চট্টগ্রাম–কক্সবাজার রেলপথে আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রেন চলাচলের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে রেল কর্তৃপক্ষ এই রুট নিয়ে নতুন নতুন পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছে। আগামী সেপ্টেম্বরে চট্টগ্রাম–কক্সবাজার রেলপথের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পরপরই নতুন এই রুটে আধুনিক উচ্চ গতির ট্রেন চলাচল করবে। চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০৩ কিলোমিটার রেলপথ স্থাপন একেবারেই শেষ পর্যায়ে। পাহাড় ঘেরা এ পথে অত্যাধুনিক ট্যুরিস্ট ট্রেন চলবে। সাধারণ ট্রেনের প্রায় দ্বিগুণ জানালা থাকবে প্রতিটি কোচে। উন্নত দেশের মতো টুরিস্ট ট্রেন চালাতে ইতোমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
রেলওয়ের পরিবহন বিভাগ থেকে জানা গেছে, শুরুতেই ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ট্রেন চালানো সম্ভব হবে। ৪ থেকে ৫ জোড়া ট্রেন প্রথম পর্যায়ে চালানো হবে। চট্টগ্রাম থেকে সোয়া দু’ঘণ্টায় ট্রেন পৌঁছাবে কক্সবাজারে।
দোহাজারী–কক্সবাজার রেল লাইনের অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী আবুল কালাম চৌধুরী বলেন, আমরা আশা করছি সব কিছু ঠিক থাকলে আগস্টের মধ্যে অবশিষ্ট ২৫ কিলোমিটারের কাজ শেষ করতে পারবো। এই ২৫ কিলোমিটারের মাটি ভরাটের কাজ শেষ হয়েছে। এখন শুধু স্লিপার আর রেল বিট বসবে। আগস্ট–সেপ্টেম্বর এই দুই মাসে ফিনিশিং ওয়ার্কসহ অবশিষ্ট কাজ শেষ করে আমরা ট্রায়ালরান উদ্বোধন করতে পারবো বলে আশা করছি। প্রথমত আমরা এক জোড়া ট্রেন দিয়ে হলেও চালু করে দেবো।
সব মিলিয়ে রেললাইন পুরোপুরি চালু হলে পর্যটনশিল্পে নতুন দিগন্তের সূচনা হবে। ফলে সেপ্টেম্বরে নতুন যুগের সূচনা করতে যাচ্ছে পর্যটন নগরী কক্সবাজার। এদিকে আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে চট্টগ্রাম–কক্সবাজার রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হবে বলে জানিয়েছেন রেলপথ মন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। গত ১৬ মে দুপুরে দোহাজারী–কক্সবাজার রেলপথ প্রকল্পের অগ্রগতি পরিদর্শনে গিয়ে রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন এ কথা বলেন।
ভাড়া প্রসঙ্গে রেলওয়ের বাণিজ্যিক বিভাগ থেকে জানা গেছে, ঢাকা–চট্টগ্রাম ভাড়া অপরিবর্তিত থাকবে। যুক্ত হবে চট্টগ্রাম–কক্সবাজারের নতুন ভাড়া। ১০০ থেকে ৫০০ টাকা ভাড়া হতে পারে। রেলের পরিকল্পনা অনুযায়ী এ পথে একটি বিশেষ ট্রেনও চালানো হবে। বিশেষ ট্রেনে সাধারণ ট্রেনের চেয়ে সুবিধা বেশি থাকবে। ভাড়া হতে পারে দ্বিগুণের চেয়েও বেশি। তবে যাত্রীদের চাহিদা অনুযায়ী চূড়ান্ত ভাড়া নির্ধারণ করা হবে। এছাড়া এ পথে মাছ, শুঁটকি, লবণ ও অন্যান্য পণ্য কক্সবাজার থেকে দেশের অন্যান্য স্থানে পরিবহনের জন্য থাকবে বিশেষ রেফ্রিজারেটেড ওয়াগন সার্ভিস। এছাড়াও আগামী দেড় বছরের মধ্যে ঢাকা–চট্টগ্রাম পুরো রেলপথ ডুয়েলগেজ–ব্রডগেজে উন্নীত করা হচ্ছে। এতে পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে সরাসরি পূর্বাঞ্চলের ট্রেনও চলাচল করবে। সাধারণ যাত্রীসহ মালামাল পরিবহণ হবে উভয় অঞ্চলে।
চট্টগ্রাম–কক্সবাজার রুটে ট্রেন পরিচালনার জন্য জনবল নিয়োগের যাবতীয় কার্যক্রমও সম্পন্ন হচ্ছে। জনবল কাঠামো অনুমোদনের নথি ২০২১ সালের জুনে রেলপথ অধিদপ্তরের মাধ্যমে রেলপথ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। ২০২২ সালের জুনে তা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। জনপ্রশাসন থেকে অনুমোদন পেলেই দ্রুততার সঙ্গে নিয়োগ কার্যক্রম শুরু হবে। এই রেললাইনের মাধ্যমে দেশের ৪৫তম জেলা হিসেবে রেল নেটওয়ার্কে যুক্ত হচ্ছে কক্সবাজার।