ঈদকে সামনে রেখে নগরজুড়ে বেড়েছে মৌসুমী রিকশা চালকদের তৎপরতা। বাড়তি আয়ের আশায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা এসব রিকশা চালক শহরের রাস্তাঘাটও ঠিকমতো চিনে না। ফলে তারা মনগড়া ভাড়া দাবি করছেন যাত্রীদের কাছে। এতে প্রায় চালক ও যাত্রীদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা ঘটছে। আবার অতিরিক্ত রিকশার কারণে বাড়ছে অসহনীয় যানজটও।
জানা গেছে, মৌসুমী রিকশা চালকদের মধ্যে দিনমজুর, চাষাবাদের শ্রমিকসহ বিভিন্ন অস্থায়ী কাজের শ্রমিকের সংখ্যায় বেশি। বাড়তি আয়ের আশায় এক মাস রিকশা চালিয়ে ঈদ শেষে আবার ফিরে যাবেন পুরনো পেশায়। এছাড়া ঈদকে সামনে রেখে নগরের আশেপাশের উপজেলা থেকেও বহু চালক তাদের রিকশা নিয়ে নগরে চলে আসছেন। বিশেষ করে হাটহাজারী, পটিয়া ও সীতাকুণ্ড থেকে আসা অনেক রিকশা চালককে নগরে রিকশা চালাতে দেখা গেছে।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের রাজস্ব শাখার তথ্য অনুযায়ী, নগরে লাইসেন্সধারী রিকশার সংখ্যা ৫৩ হাজার ৭৭৪টি। এর মধ্যে লাইসেন্স নবায়ন করেছে ৪০ হাজার ৩০২টি। বাকি ১৩ হাজার ৪৭২টি নবায়ন করেনি। তবে সারা বছর লাইসেন্সপ্রাপ্ত রিকশার প্রায় দ্বিগুণ চলাচল করে নগরে। ঈদকে সামনে রেখে এ সংখ্যা আরো বেড়েছে।
নগরের কাজীর দেউড়ি থেকে চেরাগী পাহাড় মোড় পর্যন্ত নিয়মিত রিকশায় যাতায়াত করেন চাকরিজীবী হাবীব। তিনি জানান, স্বাভাবিক সময়ে ২৫ থেকে ৩০ টাকা ভাড়া পরিশোধ করেন। কিন্তু রমজান আসার পর থেকে একই পথে রিকশা চালকরা ভাড়া দাবি করছেন ৪০ টাকা থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত। হাবীব আজাদীকে বলেন, যেসব রিকশা চালক অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করে তারা ঠিকভাবে পথও চিনে না। যেমন জামালখান মোড় এসে অনেকে চকবাজারের দিকে চলে যেতে চায়। এতে বোঝা যায় তারা শহরে নতুন এসেছে। হয়তো ঈদকে সামনে রেখে বাড়তি আয়ের আশায় তারা এসেছে। তাই পথঘাট চেনা না থাকায় যেমন খুশি তেমন ভাড়া দাবি করে।
মুন্না নামে আরেক যাত্রী বলেন, দূরের ভাড়া মোটামুটি ঠিক আছে। ১০–১৫ টাকা বেশি নিচ্ছে। কিন্তু স্বল্প দূরত্বের ভাড়া বেশি দাবি করছে। অনেকটা এ রকম রিকশায় ওঠানামার ভাড়া ২৫ থেকে ৩০ টাকা, যা স্বাভাবিক সময়ে ১৫ টাকার মতো ছিল।
হাবীব ও মুন্নার এ বক্তব্যের সত্যতা মিলেছে হোসেন আহম্মদ নামে এক রিকশা চালকের সাথে কথা বলে। তিনি বলেন, আমার বাড়ি ভোলা। গ্রামে কৃষি শ্রমিকের কাজ করি। রোজা শুরু হওয়ার দুদিন আগে চট্টগ্রাম আসি। উদ্দেশ্য রিকশা চালানো। পুরো রমজান মাস রিকশা চালিয়ে ঈদের এক সপ্তাহ পর ফিরে যাব। রমজান মাসে রিকশা চালালে কিছু বাড়তি আয় হয়। গত বছর রমজানেও চট্টগ্রামে এসেছিলেন জানিয়ে বলেন, বছরের অন্য সময়ের তুলনায় রমজান এবং ঈদের সময় স্বাভাবিক ভাড়ার চেয়ে প্রটি ট্রিপে ১০–১৫ টাকা বেশি ভাড়া পাওয়ায় যায়। বেশিরভাগ যাত্রী বাড়তি ভাড়ার বিষয়টি মেনেও নেন।
এদিকে অতিরিক্ত রিকশার চাপে মুরাদপুর, চকবাজার, আন্দরকিল্লা, নিউ মার্কেট, আমতল, জিইসি মোড়, বহদ্দারহারটসহ বিভিন্ন এলাকার অধিকাংশ মোড়ে প্রায় যানজট লেগে থাকে।