প্রচণ্ড দাবদাহে কোটি কোটি টাকার তেল লোপাট হচ্ছে। অসহনীয় গরম শাপে বর হয়ে উঠছে তেল চোর চক্রের জন্য। তীব্র গরমে তেলের পরিমাপ বেড়ে গেলেও এই টাকা সরকারি কোষাগারে জমা হচ্ছে না। নানা হাত ঘুরে নানা পথে পকেটস্থ হচ্ছে সংঘবদ্ধ চক্রের। সামপ্রতিক প্রচন্ড গরমে এই তেল লোপাট কার্যক্রম মহোৎসবে পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, দেশের জ্বালানি তেল সেক্টরের প্রায় পুরোটাই আমদানি নির্ভর। গ্যাস ক্ষেত্রগুলোতে পাওয়া কিছু কনডেনসেট বাদ দিলে বাকি তেলের পুরোটাই আনতে হয় বিদেশ থেকে। বাংলাদেশ মূলতঃ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে জ্বালানি তেল আমদানি করে। বর্তমানে বছরে ৬০ লাখ টনের কাছাকাছি তেল আমদানি করা হয়। এর মধ্যে বারো থেকে তেরো লাখ টন ক্রুড অয়েল আমদানি করা হয়। যা দেশের একমাত্র জ্বালানি তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারিতে পরিশোধন করে বাজারজাত করা হয়। বাকি তেল পরিশোধিত অবস্থায় আমদানি করা হয়। তেল আমদানি থেকে বাজারজাত পর্যন্ত পুরোটা নিয়ন্ত্রণ করে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি)। বিপিসির আমদানিকৃত তেল পদ্মা অয়েল কোম্পানি, যমুনা অয়েল কোম্পানি এবং মেঘনা পেট্রোলিয়াম বাজারজাত করে। আমদানিকৃত পরিশোধিত তেল এবং ইস্টার্ন রিফাইনারি থেকে পরিশোধন করা তেল উক্ত তিনটি তেল বিপণন কোম্পানি নিজেদের প্রধান ডিপোতে সংরক্ষণ করে। সেখান থেকে পরবর্তীতে ভাউজারের মাধ্যমে সড়ক পথে এবং ট্যাংকারে বোঝাই করে নদী পথে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রেরণ করা হয়। অপরদিকে বিদেশ থেকে আমদানিকৃত জ্বালানি তেল নিয়ে বিশালাকৃতির মাদার ভ্যাসেলগুলো চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে কতুবদিয়ার অদূরে অবস্থান করে। এসব মাদার ভ্যাসেল থেকে বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের মালিকানাধীন জাহাজের মাধ্যমে তেল লাইটারিং করে ডিপোতে নিয়ে আসা হয়।
জ্বালানি তেল পরিবহনের প্রথম ধাপেই তেল চুরি শুরু হয় বলে মন্তব্য করে বলা হয়েছে যে, মাদার ভ্যাসেল থেকে তেল খালাস করে লাইটারেজ জাহাজ গুপ্তাখালস্থ প্রধান ডিপোর জেটিতে এসে নোঙর করে। এখান থেকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে তিনটি বিপণন কোম্পানির অয়েল ট্যাংকে তেল সরবরাহ দেয়া হয়। সূত্র বলেছে, জ্বালানি তেল বেশি তাপমাত্রায় বেশ তরল থাকে। ঘনত্ব কমে যায়। এতে পরিমাপে তেল বেড়ে যায়। আবার তাপমাত্রা কমে গেলে পরিমাপে কমে যায়। তাপমাত্রাজনিত ক্ষতি এবং পরিবহনজনিত ক্ষতিসহ নানা ভাবে পেট্রোলিয়াম সেক্টরের তেল চুরিকে জায়েজ করা হয়। কিন্তু তাপমাত্রাজনিত বৃদ্ধির কোনও লাভ কখনো উল্লেখ করা হয় না। তাপমাত্রার হেরফেরের সুযোগে কোটি কোটি টাকার তেল লোপাট করে দেয়া হয়। সাম্প্রতিক তীব্র গরমের সময় পরিমাপে জ্বালানি তেল বেড়ে যায়। কিন্তু এই বাড়তি হিসেব কোথাও নেই বলে ক্ষোভ প্রকাশ করে সূত্র বলেছে যে, তাপমাত্রাজনিত ক্ষতি কিংবা পরিবহন করতে গিয়ে নষ্ট হয়েছে বলে রিপোর্ট তৈরি করা হলেও মূলত এসব তেলের একটি বড় অংশ নানা কৌশলে চুরি করা হয়।
তবে বিপিসির একাধিক কর্মকর্তার সাথে সাম্প্রতিক গরমে তেলের পরিমাপ বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে আলাপ করা হলে তারা বলেন, এগুলো খুব বেশি রিমার্কেবল নয়। কিছু তেল পরিমাপে বাড়ে, শীতের সময় তা আবার কমে যায়। ট্যাংক থেকে যে পরিমাণ তেল বাজারে সরবরাহ দেয়া হয় সেই পরিমাণ তেলের মূল্যই বিপিসি পেয়ে থাকে। তেল বাড়লো কি কমলো তার উপর খুব বেশি কিছু নির্ভর করে না। তারা বলেন, পরিবহনকালে কিছু তেল নষ্ট হয়। তাপমাত্রাজনিত ক্ষতি এবং পরিবহনকালে ক্ষতি খুবই স্বাভাবিক একটি প্রক্রিয়া বলেও তারা মন্তব্য করেন।