বিস্ময়কর গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন

রিয়াজুল হক | বুধবার , ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ at ৫:৩৬ পূর্বাহ্ণ

তোমাদেরকে যদি বলা হয় এমন একটি জায়গায় কি ভ্রমণে যেতে চাও যেখানে মানুষ ১২ হাজার বছর আগেই বসবাস করা শুরু করেছিলো। তোমরা নিশ্চয়ই খুউব শিহরণ অনুভব করবে? জানতে চাইবে কোন সেই জায়গা যেখানে মানুষ এতো আগে থেকে বসবাস করছে। তাদের তৈরি গুহা এবং গুহার দেওয়ালে আঁকা চিত্র দেখে বিষ্ময়ে অভিভূত হবে নিশ্চয়ই? এখনো তাদের উত্তরসূরীরা এখানে বসবাস করে। বর্তমানে সেখানে আমেরিকার ১১টি আদিবাসী জনগোষ্ঠী বসবাস করছে। প্রায় ৪৪৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই গিরিখাত। প্রস্থে কোথাও ০.২৫ কিলোমিটার আবার কোথাও ১৮ কিলোমিটার। আর গভীরতা কতো জানো? গড় গভীরতা প্রায় এক কিলোমিটারেরও বেশি। তবে সর্বোচ্চ ১,৮০০মিটার গভীর এই গিরিখাত। উপর থেকে তাকালে নিশ্চয়ই ভয় পাবে। তোমরা নিশ্চয়ই ধরতে পেরেছো গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের কথাই বলছিলাম এতোক্ষণ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যে অবস্থিত এই গিরিখাত সেই দেশের সবচেয়ে বড় গিরিখাত। এই গিরিখাতের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে খরস্রোতা কলোরাডো নদী। এই নদীর বেশিরভাগ অংশই গ্রান্ড ক্যানিয়ন ন্যাশনাল পার্কের ভিতরে পড়েছে।

কখন গঠিত হয়েছিল এই গিরিখাত জানো? যদিও বিতর্ক আছে, গবেষণা থেকে জানা যায় কলোরাডো নদী এই গিরিখাতের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হওয়া শুরু করেছিলো আজ থেকে প্রায় এক কোটি সত্তর লাখ বছর আগে। নদীটির বয়স শুনে অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে? হবেই না কেন? এতো প্রাচীন নদী আর ক’টিই বা আছে? কারো কারো কাছে এই গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন খুবই পবিত্র জায়গা। এই যেমন, পেবেলো আদিবাসী জনগোষ্ঠী গ্র্যান্ড ক্যানিয়নকে পবিত্র স্থান হিসেবে মনে করে।

কে প্রথম গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন ভ্রমণ করেছিলেন জানো? স্পেনীয় পরিব্রাজক গ্রাসিয়া লোপেজ ডি কার্ডিনাসই প্রথম ইউরোপীয় যিনি ১৫৪০ খ্রিস্টাব্দে সেখানে যান। তবে প্রথম গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন নামটি ব্যবহার করেন জন ওয়েসলি পাওয়েল। তিনি ১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দে কলোরাডো নদী পথে গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন ভ্রমণ করেন। ক্যানিয়নটি বিভিন্ন বর্ণের স্তরীভূত শিলা দিয়ে গঠিত। মনে হবে যেন লাল বালির স্তরের নিচে বিভিন্ন বর্ণের স্তরীভূত শিলা সাজিয়ে রাখা হয়েছে।

কলোরাডো নদী সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২,৭০০ মিটার উঁচুতে প্রবাহিত। এটি অত্যন্ত খাড়া একটি নদী। প্রতি ৮০০ মিটার চলার পথে এটি প্রায় ৩ মিটার নেমে গেছে। এতোটা খাড়া হওয়ার কারণে এখানে ভূমি ক্ষয় অত্যন্ত বেশি। ভূমি ক্ষয়ের কারণে ক্যানিয়নের আকার ও আকৃতি প্রতিনিয়তই পরিবর্তিত হচ্ছে। এভাবে ভূমি ক্ষয় হতে থাকলে ক্যানিয়নের গভীরতা আরো বেড়ে যাবে। গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন হয়ে উঠবে আরো বেশি গ্রান্ড।

বিখ্যাত ব্যাক্তিদের মধ্যে কারা এখানে ভ্রমণ করেছিলেন জানো? আমেরিকার প্রেসিডেন্ট থিওডোর রুজভেল্ট এখানে প্রায়ই শিকার এবং ভ্রমণের উদ্দেশ্যে আসতেন। তিনি এই গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন সংরক্ষণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। এখন অবশ্য সেখানে শিকার করা যায় না।

তোমাদের নিশ্চয়ই জানতে ইচ্ছে করছে এখানে কোন কোন ধরনের পশু, পাখি এবং অন্যান্য প্রাণী বসবাস করে। তোমরা জানলে অবাক হবে যে এখানে ২৫০ প্রজাতির পাখি, ৭০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ২৫ প্রজাতির গিরগিটি, ৫টি উভচর প্রজাতি, ১৭ প্রজাতির মাছসহ অন্যান্য প্রাণী বসবাস করে।

অনেকটা মরুময় এই ন্যাশনাল পার্কের তাপমাত্রা স্থান ভেদে ভিন্ন ভিন্ন হয়। তাপমাত্রা শূন্য থেকে ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত হতে পারে। স্বল্প বৃষ্টিপাতের কারণে জায়গাটি মরুর দেশের মতো মনে হবে। তবে শীতকালে এখানে তুষারপাতও হয়। প্রতি বছর পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় ৫০ লাখ মানুষ এই গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন ভ্রমণে আসে। তোমাদের সুযোগ হলে তোমরাও গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন ভ্রমণ করে এসো।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএকজন রাঁধুনি
পরবর্তী নিবন্ধআলী নগর দরবারে ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.) মাহফিল শুক্রবার