এড্রিয়েন আর্শট–রকফেলার ফাউন্ডেশন রিজিলিয়েনস সেন্টারের গবেষণা বলছে উত্তপ্ত পৃথিবীতে বছরে দুই লক্ষাধিক (২০৪,০০০) নারী মৃত্যুবরণ করবে শুধুমাত্র ভারত, নাইজেরিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রে। ক্রমশ তপ্ত হয়ে উঠা পৃথিবীতে নারীরা প্রধানতম লক্ষ্যবস্তু। পুরুষদের তুলনায় নারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে বেশি। ঘন ঘন তাপপ্রবাহে নারীদের চুকাতে হবে অধিক মূল্য, তাঁরা কর্মক্ষেত্রে থাকুক কিংবা গৃহে। গবেষণা বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের এই প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে নারীদের কর্মক্ষমতা, তাদের উপার্জন, এমনকি তাদের জীবন।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবগুলোর মুখোমুখি হওয়ার জন্য দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছে এড্রিয়েন আর্শট–রকফেলার ফাউন্ডেশন রিজিলিয়েনস সেন্টার বা আর্শট–রক। উষ্ণায়নের ফলে বিশ্বময় যে পরিবর্তন হচ্ছে তার মুখোমুখি হয়ে সহনশীলতা বাড়ানো, পরিবর্তিত অবস্থার সাথে নিজেকে খাপ খাওয়ানোর জন্য কাজ করছে এই ফাউন্ডেশন। ২০৩০ সালের মধ্যে এক বিলিয়ন মানুষের মাঝে এই সহনশীলতার দক্ষতা পৌঁছে দেয়া এই ফাউন্ডেশনের লক্ষ্য।
অত্যধিক তাপ কীভাবে লিঙ্গের বৈষম্যেও প্রভাব ফেলেছে তা সামপ্রতিক এক গবেষণায় উঠে এসেছে। এই গবেষণা বলছে অত্যধিক তাপ নারীর স্বাস্থ্য এবং উপার্জনকে ভীষণভাবে প্রভাবিত করছে। নতুন এই রিপোর্টে বর্তমান এবং ২০৫০ এর মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের পরিবর্তিত অবস্থায় গৃহের অভ্যন্তরে এবং বাইরে কর্মরত নারীদের স্বাস্থ্য এবং উপার্জন অনেক বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানানো হয়।
আর্শট–রক ডিরেক্টর ক্যাথি বোম্যান ম্যাকলিয়ড বলেছেন, বিশ্বজুড়ে নারীরা নীরবে কিন্তু প্রবলভাবে এই তীব্র তাপদাহ ঘাতকের দ্বারা আক্রান্ত। নারীর কাঁধে দ্বিগুণ ভার সৃষ্টি করেছে এই তাপ। তিনি বলেন, নারীরা শুধুমাত্র শারীরিকভাবেই তাপ সংবেদনশীল তা নয়, অতিরিক্ত তাপের ফলে আক্রান্ত যেকোন ব্যক্তির তুলনায় আনুপাতিকভাবে নারীদের কাছ থেকে সকলে বেশি যত্ন আশা করে, সে অফিসে হোক কিংবা ঘরে।
বিশ্বজুড়ে তাপমাত্রা সকল সময়ের রেকর্ড ভেঙে বেড়েই চলেছে। সর্বক্ষেত্রে এই বাড়ন্ত তাপমাত্রার দায় মেটাতে হবে নারীদের, বাড়তি সময় কাজ করে, সে গৃহস্থালির বিনা বেতনের কাজ হোক কিংবা বড় কোন কর্পোরেট কোম্পানির কাজ হোক।
নাইজেরিয়া, ভারত, যুক্তরাষ্ট্রের মত দেশগুলোতে ২০৫০ সাল নাগাদ গড় তাপদাহের দিন প্রায় দ্বিগুণে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে এবং এতে ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে এসব দেশের প্রান্তিক পর্যায়ের নারীরা, যারা অত্যন্ত গরীব। তাদের উৎপাদনশীলতা কমে যাবে দ্রুত হারে।
প্রতি বছর এই তিনটি দেশে অর্থাৎ নাইজেরিয়া, ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্রে ১২০ বিলিয়ন ডলার তাপজনিত ক্ষতি নির্ধারণ করা হয়েছে।
নাইজেরিয়ার মতো দেশগুলোতে অত্যধিক তাপ জনিত বিভিন্ন রোগের বিস্তারের ফলে নারীদের উপর দ্বিগুণ ভার হয়ে আসে অন্যদের যত্নের ভার, সাথে নিজেদের শারীরিক তাপ সংবেদনশীলতা।
লিঙ্গ বৈষম্যে নারী সর্বক্ষেত্রে নানাবিধ বাধার সম্মুখীন প্রতিনিয়ত, তাতে যুক্ত হয়েছে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের প্রভাবও এবং তা এবার আক্ষরিক অর্থেই দগ্ধকারী হয়ে উপস্থিত।
সূত্র: রয়টার