কুমিল্লার গৃহবধূ মাহবুবা রহমান আঁখি ও তার নবজাতকের মৃত্যুর মামলায় ঢাকার সেন্ট্রাল হাসপাতালের চিকিৎসক মুনা সাহা ও শাহজাদী মুস্তার্শিদা সুলতানাকে জামিন দিয়েছে আদালত। ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম সুলতান সোহাগ উদ্দিন গতকাল মঙ্গলবার তাদের জামিনের আদেশ দেন বলে আদালতে সংশ্লিষ্ট থানার সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা মাহফুজুল ইসলাম জানান। এদিন দুই চিকিৎসকের জামিন চেয়ে আদালতে আবেদন করেন তাদের আইনজীবী। রাষ্ট্রপক্ষ জামিনের বিরোধিতা করলে শুনানি নিয়ে বিচারক জামিন মঞ্জুর করেন। এই খবরে গত দুদিন ধরে দুই চিকিৎসকের মুক্তিসহ বিভিন্ন দাবিতে চলা ধর্মঘট প্রত্যাহার করেছেন চিকিৎসকরা। খবর বিডিনিউজের। মঙ্গলবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসকদের বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দের এক বৈঠক শেষে এই ঘোষণা দেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সার্জনস এর সভাপতি, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক এ বি এম খুরশীদ আলম। তিনি বলেন, আমরা জানতে পেরেছি, আটক দুই চিকিৎসকের জামিন হয়েছে। জামিন হওয়ার প্রেক্ষিতে আমরা আমাদের কর্মসূচি আপাতত উইথড্র করে নিচ্ছি। আজ এখন থেকেই সবাই কাজে ফিরে যাবেন। চিকিৎসকরা চেম্বার করবেন, রোগী দেখবেন। সব ধরনের অস্ত্রোপচারসহ বাকি সব কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে চলবে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের কনফারেন্স রুমে এই বৈঠকে ফেডারেশন অব মেডিকেল স্পেসালিস্টস সোসাইটি অব বাংলাদেশসহ চিকিৎসকদের ৪৪টি সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। খুরশীদ আলম সাংবাদিকদের বলেন, বৈঠকে বর্তমান পরিস্থিতিসহ চিকিৎসকদের নিরাপত্তা, রোগীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষাসহ নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন তারা। আমাদের আরও কিছু দাবি দাওয়া ছিল, আইনি কিছু বিষয় ছিল। বিশেষ করে চিকিৎসা সুরক্ষা আইন নিয়ে আমাদের অনেকে কথা বলেছেন। ডাক্তারদের সুরক্ষার কথা বলেছেন। কর্মস্থলে নিরাপত্তা, রোগীদের সুরক্ষার কথা বলেছেন। আমরা রোগীদেরও সুরক্ষা চাই, স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে চাই। সেসব বিষয়ে আমাদের কার্যক্রম কী হবে সেটা পরে আমরা ঠিক করব।
কেন এই ধর্মঘট : স্বাভাবিক উপায়ে সন্তান প্রসবের আশায় সেন্ট্রাল হাসপাতালের অধ্যাপক সংযুক্তা সাহার অধীনে চিকিৎসাধীন ছিলেন কুমিল্লার তরুণী মাহবুবা রহমান আঁখি। প্রসবব্যথা উঠলে গত ৯ জুন মধ্যরাতে তাকে ওই হাসপাতালে নিয়ে যায় তার পরিবার। তার স্বামী ইয়াকুব আলীর ভাষ্য, সেদিন তাদের বলা হয়েছিল ডা. সংযুক্তা হাসপাতালে আছেন। কিন্তু আসলে তিনি ছিলেন দেশের বাইরে।
ওই চিকিৎসকের সহকারীরা প্রথমে স্বাভাবিকভাবে বাচ্চা প্রসবের চেষ্টা করেন। সে সময় জটিলতা তৈরি হলে অস্ত্রোপচার করা হয়। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে জন্ম নেওয়া শিশুটি ১০ জুন মারা যায়। পরে সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় সেন্ট্রাল হাসপাতাল থেকে নিয়ে আঁখিকে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। ১৮ জুন সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আঁখিও মারা যান।
ওই ঘটনায় সারা দেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। সেন্ট্রাল হাসপাতালে সব ধরনের অস্ত্রোপচার বন্ধ করে দিতে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। হয়েছিল ডা. সংযুক্তা সাহাকে ওই হাসপাতালে সেবাদান থেকে বিরত থাকতে বলা হয়।
ডা. সংযুক্তা সাহাসহ ছয়জনের নাম উল্লেখ করে ধানমণ্ডি থানায় মামলা করেন আঁখির স্বামী মুহাম্মদ ইয়াকুব আলী। মামলা হওয়ার পর সেন্ট্রাল হাসপাতালের দুই চিকিৎসক শাহজাদী মুস্তার্শিদা সুলতানা ও মুনা সাহাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।
দুই চিকিৎসকের জামিনের জন্য কয়েকবার আবেদন করা হলেও সে সময় জামিন দেয়নি আদালত। আরেক চিকিৎসক মাকসুদা ফরিদা আক্তার মিলি জামিনে ছিলেন। তাকেও আত্মসমর্পনের নির্দেশ দেয় হাই কোর্ট। দুই চিকিৎসকের গ্রেপ্তারের পর প্রতিবাদ শুরু করেন চিকিৎসকরা। তাদের বক্তব্য ছিল অভিযোগ প্রমাণ হওয়ার আগেই এই দুই চিকিৎসককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
দুই চিকিৎসককে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ এবং কর্মস্থলে নিরাপত্তার দাবিতে গাইনি চিকিৎসকরা দুই দিন ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগী দেখা ও অস্ত্রোপচার থেকে বিরত থাকার ঘোষণা দেন। ১৬ জুলাই সারাদেশে মানববন্ধন করেন তারা। ওইদিন রাতে গাইনি চিকিৎসকদের সঙ্গে একাত্মতা জানায় চিকিৎসকদের অন্যান্য সংগঠন। সেদিনই ঘোষণা আসে, সোম ও মঙ্গলবার সারাদেশে বেসরকারি চেম্বারে রোগী দেখা এবং সব ধরনের অস্ত্রোপচার বন্ধ রাখবেন চিকিৎসকরা।
এতে মঙ্গলবার সারাদেশের বেসরকারি হাসপাতালে জরুরি চিকিৎসা ছাড়া বাকি সবকিছু বন্ধ থাকে। পূর্বনির্ধারিত অস্ত্রোপচারও বন্ধ রাখা হয়। তাতে দুর্ভোগে পড়েন রোগীরা। মঙ্গলবার ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম সুলতান সোহাগ উদ্দিন দুই চিকিৎসককে জামিন দিলে দুপুরে ঢাকা মেডিকেলের বৈঠক থেকে কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা আসে।











