একটা বড় আনন্দের সংবাদ হলো এক মাসের ব্যবধানে চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানি ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সাথে বেড়েছে কন্টেনার হ্যান্ডলিংও। অন্যদিকে আমদানির ক্ষেত্রেও ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এক মাসের ব্যবধানে আমদানি কমেছে ১১ দশমিক ২৩ শতাংশ। যা দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।
গত ৫ জুলাই দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে গত জুন মাসে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পণ্য রপ্তানি হয়েছে ৭৫ হাজার ৩৯১ টিইইউএস কন্টেনার। আগের মাসে (মে মাস) যার পরিমান ছিল ৫০ হাজার ২৭৭ টিইইউএস কন্টেনার। এক মাসের ব্যবধানে কন্টেনার হ্যান্ডলিং বেড়েছে ২৫ হাজার ১১৪ কন্টেনার বা ৪৯ দশমিক ৯১ শতাংশ। যা একটি বড় ধরনের প্রবৃদ্ধি বলে মন্তব্য করে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলেছেন, এক মাসের ব্যবধানে এত বেশি কন্টেনার পণ্য রপ্তানি বেশ বড় অর্জন। কন্টেনার বোঝাই করে বিশ্বের নানা দেশে পাঠানো এসব পণ্যের বিনিময়ে দেশে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা এসেছে বলেও উল্লেখ করেন তারা। অপরদিকে সদ্য সমাপ্ত জুন মাসে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি হয়েছে ১ লাখ ৩ হাজার ৭৫৫ টিইইউএস কন্টেনার পণ্য। আগের মাসে যার পরিমান ছিল ১ লাখ ১৬ হাজার ৮৮৩ টিইইউএস পণ্য। একমাসের ব্যবধানে পণ্য আমদানি কমেছে ১৩ হাজার ১২৮ টিইইউএস কন্টেনার বা ১১ দশমিক ২৩ শতাংশ পণ্য। এর ফলে মে মাসের তুলনায় জুন মাসে কম ডলারের পণ্য আমদানি করতে হয়েছে। রপ্তানি বাড়ার মাধ্যমে বেশি ডলার আয়ের বিপরীতে কম পণ্য আমদানির মাধ্যমে ডলার সাশ্রয় হওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এই ধারার মাধ্যমে বাণিজ্য ঘাটতি কমে আসার ক্ষেত্রেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলেও সূত্রগুলো মন্তব্য করেছে।’
বিশেষজ্ঞরা বলেন, ডলার–সংকট নিয়ে বছরখানেক ধরেই দেশের অর্থনীতি চাপের মধ্যে রয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের মূল দুই উৎস রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় ও পণ্য রপ্তানি নিয়েও মাঝে কিছুটা টানাপোড়েন তৈরি হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিদায়ী ২০২২–২৩ অর্থবছরে প্রবাসী আয় ও পণ্য রপ্তানি উভয়ই বেড়েছে বলে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়। বলা হয়েছে, প্রবাসী আয় আসায় ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পর পণ্য রপ্তানিও বেড়েছে ৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ।
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি পণ্য রপ্তানিতে নতুন মাইলফলকে পৌঁছেছে বাংলাদেশ। গত ২০২২–২৩ অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছে ৫ হাজার ৫৫৬ কোটি ডলারের পণ্য, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। যদিও সরকার রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল ৫ হাজার ৮০০ কোটি ডলার। সেই লক্ষ্যের চেয়ে রপ্তানি কম হয়েছে ৪ দশমিক ২১ শতাংশ বা ২৪৪ কোটি ডলার।
রপ্তানিকারকেরা বলছেন, ১৬ মাস আগে রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর দেশে দেশে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যায়। এতে নিত্যপ্রয়োজনীয় নয়, এমন পণ্যের বিক্রি কমে যায়। বাংলাদেশ যেসব পণ্য রপ্তানি করে, সেসবের ক্রয়াদেশও কমে। আবার দেশে গ্যাস–বিদ্যুতের সংকটে উৎপাদনও ব্যাহত হয়। তারপরও পণ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি নিয়ে অর্থবছর শেষ হওয়াটা ইতিবাচক। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) গত সোমবার রপ্তানি আয়ের এই পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যায়, শুধু গত জুনে ৫০৩ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। গত বছরের জুনের তুলনায় এই রপ্তানি ২ দশমিক ৫১ শতাংশ বেশি। জুন ছাড়াও গত নভেম্বর, ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে ৫০০ কোটি ডলারের বেশি পণ্য রপ্তানি হয়। ইপিবির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, মোট পণ্য রপ্তানিতে তৈরি পোশাকশিল্পের হিস্যা সাড়ে ৮৪ শতাংশ। দেশের প্রধান রপ্তানিমুখী খাত হিসেবে পরিচিত তৈরি পোশাক রপ্তানিতে ১০ দশমিক ২৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। অন্যদিকে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য, হিমায়িত খাদ্য, কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য এবং হোম টেঙটাইলে রপ্তানি কমেছে। তার মানে মূলত এক তৈরি পোশাকশিল্পের কল্যাণেই পণ্য রপ্তানিতে ইতিবাচক ধারায় রয়েছে বাংলাদেশ।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, রপ্তানি আয় বাড়ানোর জন্য বিকল্প ব্যবস্থা হতে পারে বাজার বহুমুখী করা এবং রপ্তানি পণ্যও বহুমুখী করে তোলা। ভিয়েতনামের মতো দেশ এই নীতি নিয়ে সাফল্য পেয়েছে। বাংলাদেশের সরকারও বিভিন্ন সময় রপ্তানিকারকদের পণ্যের বহুমুখীকরণ ও নতুন বাজার খুঁজে বের করার জন্য পরামর্শ দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, অর্থনীতি গতিশীল রাখতে রপ্তানি বৃদ্ধির বিকল্প নেই। সেজন্য ২০২৬ সালের মধ্যে বাংলাদেশে ১০ হাজার কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি করতে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছেন সরকার। সেজন্য যেসব চ্যালেঞ্জ আছে, সেগুলো মোকাবেলার জন্য কাজ শুরু করতে হবে।