বোরো ধান পাকতে শুরু করেছে ১০–১৫ দিন আগ থেকে। ঈদের আগে আংশিক ধান কাটা পড়লেও রোজা, তাপদাহের কারণে অধিকাংশ ধান এখনো মাঠে। কেউ ধান কেটে মাঠে ফেলে রেখেছেন, আবার অনেকে কাটতে না পেরে পাকা ধান রেখেছেন জমিতে। এরই মধ্যে এসে পড়ে ঈদ। শ্রমিকদের অনেকে ঈদ ছুটি কাটাতে চলে যান বাড়িতে। ঈদের পরে অনেক শ্রমিক পাড়ি জমিয়েছেন বিদেশে। এমন অবস্থায় ধান কাটার চূড়ান্ত মুহূর্তে সীতাকুণ্ডে দেখা দিয়েছে তীব্র শ্রমিক সংকট।
এদিকে চলতি মাসের শুরু থেকেই আকাশে মেঘের আনাগোনা। আবহাওয়া দপ্তর থেকেও ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দেওয়া হচ্ছে বারবার। কখন বৃষ্টি নামে এ আশঙ্কায় পাকা ধানে কাঁচি লাগাতে ভয় পাচ্ছেন কৃষক। কারণ বৃষ্টি নামলে কেটে রাখা ধান ভিজে নষ্ট হয়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। বাড়তি দাম দিয়ে কাটা ধান বেঁধে যে ঘরে তুলবেন সেটিও পারছেন না শ্রমিক সংকটের জন্য। সবমিলিয়ে পাকা ধান নিয়ে এ অঞ্চলের চাষিদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। অনেকে বেশি দাম দিয়ে অন্য এলাকা থেকে দক্ষ বা অদক্ষ যে যেমন পাচ্ছেন শ্রমিক ভাড়া করে নিচ্ছেন। বাড়তি টাকা পেয়ে ধান কাটা কাজে নেমে পড়ছেন স্কুল–কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও।
মুুরাদপুর ইউনিয়নের বশরতনগর গ্রামের কৃষক মতিয়ার রহমান বলেন, পাঁচ বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করেছি। পাঁচ–ছয়দিন দিন আগে তিন বিঘার ধান কেটে রেখেছি। ধান ও বিচালি শুকিয়ে গেছে। আঁটি বেঁধে ধান বাড়ি নেওয়ার জন্য এলাকায় শ্রমিক পেলাম না। সকালে আকাশে মেঘ দেখে স্থির থাকতে পারিনি। পরে এক হাজার টাকা হাজিরা চুক্তিতে অন্য এলাকা থেকে চারজন শ্রমিক নিয়ে এসেছি। তারা এসে দুপুরের মধ্যে ধান আঁটি বেঁধে গাদা দিয়ে গেছে। মতিয়ার রহমান বলেন, এলাকার মাঠে কাজ করা লোকজন সব বিদেশে চলে যাচ্ছে। এ জন্য ধান কাটার সময় শ্রমিক পাওয়া যায় না। যে অবস্থা তাতে ধান চাষের ইচ্ছা মরে যাচ্ছে। পৌরসভার শিবপুর বিলের মাঠের চাষি নাজিম উদ্দিন বলেন, ধান পেকে গাছ নুইয়ে পড়ছে। কখন বৃষ্টি নামে এ ভয়ে ধানে কাঁচি দিতে পারছি না।
সৈয়দপুর ইউনিয়নের শেখেরহাট গ্রামের চাষি আব্দুল কুদ্দুস বলেন, ধানের ফলন যা হয়েছে খারাপ না। গতকাল সকালে দুই ফালি ধান কেটেছি। এরপর ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি শুরু হয়েছে। আর কাটতে পারিনি। পাকা ধান মাঠে রেখে কোথাও মন বসছে না।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ বলেন, চলতি বোরো মৌসুমে সীতাকুণ্ডে প্রায় ২৮ হাজার হেক্টর জমিতে ধানের আবাদ হয়েছে। রোগবালাই তেমন না থাকায় ভালো ফলনও হয়েছে। দুই–তৃতীয়াংশ ধান এরই মধ্যে কাটা পড়েছে। বাকি ধান ঠিকঠাক ঘরে তুলতে পারলে কৃষক লাভবান হবেন।