনেকাংশেই নির্ভর করে। সাধারণত চট্টগ্রামে হাটহাজারীর মাদার্শা, গরদুয়ারা ও ছিপাতলিতে উৎপাদিত মরিচ ব্যবহৃত হয়। এই মরিচ মাংসে অপরিহার্য মসলা হিসেবে ভূমিকা রাখে। সারারাত ধরে রান্নার আয়োজনে সারিবদ্ধ ভাবে মাটির চুলায় বড় বড় লাকড়ি দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে একসাথে ১০ –১৫ টা বড় বড় ডেকে রান্নার আয়োজন চলে। ডেকচিতে গরম তেল/ঘি দেয়ার পর বাটা মসলা দিয়ে নাড়তে নাড়তেই মাংস ঢালা হয়। সাথে সাথেই সব দিকে মাংসের সুস্বাদু ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়তে থাকে।
চট্টগ্রামের মেজবানের আরেকটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো মুসলমানদের জন্য গরুর মাংসের পাশাপাশি হিন্দু, বৌদ্ধ বা খ্রিস্টান মেহমানদের জন্য খাসির মাংস এবং মাছের ব্যবস্থা করা। এটা শত বছর ধরে প্রচলিত ধারা এবং সামপ্রদায়িক সমপ্রীতি রক্ষার অনন্য উদাহরণ।
আগে মাছের মেজবানের রীতি ছিলো বলেও জানা যায়। চট্টগ্রামের উত্তরাঅঞ্চলের শাসক শমসের গাজী তার মায়ের নামে দিঘি খনন শেষে চট্টগ্রামের নিজামপুর অঞ্চলের অনেক দিঘি ও পুকুর থেকে মাছ এনে মাটিয়ালদের জন্য বিশাল ভোজের আয়োজন করেন। জানা যায় ১০ হাজার মাটিয়াল তিন মাস ধরে ‘কৈয়ারা দিঘি‘ খননের কাজ শেষ করেন। এই দশ হাজার লোককে গাজী মাছ দিয়ে মেজবান খাওয়ান।
এছাড়াও চট্টগ্রামের অনেক জায়গা হিন্দু অধ্যুষিত হওয়ায় গরুর পরিবর্তে মাছের মেজবান দেওয়া হতো। পশ্চিমবঙ্গে বসবাসরত চট্টগ্রামের হিন্দু সমপ্রদায় ‘চট্টগ্রাম পরিষদের‘ ব্যানারে মাছ, সবজি ও শুটকির তরকারি রান্না করে প্রতিবছর আট–দশ হাজার লোককে মেজবানি খাওয়ান বলে জানা যায়।
ঐতিহ্যবাহী এই মেজবানকে ঘিরে চট্টগ্রামের কবি সাহিত্যিকরা অসংখ্য ছড়া, কবিতা,গল্প, প্রবন্ধ রচনা করেছেন। চট্টগ্রামের এই ঐতিহ্য গ্রাম ছাড়িয়ে শহরেও ছড়িয়ে পড়েছে। বৃহত্তর চট্টগ্রামের ধনাঢ্য ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন উপলক্ষ্যে মেজবানের আয়োজন করেন। হাজারো মেহমানের উপস্থিতিতে মেজবান বড় ধরনের মিলন মেলায় পরিণত হয়। চট্টগ্রাম শহরে বড় পরিসরে অনেক কমিউনিটি সেন্টার রয়েছে যেখানে একসাথে কয়েক হাজার লোক অংশগ্রহণ করতে পারেন। সামাজিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় মেজবান বড় ধরনের ভূমিকা রাখে। ইদানীং মেজবানে ভিন্নমাত্রা যুক্ত হয়েছে।
রাজনৈতিক ব্যক্তিরা জনপ্রিয়তা লাভের আশায়, নেতাকর্মী ও সমর্থকদের আনুগত্য পেতে বড় ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে অনেক বড় পরিসরে মেজবানের আয়োজন করেন। সাধারণ কর্মী, রাজনৈতিক নেতা এবং সমর্থকরা দলবেঁধে মেজবানে অংশগ্রহণ করেন। একই সাথে খাওয়া, গল্প, আড্ডা এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এর মাধ্যমে নিজেদের দলীয় স্বার্থে পারস্পরিক মত বিনিময় ও সুসম্পর্ক গড়ে তোলার সুযোগ সৃষ্টি হয়।
চট্টগ্রামের মেজবানের মাংস দিয়ে আতিথেয়তার সুনাম সমগ্র বাংলাদেশে ছড়িয়েছে। চট্টগ্রামের বাইরে মেজবানি সংস্কৃতি প্রবর্তন করেন ঢাকাস্থ ‘চট্টগ্রাম সমিতি‘। চট্টগ্রামবাসীদের সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করার জন্য ১৯১২ সালে কলকাতার বিভিন্ন প্রান্তে বসবাসকারী চট্টগ্রামবাসীরা সুখে–দুঃখে মিলেমিশে থাকার জন্য এই সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিবছরই বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে তারা একসাথে মিলিত হতেন এবং মেজবানি খাবার আয়োজন করতেন। এই সমিতি ঢাকায় স্থানান্তরিত হওয়ার পরও মেজবানের ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ন ছিলো। চট্টগ্রামের এমপি ও গভর্নরদের সংবর্ধনা প্রদান উপলক্ষ্যে ১৯৭৫ সালে ‘চট্টগ্রাম সমিতি‘ প্রথম মেজবান আয়োজন করে। যতদূর জানা যায় ব্যাপক আকারে ঢাকায় মেজবানীর প্রচলন শুরু হয় জাতীয় অধ্যাপক ডাক্তার নুরুল ইসলাম এর চট্টগ্রাম সমিতির সভাপতি থাকাকালীন ।
মেজবানি খাবারের প্রতি মানুষের অন্যরকম আকর্ষণ থাকায় চট্টগ্রামের প্রায় অনেকগুলো হোটেলে মেজবানি খাবারের আয়োজন করা হয়। প্যাকেজ রেটে কিংবা জনপ্রতি হিসেবে এ খাবার পরিবেশন করা হয়।
চট্টগ্রামের মেজবানের এই ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি শুধু যে অন্য জেলায় ছড়িয়েছে তা নয়। মেজবানের এই সংস্কৃতি দেশ ছাড়িয়ে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশের বাইরে পশ্চিমবঙ্গ, মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ এবং ইউরোপ আমেরিকার বিভিন্ন দেশে চট্টগ্রামবাসীরা পারস্পরিক সাক্ষাৎ ও সৌহার্দ্য প্রতিষ্ঠা এবং চট্টগ্রামের ঐতিহ্য রক্ষার জন্য মেজবানির আয়োজন করেন।
মেজবানে রান্না করে চট্টগ্রামের বেশ কয়েকজন বাবুর্চি বিখ্যাত হয়েছেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ দেশের বাইরে গিয়েও মেজবানি রান্না করে থাকেন। বাবুর্চিদের সঙ্গে আলাপ করলে জানা যায় মেজবানি রান্নার বিশেষ স্বাদ হওয়ার মূল রহস্য হলো তারা মেজবানি রান্নায় বিশেষ ধরনের মসলার ব্যবহার করে থাকেন, সাধারণত ২২ থেকে ২৫ রকমের মসলা এতে ব্যবহার করা হয়। যার কারণেই মেজবানির রান্না বিশেষ সুস্বাদু হয়ে থাকে।
চট্টগ্রামের মেজবানের সংস্কৃতির প্রসার যেমন ঘটেছে তেমনি এর রং–রূপ ও অনেকাংশে বদলেছে। আগে মেজবান উপলক্ষ্যে লোক মারফত পাড়া মহল্লায় কিংবা বাড়ি বাড়ি গিয়ে দাওয়াত দেয়া হতো কিন্তু বর্তমানে ছাপানো কার্ড কিংবা টেলিফোনে, মোবাইলে আর ই–মেইলে মেজবানের দাওয়াত দেয়া হয়। আগে পাটি বিছিয়ে, ধারায় বসে মেজবান খাওয়ার প্রচলন ছিলো। এখন কমিউনিটি সেন্টারে টেবিল চেয়ারে বসে মেজবানি খাবার খান মেহমানেরা। আগে গ্রামের পাড়া–প্রতিবেশী আত্মীয়স্বজনেরা খাবার পরিবেশন করতেন আর এখন কমিউনিটি সেন্টারে বয় বাবুর্চিরা খাবার পরিবেশন করেন। ফলে আগের মানুষের আন্তরিক পরিবেশনার ছোঁয়া এখন আর পাওয়া যায় না। দিন দিন ভেজাল খাবারের মাঝে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী মেজবানির গরুর মাংসের স্বাদও হারিয়ে যেতে বসেছে। বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই মেজবানের সেই আগের স্বাদ আর পাচ্ছে না। এভাবে চট্টগ্রামের মেজবানের ঐতিহ্যও একসময় হারিয়ে যাবে। তরুণ লেখক রশিদ এনাম বর্তমান প্রজন্মের কাছে মেজবানির ইতিহাস তুলে ধরার জন্য ‘চাঁটগাইয়া মেজ্জান’ নামক একটি তথ্যমূলক প্রবন্ধগ্রন্থ প্রকাশ করেছেন। আমরা চাই মেজবানের সঠিক ইতিহাস সম্পর্কে সকলেই জানুক। বাবুর্চিদের যথাযথ মূল্যায়ন হোক, মেজবানের স্বাদও অটুট থাকুক।
আমাদের বিশ্বাস আমাদের ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক এই মেজবান এখনো পর্যন্ত তার ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। এই মেজবানের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ুক সর্বত্র। এর ঐতিহ্য যুগ যুগ ধরে বহমান থাকুক– এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
লেখক : প্রাবন্ধিক