পাঁচ দিনে ৫১ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত

নষ্ট হয়েছে তিন কিলোমিটারের বেশি ফুটপাত ও নালা সংস্কারে প্রয়োজন ৬০ কোটি টাকা

মোরশেদ তালুকদার | বুধবার , ৯ আগস্ট, ২০২৩ at ৫:১৯ পূর্বাহ্ণ

পাঁচদিনের অতি বৃষ্টি ও জোয়ারে নগরের ৫০ দশমিক ৭১ কিলোমিটার সড়ক নষ্ট হয়েছে। এর সঙ্গে ক্ষতি হয়েছে আরো দুই দশমিক ১৯ কিলোমিটার নর্দমা ও ১ দশমিক ৯৯ কিলোমিটার ফুটপাত। ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক, ফুটপাত ও নর্দমা সংস্কারে প্রয়োজন ৫৯ কোটি ৯৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। অবশ্য এখনো শহরের অনেক নিচু এলাকা থেকে বৃষ্টি ও জোয়ারের পানি নামেনি। পানি নেমে গেলে ক্ষতির সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে জানান সংস্থাটির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।

সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলোর বিটুমিন, ইট, বালি ওঠে গিয়ে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্ত। এসব গর্তের অধিকাংশে আবার জমে আছে পানি। দূর থেকে মনে হয় মিনি পুকুর। এসব গর্তে আটকে যাচ্ছে বিভিন্ন যানবাহনও। এসব গর্তে যান চলাচলে বাড়াচ্ছে ভোগান্তি। একইসঙ্গে দুর্ঘটনার শঙ্কা বাড়ছে।

আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, শেষ দিকে এসে চলতি বর্ষা মৌসুমের প্রথম ভারী বৃষ্টি হয়েছে গত ২ আগস্ট। ওইদন ছিল পূর্ণিমার জোয়ার। দু’য়ের সম্মিলনে এদিন জলাবদ্ধতার পুরনো রূপ ফিরে আসে নগরে। এরপর একদিন বিরতি দিয়ে ৪ আগস্ট থেকে ৭ আগস্ট পর্যন্ত টানা চারদিন অতি বৃষ্টি ও জোয়ারে আবারও প্লাবিত হয় নগর। চলতি মাসের প্রথম সাতদিনে নগরে ৬৬৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।

এদিকে চসিকের প্রকৌশল বিভাগ ৬ আগস্ট থেকে ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের তথ্য সংগ্রহ শুরু করে। গতকাল তা চূড়ান্ত করে। এতে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি সাড়ে চার কিলোমিটারের বেশি করে সড়কের ক্ষতি হয়েছে ৪১ নম্বর দক্ষিণ পতেঙ্গা ও ২৪ নং উত্তর আগ্রাবাদ ওয়ার্ডে। এছাড়া ৩৮ নং দক্ষিণ মধ্যম হালিশহর ওয়ার্ডে চার কিলোমিটারের বেশি, ৫নং মোহরা ওয়ার্ডে প্রায় সাড়ে ৩ কিলেমিটার, ২৭ নং দক্ষিণ আগ্রাবাদ ওয়ার্ডে প্রায় ৩ কিলোমিটার সড়কের ক্ষতি হয়েছে।

চসিকের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, শহরের অনেক জায়গার পানি এখনো নামেনি। অনেক সড়ক ডুবে আছে। পানি নেমে গেলে ক্ষতির পরিমাণ আরো ১০ শতাংশ বাড়তে পারে।

কবে থেকে ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক সংস্কার করা হবে জানতে চাইলে বলেন, বৃষ্টির মধ্যে প্যাঁচওয়ার্ক করার সুযোগ নেই। তাই সেখানে আপাতত ইটের খোয়া দেয়া হচ্ছে। বৃষ্টি থামলেই প্যাঁচওয়ার্কের মাধ্যমে দ্রুত সংস্কার করা হবে। সংস্কার কাজ শুরু করতে দেরি হলে গর্ত আরো বড় হয়ে ক্ষতি আরো বাড়ার শঙ্কা থেকে যত দ্রুত সম্ভব ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা মেরামত করা হবে বলেও জানান তিনি।

জানা গেছে, সিটি কর্পোরেশন নিজস্ব অ্যাসপল্ট প্ল্যান্ট থেকে তৈরি মিঙার (ইট, বালি, সিমেন্টে, বিটুমিনের মিশ্রণ) দিয়ে ছোট ছোট গর্ত ভরাট করে থাকে। চসিকের ভাষায় এটি প্যাঁচওয়ার্ক। চলতি ২০২৩২০২৪ অর্থ বছরের বাজেটে প্যাঁওয়ার্কের মালামাল ক্রয়ে ৭০ কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ রেখেছে চসিক। গত ২০২২২০২৩ অর্থ বছরে এ খাতে ২৪ কোটি ৫৭ লাখ টাকা খরচ করে সংস্থাটি। এছাড়া রাস্তা ও ফুটপাতের উন্নয়নেও চলতি অর্থ বছরের বাজেটে ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়।

জানা গেছে, ২০২১ সালে বর্ষার প্রথম ১৭ দিনে ৩৬ দশমিক ২৭ কিলোমিটার সড়কের ক্ষতি হয়। ২০২০ সালে পুরো বর্ষায় ক্ষতি হয় ১৭০ কিলোমিটার সড়ক। সড়ক সংস্কারের জন্য ২০২১ সালে ৯১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা এবং ২০২০ সালে ৭০ কোটি টাকার চাহিদা ছিল। ২০২০ সালে ৯০ কোটি টাকা এবং ২০২১ সালে ৫০৯ কোটি বরাদ্দ চেয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পত্রও দেয় চসিক। তবে কাঙ্ক্ষিত সে বরাদ্দ মিলেনি।

গতকাল নগরের বিভিন্ন সড়ক পরিদর্শনে দেখা গেছে, প্রধান সড়কের পাশাপাশি অলিগলির সড়কের ক্ষতি হয়েছে বেশি। বিভিন্ন সড়কে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। সলিং ও ইট উঠে গিয়ে সৃষ্ট এসব গর্তের কারণে ব্যাহত হচ্ছে যান চলাচল। ষোলশহর ২ নম্বর গেট, মুরাদপুর, মুহাম্মদপুর, বহদ্দার হাট, বায়েজিদ, শের শাহ, জামাল খান থেকে গণি বেকারি ও বারিক বিল্ডিংসহ বিভিন্ন এলাকায় গর্ত দেখা গেছে।

আয়ান নামে পতেঙ্গার বাসিন্দা আজাদীকে বলেন, বড় বড় গর্তগুলো মেরামত না করলে যে কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। নয়ন নামে এক বাস যাত্রী বলেন, ভাঙা সড়কে বাস হেলেদুলে চলে। এতে যাত্রাপথে ভোগান্তি হয়। মিজান নামে এক বাস চালক বলেন, পানি থাকলে কোথায় সড়ক ভাঙা তা বুঝা যায় না। এতে গর্তে পড়ে অনেক সময় যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা
পরবর্তী নিবন্ধওমর হাজ্জাজ চিটাগাং চেম্বারের নতুন সভাপতি