আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি নানামুখী ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করছে বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম–১০ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. মহিউদ্দিন বাচ্চু। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম–১০ আসনের উপনির্বাচনের পরই এ বছরের শেষের দিকে বা আগামী বছরের প্রথম দিকে বাংলাদেশে আরেকটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দক্ষিণপন্থি বিএনপি ও ধর্মীয় মৌলবাদী শক্তি বিদেশি অপশক্তির সহযোগিতায় নানামুখী ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করেছে।
৩০ জুলাই নির্বাচিত হলে নির্বাচনী এলাকাকে মাদকমুক্ত, সন্ত্রাসমুক্ত ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করবেন জানিয়ে তিনি বলেন, সর্বোপরি এলাকার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগ ও আগ্রহের সম্পূরক হিসেবে নিজেকে নিবেদিত রাখব।
গতকাল সকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে চট্টগ্রাম–১০ আসনের উপনির্বাচনকে সামনে রেখে ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে মহিউদ্দিন বাচ্চু এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, নির্বাচিত হলে শান্তিময় এলাকা গড়তে কাজ করব। ভোটের দিন কোনো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার শঙ্কা আছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমাদের দায়িত্বশীল কোনো নেতাকর্মী এ ধরনের
কোনো কাজ করবেন না। ভোটারদের নিঃসংকোচে ভোট দিতে আসতে বলব।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের সকল শুভ অর্জন, অগ্রগতি, কল্যাণ ও উন্নয়নের ধারাবাহিকতাকে ভুলুণ্ঠিত করে অবৈধ পন্থায় ক্ষমতা কুক্ষিগত করার অপপ্রয়াস পরিলক্ষিত হচ্ছে। তাই বলতে চাই, মহান মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ী শক্তিকে আবারও আঘাত করা হলে তাদেরকে প্রতিরোধ করতে হবে। এই সাংবিধানিক উপনির্বাচন মুক্তিযুদ্ধের শক্তিকে সংহত করার প্রচেষ্টা।
মহিউদ্দিন বাচ্চু বলেন, বিএনপি নির্বাচনে আসুক বা না আসুক, কিন্তু নির্বাচন ব্যবস্থাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে না। ইতোমধ্যে ওই অশুভ শক্তিটি আমার প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে হামলা করেছে। এটা একটি অশুভ ইঙ্গিত। শুধু তাই নয়, ইতোমধ্যে তারা দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা ও হত্যাসহ নানা ধরনের নির্যাতন ও আক্রমণ শুরু করেছে। এসব ঘটনা একটি অশনি সংকেত। গণতন্ত্র সুরক্ষায় সংবিধানসম্মত নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। নির্বাচন হচ্ছে একটি আদর্শিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কাঠামোর প্রধান সোপান। কিন্তু দুঃখের বিষয়, সংবিধানসম্মত নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য একটি অশুভ শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।
সাম্প্রতিক উপনির্বাচনগুলোতে ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, আগামী ৩০ জুলাই চট্টগ্রাম–১০ আসনের উপনির্বাচনে সম্মানজনক ভোটার উপস্থিতি হবে। আমাদের প্রার্থী এবার কঠোর পরিশ্রম করেছেন। নেতাকর্মীরা কাজ করছেন। আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে কাজ করছি। সুতরাং আমরা আশাবাদী, এবার ভোটার উপস্থিতি বাড়বে। বিগত কয়েকটি উপনির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ায় এবার বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি এবং দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে আলোচনা করেছি। এইবার, অর্থাৎ ৩০ জুলাইয়ের নির্বাচনে যাতে এর (ভোটার উপস্থিতি) পুনরাবৃত্তি না হয় সেই বিষয়ে আমরা সচেতন আছি। আমরা প্রতিটি কেন্দ্রে নিজের, পরিবারের ও প্রতিবেশীদের ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করতে বলেছি।
তিনি বলেন, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই আমাদের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মাঝে এক ধরনের গা ছাড়া ভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। এটা শুধু চট্টগ্রামে নয়, সারা দেশেই। তবে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন না হওয়ার কারণেও ভোটার উপস্থিতি কম হচ্ছে বলে মনে করেন তিনি। এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, আমরা খেলার মাঠে দেখি যদি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ খেলা হয় ক্রীড়ামোদী যারা তাদের মধ্যে মাঠে গিয়ে খেলা উপভোগ করার এক ধরনের আগ্রহ তৈরি হয়। আর খেলাটা যদি একতরফা বা অসম প্রতিযোগিতা হয় তাহলে দেখা যায় যে একই ক্রীড়ামোদী মানুষের মধ্যে মাঠে গিয়ে খেলা দেখার আগ্রহ থাকে না।
নাছির বলেন, আমাদের প্রার্থীর আরও চারজন প্রতিপক্ষ আছেন। তাদের প্রতি সম্মান রেখেই বলছি, এ চারজনের এ মুহূর্ত পর্যন্ত আমার চোখে তাদের তেমন কার্যক্রম দেখিনি। কোনো পোস্টার দেখিনি, লিফলেট দেখিনি, কোনো মাইকের আওয়াজ, ব্যানার বা কোনো তৎপরতা দেখছি না। বিজয়ী হওয়ার জন্য যেভাবে নির্বাচনী কার্যকলাপ পরিচালনা করা দরকার সে চেষ্টা বা তৎপরতা তাদের মধ্যে নেই। আমরা নির্বাচনী এলাকার প্রতিটি ওয়ার্ডে, অলিগলিতে গণসংযোগ করেছি। কোথাও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের প্রচার প্রচারণা পাইনি। তিনি সাংবাদিকদের পাল্টা প্রশ্ন করেন, আপনারা কি কোথাও কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্র্থকে সেভাবে দেখেছেন? অসম প্রতিযোগিতা হওয়ার কারণে এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দীন চৌধুরী, সহসভাপতি ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান নঈম উদ্দিন চৌধুরী, মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু, সহসভাপতি এড. সুনীল কুমার সরকার, এড. ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, খোরশেদ আলম সুজন, কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালাম, সাংগঠনিক সম্পাদক চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ফারুক, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক চন্দন ধর, ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক হাজী মো. হোসেন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন, আওয়ামী লীগ নেতা শাহজাহান চৌধুরী।












