চাঁদের কেন্দ্রে কী আছে, মিলল নতুন তথ্য

| মঙ্গলবার , ৯ মে, ২০২৩ at ৫:৪৭ পূর্বাহ্ণ

বিভিন্ন উপকথায় চাঁদকে দেখানো হয়েছে থকথকে সবুজাভ পনিরের পিণ্ড। অবশেষে রায় এল চাঁদ পনিরের তৈরি নয়। সঙ্গে পাওয়া গেল চাঁদের গঠন নিয়ে বস্তুনিষ্ঠ প্রমাণ। গবেষণায় উঠে এসেছে চাঁদের ভেতকার গঠন নিরেট, ঘনত্ব অনেকটাই লোহার কাছাকাছি। চাঁদের অভ্যন্তরে গঠন কঠিন না গলিত; বিজ্ঞানী মহলে দীর্ঘদিনের বিতর্কের বুঝি অবসান হলো এবার। এ নিয়ে নিবন্ধ ছেপেছে বিজ্ঞান সাময়িকী নেচার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এবার চাঁদের পূর্ণাজ্ঞ ইতিবৃত্ত ও সৌরজগতের নানা অজানা দিক জানা যাবে। খবর বিডিনিউজের।

ফ্রান্স ন্যাশনাল সেন্টার ফর সায়েন্টিফিক রিসার্চে (সিএনআরএস) করা পরীক্ষাটির দলনেতা জ্যোতির্বিজ্ঞানী আর্থার ব্রাইউড বলেন, চাঁদের চৌম্বকক্ষেত্রের বিবর্তন নিয়ে অনুসন্ধান করতে গেলে ভেতরের নিরেট অংশের উপস্থিতি সম্পর্কে জানা যায়, যা একটি অখণ্ড কঠিন আবরণের উপস্থিতি সমর্থন করেছে। এতে করে সামনে সৌরজগতের প্রথম একশ কোটি বছরে চাঁদে বিশালাকৃতির উল্কাপাতের (যা লুনার বম্বার্ডমেন্ট নামে পরিচিত) স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভৌতকম্পনের ডেটা বিশ্লেষণ করে সবচেয়ে কার্যকরভাবে কোনো সৌরবস্তুর ভেতরের গঠন ও উপাদান সম্পর্কে জানা যায়। ভৌতকম্পনে যে তরঙ্গ তৈরি হয় সেগুলো পর্যবেক্ষণ করে চাঁদের ভেতরের গঠনউপাদানের পূর্ণাঙ্গ তালিকা বের করতে পারবেন।

বিজ্ঞানীদের কাছে অ্যাপোলো মিশনের ভৌতকম্পন (সিসমিক) ডেটা রয়েছে, কিন্তু সেগুলো দিয়ে চাঁদের ভেতরের গঠন কেমন, সেটা পুরো নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। একদম কেন্দ্রের কিছুটা বাইরের দিকে গলিত লাভার একটি স্তর রয়েছে। তারও ভেতরের অংশ গলিত না নিরেট সেটা নিয়ে বিতর্ক পুরনো। অ্যাপোলো মিশনের ডেটা দুটি বক্তব্যকেই সমর্থন করে।

এর সুস্পষ্ট উত্তরে খুঁজতে ব্রাইউড ও তার দল অন্যান্য স্পেস মিশনগুলোর ডেটা ব্যবহার করেছেন। তার সঙ্গে চালিয়েছেন লেজার রেঞ্জিংয়ের (কোনো বস্তুর উপর লেজার রশ্মি ফেলে ও প্রতিফলিত রশ্মিটি গ্রহণ করে মধ্যবর্তী দূরত্ব এবং অন্যান্য বৈশিষ্ট্য নির্ণয়ের পরীক্ষা) মতো পরীক্ষানিরীক্ষা। সেসব থেকে জানা গেছে, পৃথিবীর অভিকর্ষের প্রভাবে চাঁদের গঠন পরিবর্তনের মাত্রা, চাঁদের ঘনত্ব, পৃথিবী ও চাঁদের মধ্যকার দূরত্বের ভিন্নতাসহ অসংখ্য খুঁটিনাটি তথ্য।

গবেষণাটির পরবর্তী অংশে তারা ভিন্ন ভিন্ন উপাদান হলে কোর (কেন্দ্রের গঠন) কেমন হতো, সেসব মডেল তৈরি করে পরীক্ষায় প্রাপ্ত ডেটার সঙ্গে মিলিয়ে দেখেন। বেশ কিছু চমকপ্রদ তথ্য জানতে পেরেছে গবেষকদল। চাঁদের উপরিভাগ থেকে কেন্দ্রের দিকে গেলে ক্রমশ ঘনত্ব বাড়তে থাকে। এটাই চাঁদের গঠন নিয়ে বহুল প্রচলিত তত্ত্ব, যা দিয়ে চাঁদের আগ্নেয়গিরির অঞ্চলের নির্দিষ্ট কিছু মৌলের উপস্থিতি ব্যাখ্যা করা হয়। সিএনআরএসের বিজ্ঞানীদের করা গবেষণা আরো নতুন কিছু দিক সামনে এসে সেই তত্ত্বকেই সমর্থন করছে।

গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে চাঁদের ভৌত আবরণগুলোর গঠন অনেকটাই পৃথিবীর আবরণগুলোর মতো। এর বাইরের গলিত অংশের ভেতরে রয়েছে নিরেট অংশ। তাদের মডেল অনুসারে এর বাইরের দিকের ব্যাসার্ধ ৩৬২ কিলোমিটার আর ভেতরের অংশে সেটা ২৫৮ কিলোমিটার, যা চাঁদের ব্যসার্ধের শতকরা প্রায় ১৫ ভাগ। তাদের প্রাপ্ত ফলাফলে চাঁদের একদম কেন্দ্রে প্রতি ঘনমিটারের ভর ৭,৮২২ কিলোগ্রাম, যা লোহার আপেক্ষিক গুরুত্বের প্রায় সমান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরেল কর্মচারী হত্যার ১৯ বছর পর আসামি গ্রেপ্তার
পরবর্তী নিবন্ধস্ত্রীকে খুনের দায়ে স্বামীর যাবজ্জীবন