আর নয় বসে থাকা

আলেক্স আলীম | বুধবার , ৭ জুন, ২০২৩ at ৫:৩৬ পূর্বাহ্ণ

নরক কী জিনিস সেটা কিঞ্চিৎ অনুভব করা গেছে এবং প্রতিদিন যাচ্ছে এই গ্রীষ্মে। প্রকৃতি আর নেই আগের জায়গাতে। গরমের তীব্রতায় রেল লাইন বেঁকে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। তাপমাত্রা বাড়ছে সমানে পাল্লা দিয়ে। বাড়ছে বাতাসের আর্দ্রতা। অন্য দিকে কমছে বাতাসের গতি। যেদিন বাতাসের আর্দ্রতা ছিলো ৯৯% সেদিন বাতাসের ঘন্টায় গতি ছিলো ঘন্টায় তিন কিলোমিটার। মোবাইল টিপলেই এই সব পরিসংখ্যান মুহূর্তে চোখের সামনে হাজির হয়। এই পরিসংখ্যানের যাতনা আমরা প্রতিদিনই টের পাচ্ছি। ইতিমধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষিত হয়েছে। দেশের বড় একটি বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে ক্লাস নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

অন্যদিকে ঘন্টার পর ঘন্টা লোডশেডিং যেন তপ্ত কড়াইয়ের উপর তেল ঢেলে দেয়ার মতই। এখন আর চোখের জলে বালিশ ভিজে না।এখন বালিশ ভিজে ঘাড় আর মাথার ঘামে। আমরা কি একবারের জন্যেও ভাবছি কেন এমন হলো? আবহাওয়ার বৈশ্বিক সংকট তো আছেই। কিন্তু আমরা কী করছি? পাহাড়ের শহর চট্টগ্রামকে সমতল কারা বানিয়েছে? কর্ণফুলীতে হাজার হাজার টন বর্জ্য কারা ফেলে? আবর্জনা ফেলে চাক্তাই খাল কারা ভরাট করেছে? শতবর্ষী গাছগুলোতে কারা কুঠার মারে? কারা শেষ করে দিলো চট্টগ্রাম শহরের এত দীঘি, এত পুকুর এত জলাশয়? খুঁজলে উত্তর পাওয়া যাবে। তারা সমাজের বিত্তশালী সমাদৃত ব্যক্তিবর্গ। এইসব কর্মকান্ডই তাদের বিত্তের প্রধান উৎস। তারা সমাজ চালান, বাণী দেন আর লম্বা লম্বা কথা বলেন। মানুষ নিজেকে সৃষ্টির সেরা জীব দাবী করে আসছে। আসলেই কি সেরা? যদি সেরা হয় এই নারকীয় কর্মকাণ্ডগুলো কেন হবে? কেন সন্তানদের খেলার মাঠ বিপণন বাণিজ্য আর মেলার জন্য কেড়ে নেয়া হবে?

পিছাতে পিছাতে যেন নরকের শেষ প্রান্তে পৌঁছে গেছি। এখন সচেতন মহলের কাজে নামার সময় এসেছে। প্রথমত মানুষের মাইন্ডসেট পরিবর্তনে ভূমিকা রাখতে হবে। পরিবেশ যে একটি সিস্টেমের মধ্য দিয়ে চলে যেটা বুঝতে হবে। সেখানে ছন্দপতন হলে প্রকৃতির সবকিছু তালমাতাল হয়ে যায়। সেটি রূপ নেয় কখনো ঘূর্ণিঝড়ে আবার কখনো খরা বা তীব্র দাবদাহে। আর সেটাকে খুব সুন্দর করে আমরা বলি প্রকৃতি প্রতিশোধ নিচ্ছে। তা তো নিবেই। আপনি প্রকৃতিকে খুন করবেন আর প্রকৃতি চুপ করে বসে থাকবে? পারবেন শহরের সবগুলো জলাশয় আর পাহাড় ফিরিয়ে দিতে? যারা রাতের অন্ধকারে কৌশলে পাহাড় কেটে আর জলাশয় ভরাট করে বহুতল বানিয়েছেন তাদের কি একবারও বুক কাঁপে না? নাকি বুক বলে কিছু নেই! দিন পরতো কেউ কবরে যাবেন আর কেউ শ্মশানে যাবেন। আপনার শবদেহের দিকে তাকিয়ে বহুতল তখন বাঁকা হাসি দেবে।

আমার কাছে মনে হয় এই সমাজের বড়রা নষ্ট হয়ে গেছে। কোমলমতিরা যেন নষ্ট না হয় সেটা এখন ভাবার বিষয়। প্রকৃতি বাঁচলে মানুষ বাঁচবে এই কথাটি বিশ্বাস না করে উপায় নেই। বর্তমান প্রজন্মকে তাই কঠিন অ্যালজেবরা আর জিউমেট্রি না শিখিয়ে প্রকৃতিকে ভালোবাসতে শিখানো জরুরি যেন তারা বড় হয়ে ভূমিদস্যু আর বৃক্ষখাদক না হয়। প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিবেশ ক্লাব গঠনের মধ্য দিয়ে কাজটি শুরু হতে পারে। আর বসে থাকা কেন? আসুন দ্রুত শুরু করি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপেঁয়াজ এবং অসাধু ব্যবসায়ী
পরবর্তী নিবন্ধবড় যদি হতে চাও