পাঁচশ ৮২ কোটি টাকার সার আত্মসাতের ঘটনায় বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন–বিসিআইসি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিল না করায় উষ্মা প্রকাশ করেছে হাই কোর্ট। আদালত বলেছে, টাকা কি বাতাসে খেয়েছে? কারা এ কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত, কারা এ টাকা আত্মসাৎ করেছে, সুনির্দিষ্ট করে তাদের নাম দিন।
বিসিআইসির পক্ষে আদালতে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সময় আবেদন করা হলে গতকাল বৃহস্পতিবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের বেঞ্চ থেকে এমন মন্তব্য আসে। আদালত আরও বলেছে, দুর্নীতিবাজদের টলারেট করা হবে না। দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান কঠোর। কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। প্রয়োজনে কোর্ট থেকে সরাসরি জেলে ঢুকিয়ে দেব। খবর বিডিনিউজের।
আদালতে বিসিআইসির পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোল্লা কিসমত হাবিব। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী খুরশিদ আলম খান। পরে আদালত পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ৯ জুলাই সময় ঠিক করে দেয়।
গত ৫ জানুয়ারি ঢাকার একটি পত্রিকায় ‘৫৮২ কোটি টাকার সার আত্মসাৎ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই দিনই হাই কোর্ট এক আদেশে সার আত্মসাতের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বিসিআইসিকে নির্দেশ দিয়েছিল। একইসঙ্গে ওই ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতা কেন অবৈধ হবে না, জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়েছিল। পাশাপাশি দুদককে এ বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। পরে আরেক আদেশে বিসিআইসিকে সার আত্মসাতের বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়।
পত্রিকার ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারিভাবে আমদানি করা ৭২ হাজার মেট্রিক টন রাসায়নিক সার বন্দর থেকে খালাসের পর গুদামে পৌঁছে না দিয়ে আত্মসাৎ করেছে পরিবহনের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স পোটন ট্রেডার্স। এতে সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৫৮২ কোটি টাকা। সাত মাস পেরিয়ে গেলেও এ বিষয়ে কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেয়নি বিসিআইসি। মেসার্স পোটন ট্রেডার্স সাবেক সংসদ সদস্য কামরুল আশরাফ খানের (পোটন) মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান।
কামরুল আশরাফ খান সার ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএ) সভাপতি। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দাবি, তিনিই মূলত দেশে সারের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন। কামরুল আশরাফ খান একজন সাবেক সংসদ সদস্য। ২০১৪ সালে নরসিংদী–২ আসনে জাসদের প্রার্থী জায়েদুল কবিরকে হারিয়ে সংসদ সদস্য হন তিনি। জায়েদুল মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করেন। কামরুল আশরাফ খান আওয়ামী লীগ করেন। বর্তমানে এই আসনের সংসদ সদস্য তার ভাই আনোয়ারুল আশরাফ খান, যিনি আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত।