‘পলকা জীবনের অসহ ভার’ থেকে মুক্তি নিলেন মিলান কুন্ডেরা

| বৃহস্পতিবার , ১৩ জুলাই, ২০২৩ at ৬:০৯ পূর্বাহ্ণ

বিশ শতকের বিশ্ব সাহিত্যের অন্যতম প্রধান লেখক হয়েও তার জীবন কেটেছে নিভৃতে, জনারণ্য থেকে দূরে থেকেই তিনি লিখেছেন ‘দ্য আনবিয়ারেবল লাইটনেস অব বিইং’; চেক বংশোদ্ভূত সেই ফরাসি ঔপন্যাসিক মিলান কুন্ডেরা ৯৪ বছর বয়সে বিদায় জানালেন এ পৃথিবীকে।

কুন্ডেরার ব্যক্তিগত সংগ্রহ নিয়ে গড়ে তোলা মোরাভিয়ান লাইব্রেরির (এমজেডকে) মুখপাত্র আনা ম্রাজোভা গতকাল বুধবার এই লেখকের মৃত্যুসংবাদ দেন বলে জানায় রয়টার্স। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন কুন্ডেরা। গত মঙ্গলবার প্যারিসে তার মৃত্যু হয়। খবর বিডিনিউজের।

১৯২৯ সালে চেক রিপাবলিকের ব্রনোতে জন্মগ্রহণ করেন কুন্ডেরা। ১৯৬৮ সালে চেকোস্লোভাকিয়ায় সোভিয়েত ইউনিয়নের আক্রমণের সমালোচনা করায় ১৯৭৫ সালে তাকে নির্বাসন নিতে হয় ফ্রান্সে। ব্যক্তিজীবনে তিনি দীর্ঘদিন সমাজতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার কথা বলেছেন, ছিলেন সমাজতান্ত্রিক ধারার রাজনীতির সঙ্গে। নিজের লেখনীর দক্ষতা দিয়েই হয়ে উঠেছিলেন বিশ শতকের সবচেয়ে প্রভাবশালী ঔপন্যাসিকদের একজন। সমসাময়িক যে লেখকদের বই বিশ্বে সবচেয়ে বেশিবার অনূদিত হয়েছে, সেই লেখকদের একজন কুন্ডেরা। গত কয়েক দশকে বহুবার নোবেল পুরস্কারের জন্য তার নাম এসেছে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত সাহিত্যের নোবেল তার জোটেনি।

সিএনএন লিখেছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর সময় চেকস্লোভাকিয়ার লেখক, চলচ্চিত্র নির্মাতা ও বুদ্ধিজীবীদের একটি প্রভাবশালী প্রজন্মের অংশ ছিলেন কুন্ডেরা। সেই প্রজন্মের ধারায় ভেসে অনেকের মত তিনিও কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন। ষাটের দশকের শেষ দিকে ‘নব্য উদারনীতির’ উত্থাল সময়ে পার্টির একজন প্রভাবশালী সমালোচক হিসেবে পরিচিতি পান কুন্ডেরা। ইতিহাসে ওই সময়টা পরিচিত ‘প্রাহা বসন্ত’ নামে। ওই সময়েই তার প্রথম উপন্যাস ‘দ্য জোক’ প্রকাশিত হয়, যেখানে তিনি সেই সময়ের চেকস্লোভাকিয়ায় কমিউনিস্ট শাসনের চিত্র ফুটিয়ে তোলেন শ্লেষ আর কটাক্ষপূর্ণ ভাষায়। কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য থেকে ভিন্ন মতাবলম্বী হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠার পথে ওই বইটি ছিল তার সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ। ১৯৭০ এর দশকে তার নাগরিকত্বও বাতিল করে চেকস্লোভাকিয়া। নির্বাসিত কুন্ডেরার বাকি জীবন কেটেছে প্যারিসে, ১৯৮১ সালে তিনি ফ্রান্সের নাগরিকত্ব নেন। তার সবচেয়ে প্রশংসিত তিনটি বই ‘দ্য বুক অব লাফটার অ্যান্ড ফরগেটিং’, ‘দ্য আনবিয়ারেবল লাইটনেস অব বিইং’ ও ‘ইমর্টালিটি’ সে সময়ই প্রকাশিত হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত উপন্যাস ‘দ্য আনবিয়ারেবল লাইটনেস অব বিইং’ প্রকাশিত হয় ১৯৮৪ সালে। বইটি থেকে পরে চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হয়। কুন্ডেরা বিশ্বাস করতেন উপন্যাসের শক্তিতে। বলতেন, উপন্যাসকে স্বতন্ত্র একটি শিল্পমাধ্যমের স্বীকৃতি দেওয়া উচিত।

গদ্য লেখার এমন এক ভঙ্গি কুন্ডেরা রপ্ত করেন, যেখানে তার চরিত্রেরা ভেসে বেড়ায় নিরেট বাস্তবতার দৈনন্দিন জীবন আর ভাবনালোকের মাঝে। তীব্র শ্লেষ আর রসবোধের মিশেলে সেইসব অম্লমধুর গল্পের ভাঁজে ভাঁজে থাকে গভীর দার্শনিক বিতর্ক আর স্বৈরশাসনের পদতলে নিপীড়িত জীবনের ব্যাঙ্গাত্মক চিত্রায়ন। নিভৃতে জীবন কাটানো এই লেখক বিশ্বাস করতেন, লেখকের যা বলার, তা বলবে তার লেখা। সে কারণে সাক্ষাৎকার দিতেন কালেভদ্রে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপল্লী বিদ্যুতের তার থেকে বাঁশ সরাতে গিয়ে বিদ্যুৎকর্মীর মৃত্যু
পরবর্তী নিবন্ধগোডাউনে মিলল ২৫ লাখ টাকার অনুমোদনহীন ফেসওয়াশ, জরিমানা