সাত বছর পর
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত
স্বামী গ্রেপ্তার
মানসিক চাপ থেকে বাঁচতেই দ্বিতীয় স্ত্রীকে খুন করেছিল আলী আকবর (২৮)। এ মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আলী আকবর র্যাবের পাতা ফাঁদে ধরা পড়ার পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এ কথা জানিয়েছে। গত ৪ মে রাতে নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। আলী আকবর ফটিকছড়ির ডলু আরালিয়া গ্রামের মৃত হাচি মিয়ার ছেলে।
র্যাব–৭ এর সদর ক্যাম্প কমান্ডার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহফুজুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে আজাদীকে জানান, হত্যাকাণ্ডের পর পুলিশ গ্রেপ্তার করলেও পরে জামিনে গিয়ে পালিয়ে যান আলী আকবর। গ্রেপ্তার এড়াতে বিভিন্ন ছদ্মবেশ ধরে নগরীর বিভিন্ন স্থানে কাজ নেন। গত সাত বছর ধরে বিভিন্ন স্থানে ছদ্মবেশে পালিয়ে বেড়ালেও অবশেষে তাকে ধরা পড়তে হয়েছে। গ্রেপ্তার আলী আকবরকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন র্যাবের এ কর্মকর্তা।
জিজ্ঞাসাবাদে আলী আকবর জানান, প্রথম বিয়ের কথা গোপন রেখে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ২০১৫ সালের ১০ নভেম্বর দ্বিতীয় বিয়ে করেছিল আকবর। তবে নোটারি পাবলিকের কাগজপত্র দেখিয়ে কিশোরীকে বিয়ে করলেও সেই কাগজ ছিল ভুয়া। বিয়ের দুই মাস পর ওই কিশোরীকে বাবার বাড়ি থেকে এক লাখ টাকা আনতে বলে আকবর। চাপে পড়ে ওই কিশোরী টাকা আনতে গেলেও টাকা দেননি কৃষক বাবা। অন্যদিকে গোপনে দ্বিতীয় স্ত্রীর সঙ্গে বসবাসের কথা জানতে পারে প্রথম স্ত্রী। সেই থেকে প্রথম স্ত্রী আকবরের ওপর মানসিক চাপ তৈরি করে যাতে দ্বিতীয় স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করে।
একদিকে দ্বিতীয় স্ত্রীর বাবার বাড়ি থেকে টাকা দিতে অপরাগতা; অন্যদিকে প্রথম স্ত্রীর মানসিক চাপ থেকে ক্ষুব্ধ হয়ে শেষ পর্যন্ত খুন করে দ্বিতীয় স্ত্রীকে। পরে ওই কিশোরীর বাবা থানায় মামলা করলে ওই মামলায় ফাঁসির দণ্ড দেন আদালত। তবে জামিনে বেরিয়ে দীর্ঘদিন ধরে পালিয়ে বেড়াচ্ছিল আলী আকবর।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০১৬ সালের ১২ জানুয়ারি দ্বিতীয় স্ত্রীকে বেড়াতে নেয়ার কথা বলে বাবার বাড়ি থেকে নিয়ে যায় আকবর। ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত তাকে নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় বেড়াতে যায়। ১৭ জানুয়ারি সকাল থেকে ২০ জানুয়ারি সকালের মধ্যে কিশোরীকে শ্বাসরোধে খুন করে লাশ তার বাবার খামারবাড়ির পাশে পাহাড়ে গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখে। তবে খুনের আগে অবৈধভাবে স্ত্রী পরিচয়ে নিজের হেফাজতে রাখা কিশোরীকে আলী আকবরের ধর্ষণ করার প্রমাণ ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে পাওয়া যায়। এছাড়া খুনের আগে কিংবা পরে কিশোরীর যৌনাঙ্গে ধারালো কিছু দিয়ে জখমের চিহ্নও পাওয়া যায়।
এ ঘটনায় ফটিকছড়ির ভূজপুর থানায় কিশোরীর বাবার দায়ের করা মামলায় ২০১৭ সালে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছিল। বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে গত ১৯ মার্চ চট্টগ্রামের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল–৭ এর বিচারক বেগম ফেরদৌস আরা আসামি আলী আকবরকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন। একই সঙ্গে তাকে ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও ৫ বছর সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।