আপন তার বন্ধুদের নিয়ে খেলায় মেতেছে। কত খেলা তাদের। বাগানের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আলী’র চোখ দুটো বেঁধে দিয়ে বললো – যাও আলী আমরা সবাই লুকাই। তুমি আমাদের খুজে বের করো।
এ বলে আপন –আলিফ, রবিন, টগর, টুই, ছটকু, বুনন সহ সবাই কে নিয়ে এদিকে ওদিকে লুকিয়ে পড়লো ঝটপট। আলী গাছের আড়ালে ঝোঁপের আড়ালে খুঁজতে লেগে গেলো বন্ধুদের।কারো কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে চোখের বাঁধন টা হালকা করে দিলো অল্প। তারপর একে একে সবাই কে দেখতে পেলো। কিন্তু সবাই না লুকিয়ে ওখানে কেন জানি দাঁড়িয়ে আছে গোল হয়ে। তাদের মধ্যিখানে সাদা পাজামা পাঞ্জাবি গায়ে কালো কোট পরা বিশাল লম্বা এক লোক দাঁড়িয়ে। আলী চোখ থেকে বাঁধনটা খুলে কাছে গেল।দেখেই চোখ দুটো ইয়া বড় হয়ে গেলো আলীর।
বঙ্গবন্ধু?
সব বন্ধুরা আলী’র মুখের দিকে তাকালো।
আরে বুদ্ধ বোকার দল তোরা এখনো চিনতে পারস নাই উনাকে?
ছটকু বুনন একসাথে বলে উঠলো — চেনা চেনা লাগছে কিন্তু চিনতে পারছি না।
টগর, টুই—ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো। কোন কথা না বলে।
আলিপ বলে উঠলো — আপনি কি আমাদের বঙ্গবন্ধু?
লোকটা মৃদু হেসে উঠলো।
আপন বলে উঠলো —কিন্তু মা বলেছে বঙ্গবন্ধু তো বেঁচে নেই। উনাকে উনার ছোট্ট ছেলে রাসেলকে মেরে ফেলেছে। কিছু খারাপ লোক।
আলী লোকটা’র হাতটা ধরলো তারপর জিজ্ঞেস করলো— হ্যালো আপনি কি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ছোট্ট রাসেলের বাবা?
লোকটা ভরাট কন্ঠে বলে উঠলো — হুম আমি তোমাদের বন্ধু ছোটদের বন্ধু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
আপন বলে উঠলো আপনি কিভাবে এলেন। আপনি তো তারা’র দেশে থাকেন— আম্মু বলেছে।
আমি সবসময়ই আসি তোমাদের কাছে। ছোট ছোট শিশুরা আমার বন্ধু। ফুলেরা আমার বন্ধু। পাখিরা আমার বন্ধু। নদী আমার বন্ধু। এ দেশের মাঠ ঘাট মেঠো পথ খোলা মাঠ খোলা আকাশ সবই আমার আপন। আমার চিরচেনা।
আমি পাখির সুরে নদীর কলতানে বাতাসের শব্দে মিশে আছি। এ বাংলাদেশ এর আনাচকানাচে আমি প্রতিনিয়ত বিচরণ করি। আমি তোমাদের হাসিতে আনন্দে মন খারাপে সবখানে মিশে আছি। আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি। এ বলে সামনের দিকে তাকিয়ে শ্রদ্ধাবনত হয়ে মাথা নুয়ে দিলেন বঙ্গবন্ধু। তাঁর দেখা দেখা আপন, আলিফ, রবিন, টগর, টুই, ছটকু, বুনন এবং আলী ও মাথা নুয়ে সালাম জানালো প্রিয় জন্মভূমি কে আমাদের সোনার বাংলাকে। তারপর মাথা তুলতেই তারা দেখলো বঙ্গবন্ধু নেই।কোথায় যেন হারিয়ে গেলো। তারা সবাই দিগ্িবদিক ছুটাছুটি করে খুঁজতে লাগলো তাদের প্রিয় মানুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কে।বাগানে পাখিরা ডাকছে ফুলেরা হাসছে। তবে কি বঙ্গবন্ধু তাদের ভিতর হারিয়ে গেলো?
সকাল হয়ে গেছে আপন সোনা। তাড়াতাড়ি উঠে পড়ো বাবা।স্কুলের সময় হয়ে গেছে। মা’র ডাকে ঘুম ভেঙে গেলো আপনের। কিন্তু তবুও কিছু সময় লাগে তার নিজের অবস্থানটা বুঝতে। বাগান বন্ধুরা খেলা বঙ্গবন্ধু সবই স্পষ্ট হতে লাগলো তার। বঙ্গবন্ধুর চেহারা তার অবয়ব টা ভাসতে লাগলো তার চোখে। বিছানা ছেড়ে মা’র কাছে ছুটে গেলো আপন। মা’কে তো জানাতেই হবে সব কথা। গতরাতে মা–ই তো তাঁর গল্প করে করে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছিল তাকে।