শামসুর রাহমান (১৯২৯–২০০৬)। আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। প্রেম ও মানবতার কবি। তিনি একাধারে কবি, সাংবাদিক অনুবাদক, গীতিকার। তিনি ১৯২৯ সালের ২৩ অক্টোবর পুরান ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। পৈত্রিক বাড়ি ঢাকা জেলার রায়পুর থানার পাড়াতলী গ্রামে। পিতা মোখলেসুর রহমান চৌধুরী এবং মাতা আমেনা খাতুন। ১৯৪৩ সালে তাঁর প্রথম কবিতা ‘উনিশ শ’উনপঞ্চাশ’ প্রকাশিত হয় নলিনীকিশোর গুহ সম্পাদিত সোনার বাংলা পত্রিকায় তখন তাঁর বয়স মাত্র আঠারো। ১৯৬০ সালে তাঁর প্রথম কাব্য, ‘প্রথম গান দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে’ প্রকাশিত হয়। শামসুর রাহমান ১৯৫৭ সালে সাংবাদিকতা জীবন শুরু করেন ইংরেজী দৈনিক মর্নিং নিউজ–এর সহ–সম্পাদক হিসেবে। কিছুদিন এ পত্রিকায় কাজ করার পর যোগ দেন রেডিও পাকিস্তানে। ১৯৬৪ সালে মর্নিং নিউজে উচ্চতর পদে যোগ দেন। ১৯৬৪ সালের শেষ দিকে প্রেস ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনায় ও প্রবীণ সাংবাদিক আবুল কালাম শামসুদ্দীনের সম্পাদনায় দৈনিক পাকিস্তান পত্রিকায় সহকারী সম্পাদক পদে তিনি যোগদান করেন। এবং সাপ্তাহিক বিচিত্রার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর উল্ল্যেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে ৮ টি ছড়ার বই, ৬৬ টি কবিতা, ৪ টি উপন্যাস, ৩ টি অনুবাদ, ৩ টি প্রবন্ধ। এছাড়াও তিনি অনেক গান রচনা করেছেন যা কণ্ঠ দিয়েছেন বিখ্যাত কণ্ঠশিল্পীরা। ‘প্রথম গান, দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে’, ‘রৌদ্র করোটিতে’, ‘বিধ্বস্ত নিলীমা’, ‘বাংলাদেশ স্বপ্ন দেখে‘’ ‘প্রেমের কবিতা’, ‘ইকারুসের আকাশ’, ‘বুক তার বাংলাদেশের হৃদয়’, ‘অন্ধকার থেকে আলোয়’ ‘উদ্ভট উটের পিঠে চলেছে’, ‘কবিতার সঙ্গে গেরস্থালি’, ‘আমার কোন তাড়া নেই’ তাঁর উল্ল্যেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থের কয়েকটি। বাংলা সাহিত্যে অবদানের জন্য শামসুর রাহমান আদমজী পুরস্কার (১৯৬৩), বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৬৯), জীবনানন্দ পুরস্কার (১৯৭৩), একুশে পদক (১৯৭৭), আবুল মনসুর আহমদ স্মৃতি পুরস্কার (১৯৮১), নাসিরউদ্দীন স্বর্ণ পদক (১৯৮১), ভাসানী পুরস্কার (১৯৮২), পদাবলী পুরস্কার (১৯৮৪), স্বাধীনতা পুরস্কারে (১৯৯২) ভূষিত হন। সাংবাদিকতায় অবদানের জন্য ১৯৮২ সালে তিনি জাপানের মিতসুবিশি পুরস্কার পান। ১৯৯৪ সালে কলকাতার আনন্দ বাজার পত্রিকা তাঁকে আনন্দ পুরস্কারে ভূষিত করে। ওই বছর তাঁকে সাম্মানিক ডিলিট উপাধীতে ভূষিত করে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯৯৬ সালে সাম্মানিক ডিলিট উপাধি দান করে কলকাতার রবীন্দ্রভারতী। তিনি ২০০৬ সালের ১৭ আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন।