আমাদের বর্তমান শিক্ষার প্রেক্ষাপট কী? শিক্ষার গুণগত মান কতটা বজায় থাকছে? প্রশ্নগুলোর যথেষ্ট যৌক্তিকতা আছে। কেননা শিক্ষার মান বজায় রাখতে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলো আমরা বা শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা কতটা আন্তরিকভাবে নিতে পেরেছি বা নিয়েছি। এখন প্রায়ই দেখা যাচ্ছে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা একাউন্টে জমা না হলে অভিভাবকরা সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সাথে যেভাবে যোগাযোগ রক্ষা করে, সেভাবে যদি তাদের ছেলেমেয়েদের বিদ্যালয়ে যাওয়া আসার বিষয়টা তদারকি করতো তাহলে প্রাথমিক শিক্ষা তথা শিক্ষার গুণগত মান আরো বৃদ্ধি পেত। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংবিধানের ১৭ নং অনুচ্ছেদের মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষাকে সর্বজনীন ও বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। শিক্ষকতা অন্যান্য পেশার রোল মডেল। একজন শিক্ষক সমাজ তথা জাতি গড়ার কারিগর। উল্লেখ্য শিক্ষা ব্যবস্থাপনা, শিক্ষা প্রশাসন, যোগ্য শিক্ষক ও সঠিক কারিকুলামের উপর নির্ভর করে মানসম্মত শিক্ষা অর্জন সম্ভব। শিক্ষকদের শ্রেণিকক্ষের প্রত্যুৎপন্নমতিত্বে ও বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ, তথ্য–উপাত্তসহ মানসম্মত পাঠদানের অভিনবত্ব সৃষ্টির মাধ্যমেই শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করা সম্ভব। শিক্ষার্থীদের শুধু পাঠ্যবই পড়ায় সীমাবদ্ধ না রেখে তাদেরকে মূল্যবোধ শিক্ষা, নৈতিক শিক্ষা, বিনয় ও ন্যায়ের পথে পরিচালিত করার দীক্ষা অবশ্যই আমাদের শিক্ষক সমাজকে দিতে হবে। মনে রাখতে হবে একজন শিক্ষক শুধু কোন প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পৃক্ত নয়, তিনি সমাজেরও শিক্ষক।
শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নির্ভরতা কমিয়ে, মেধা যাচাই করে প্রাথমিক স্তরেই তাদেরকে ভদ্রতা, নম্রতা, শিষ্টাচার, দেশপ্রেম, পরোপকারিতা ও ন্যায়–পরায়নতা শেখানো উচিত। আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো পরীক্ষার ক্ষেত্রে বারবার নতুন নতুন নিয়ম চালু হলে তাতে শিক্ষক– শিক্ষার্থীদের মাঝে অনেক সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। নতুন নতুন পরীক্ষা পদ্ধতি চালু করলে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মাঝে একটা ভয় কাজ করবে, তারা পড়াশোনায় অমনোযোগী হয়ে পড়বে এবং শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার বৃদ্ধি পাবে। শিক্ষকদের কোমলমতি মন নিয়ে ভালোবাসা দিয়ে শিক্ষার্থীদের যত্ন সহকারে পাঠদান করতে হবে, পাশাপাশি অভিভাবকদের শিক্ষকদের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন ও তাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ বৃদ্ধি করতে হবে। সবকিছু মিলিয়ে প্রশাসনিক দিক থেকে তৃণমূল পর্যন্ত শিক্ষা ব্যবস্থা ঢেলে সাজালে আমাদের প্রাথমিক শিক্ষার মান আরো উন্নত ও সমৃদ্ধ হবে। আজকের শিশুদের কেউবা আগামী দিনের প্রকৃত মানুষ হবে। আর প্রকৃত মানুষ হতে পারলেই তারা হতে পারবে শিক্ষক,চিকিৎসক, প্রকৌশলী, কেউবা হবে শিল্পী, সাহিত্যিক, বিজ্ঞানী, দার্শনিক, রাজনীতিবিদ, লেখক, কবি ও সাংবাদিক। এ গুলোর মূলেই রয়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক।
তাই শিক্ষক প্রাথমিক শিক্ষার জন্য অনেক কষ্ট করে শ্রেণি কক্ষে পাঠদান করতে হয়। বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষই হল শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ জীবন প্রস্তুতির ক্ষেত্র। উত্তম শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য দরকার অনুকূল পরিবেশ, আর এ অনুকূল পরিবেশ গড়ে তোলার দায়িত্ব শিক্ষা ব্যবস্থা তথা সংশ্লিষ্ট সকলের। শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে আন্ত:সম্পর্ক গড়ে দিতে পারে গুণগত প্রাথমিক শিক্ষার মজবুত ভিত। প্রাথমিক শিক্ষাকে গুনগত মানের দিক থেকে উন্নত করতে শিক্ষক সমাজ তথা সংশ্লিষ্ট সকলেরই এগিয়ে আসা উচিত।