সেই প্রকল্প পরিচালক চার মাস ধরে অনুপস্থিত

চসিকের বৃহৎ প্রকল্পের কাজে স্থবিরতা চায় নতুন পরিচালক, চিঠি দেবে মন্ত্রণালয়ে

মোরশেদ তালুকদার | রবিবার , ২৮ মে, ২০২৩ at ৪:২০ পূর্বাহ্ণ

চার মাস ধরে কর্মস্থলে অনুপস্থিত আছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) বিমানবন্দর সড়কসহ বিভিন্ন রাস্তা ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক। এতে ‘স্থবির’ হয়ে আছে সংস্থাটির এ যাবৎকালের সবচেয়ে বড় প্রকল্পটির কাজ। এ অবস্থায় বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দ্বারস্থ হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে চসিক। কয়েকদিনের মধ্যে নতুন প্রকল্প পরিচালক চেয়ে দাপ্তরিক পত্র পাঠানোর কথা রয়েছে।

ওই প্রকল্প পরিচালক হচ্ছেন মো. গোলাম ইয়াজদানী। গত ২৯ জানুয়ারি টাইগারপাস নগর ভবনের অস্থায়ী কার্যালয়ে ঠিকাদারের হাতে মারধরের শিকার হন তিনি। ঘটনার পরদিন থেকে গতকাল পর্যন্ত চসিকে নিজ দপ্তরে আসেননি তিনি। ৩৭টি প্যাকেজে ২২০ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজের দরপত্রে একটি প্রতিষ্ঠানের একাধিক কাজ পাওয়াকে ঘিরে মারধরের শিকার হন তিনি। চসিকে না এলেও ঢাকায় অবস্থান করে ওই প্যাকেজগুলোর ইজিপি কার্যক্রম শেষ করেন। এরপর প্রকল্পটির আর কোনো দরপত্র আহ্বান করা হয়নি।

চসিকের একাধিক প্রকৌশলী এবং দায়িত্বশীল কর্মকর্তা আজাদীকে জানিয়েছেন, একটি প্রকল্পের সামগ্রিক কার্যক্রমের অবিভাবক হচ্ছেন প্রকল্প পরিচালক। যে কোনো প্রকল্পের পরিচালককে মাঠ পর্যায়ে কাজের গুণগত মান ঠিক হচ্ছে কিনা তা খেয়াল রাখতে হয়। এছাড়া প্রকল্পে নিয়োজিত ঠিকাদারের বিল তৈরির ক্ষেত্রেও প্রকল্প পরিচালকের ভূমিকা অন্যতম। প্রকল্পের অন্যান্য বিষয়েও তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিতে হয় প্রকল্প পরিচালককে। ওই জায়গা থেকে চসিকের বৃহৎ প্রকল্পের পরিচালক দীর্ঘদিন অনুপস্থিত থাকায় প্রকল্পটির অগ্রগতি প্রত্যাশিতভাবে হচ্ছে না।

এর আগে চসিকের একটি নথিতে উল্লেখ করা হয়, সিটি কর্পোরেশনের এ যাবৎকালের সবচেয়ে বৃহৎ প্রকল্পটির সুষ্ঠু বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্প পরিচালকের পদটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রকল্পটি যথাসময়ে বাস্তবায়নের সাথে আগামী জাতীয় নির্বাচন ও সরকারের ভাবমূর্তির বিষয় জড়িত রয়েছে। কারণ এ প্রকল্পের মাধ্যমে চট্টগ্রামের নান্দনিক সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে। এ ধরনের প্রকল্পে প্রকল্প পরিচালকের কর্মস্থলে সার্বক্ষণিক উপস্থিতি একান্ত প্রয়োজন।

সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রকল্প পরিচালক চসিকে আসছেন না। অথচ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্প পরিচালক না থাকায় এই বিশাল প্রকল্পের বিল প্রদান ও অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালনা ব্যাহত হচ্ছে। এই প্রকল্পের এখনো মাত্র পাঁচশ কোটি টাকার টেন্ডার হয়েছে। অথচ এতদিনে এক হাজার কোটি টাকা ছাড়ানোর কথা ছিল। আমি প্রকল্প পরিচালক নিয়োগের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিব।

সংশ্লিষ্টরা জানান, মো. গোলাম ইয়াজদানী স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের একজন নির্বাহী প্রকৌশলী। সেখানেই তিনি কর্মরত। ঠিকাদারদের হাতে মারধরের শিকার হওয়ার আগ পর্যন্ত সপ্তাহে মাত্র দুদিন অফিস করতেন তিনি। তখনো প্রকল্পটির কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ করা নিয়ে সংশয় ছিল। এতে যে উদ্দেশ্যে প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে তা ‘ব্যাহত’ হওয়ারও সম্ভাবনা তৈরি হওয়ার কথা জানিয়ে গত বছর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে দাপ্তরিকভাবে অবহিত করে চসিক। তবে মন্ত্রণালয় কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা হচ্ছে, উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালকরা অন্য কোনো দায়িত্ব পালন করবেন না। শুধু প্রকল্প পরিচালকের কাজই করবেন। সর্বশেষ ২১ মার্চ অনুষ্ঠিত একনেক সভায়ও প্রধানমন্ত্রী উন্নয়ন প্রকল্প সময়মতো এবং মানসম্পন্ন বাস্তবায়নের স্বার্থে নির্দেশনা দেন।

জানা গেছে, চসিকের ২৮তম সাধারণ সভায় প্রকল্প পরিচালকের যোগ না দেয়া নিয়ে কয়েকজন কাউন্সিলর ক্ষোভ জানান। পরে সভায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এ চিঠি দেয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, সাধারণ সভার রেজ্যুলেশন হওয়ার পর আমরা মন্ত্রণালয়ে চিঠি লিখব। এতদিন মাননীয় মন্ত্রী মহোদয় এবং মন্ত্রণালয়ে ঘটনাগুলো জানিয়েছিলাম। কিন্তু প্রকল্প পরিচালক আসবেন কি আসবেন না বা স্বশরীরে আসেননি এ ধরনের কিছু মন্ত্রণালয়ে অফিসিয়ালি জানাইনি। এখন আমরা অফিসিয়ালি জানাব।

প্রকল্প পরিচালক স্বশরীরে উপস্থিত না হওয়ায় কী সমস্যা হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রকল্প পরিচালক হিসেবে উনার তো অনেক দায়িত্ব। প্রকল্পের কাজ মাঠ পর্যায়ে দেখাশুনার বিষয় থাকে।

চসিক সূত্রে জানা গেছে, ইয়াজদানীকে মারধরের ঘটনায় মামলা করে চসিক। গঠন করে তদন্ত কমিটি। বাড়ানো হয় নগর ভবনের নিরাপত্তা। এছাড়া ১১ ঠিকাদারের ১২ প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করে, যা মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়।

জানা গেছে, শুরুতে চসিকের প্রধান প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলামকে প্রকল্পটির পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। তার স্বাক্ষরে ২০২২ সালের ১২ মে দরপত্রও আহ্বান করা হয়। পরে একই বছরের ১৪ জুলাই চসিকের নির্বাহী প্রকৌশলী (পুর) আবু সাদাত মোহাম্মদ তৈয়্যবকে প্রকল্প পরিচালক করা হয়। তিনিও একই বছরের ৭ আগস্ট দরপত্র আহ্বান করেন। এর কয়েকদিন পর ১১ আগস্ট স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করে তাকে প্রকল্প পরিচালক থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। এরপর ১৪ আগস্ট মো. গোলাম ইয়াজদানীকে প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ দেয়া হয়।

চসিক সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পটি ২০২২ সালের ৪ জানুয়ারি দুই হাজার ৪৯০ কোটি ৯৬ লাখ ৬৯ হাজার টাকায় অনুমোদন দিয়েছে একনেক। প্রকল্পটিতে সম্পূর্ণ অর্থায়ন করবে সরকার। জিও অনুযায়ী প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয় ২০২২ সালের ১ মার্চ থেকে ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রকল্পটির আওতায় বিমানবন্দর সড়ককে চার লেনে উন্নীত করার পাশাপাশি ৬০০ মিটার ওভারপাস নির্মাণ করা হবে। এছাড়া ৭৬৯ কিলোমিটার রাস্তার উন্নয়ন, ১৪টি ব্রিজ, ৩৮টি ফুট ওভারব্রিজ, ২২টি কালভার্ট, ১০টি গোলচত্বরের উন্নয়ন করা হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধতৃণমূলকে শক্তিশালী করতে পাড়া-মহল্লায় সাংগঠনিক তৎপরতা শুরুর নির্দেশ রওশনের
পরবর্তী নিবন্ধবদ্ধ ফ্ল্যাটে জমে ছিল চুলার গ্যাস, বিস্ফোরণে উড়ে গেল দরজা