রাস্তা পার হওয়ার সময় উল্টো পথে আসা বাস চাপায় প্রাণ হারিয়েছেন সাকিয়াতুল কাউছার (৪৮) নামে এক স্কুল শিক্ষিকা। গতকাল সকাল পৌনে ৯টার দিকে নগরীর বায়েজিদ থানার ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের মোড়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত সাকিয়াতুল কাউছার কক্সবাজারের কুতুবদিয়া উপজেলার কৈয়ারবিল নজর আলী মাতবর বাড়ির সরোয়ার কামালের স্ত্রী। হাটহাজারীর ছিপাতলী কাজীরখীল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা ছিলেন সাকিয়াতুল কাউছার। তার স্বামী সরোয়ার কামালও আতুরার ডিপো এলাকার একটি স্কুলের শিক্ষক। একমাত্র মেয়েসহ তারা নগরীর অক্সিজেনের চক্রেসো কানন আবাসিক এলাকায় বসবাস করে আসছিলেন।
এদিকে ঘটনার পর বাসটি জব্দ করে পুলিশ। আটক করা হয় চালক মো. রাজীবকে (২৬)। তিনি নোয়াখালী জেলার কবিরহাট থানার নুরুল আমিনের ছেলে।
বায়েজিদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফেরদৌস জাহান সাংবাদিকদের বলেন, সকালে ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুলের মোড়ে রাস্তা পার হওয়ার সময় একটি নিউমার্কেটগামী ৮ নম্বর সিটি বাস ওই স্কুল শিক্ষিকাকে চাপা দেয়। গাড়িটি অক্সিজেন মোড় থেকে দ্রুত গতিতে উল্টো পথে যাওয়ায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
গতকাল চমেক হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, কান্নায় ভেঙে পড়েছেন নিহতের স্বামী ও একমাত্র মেয়ে সন্তান তাহি। স্বজনদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, সাকিয়াতুল কাউছারের স্বপ্ন ছিল একমাত্র মেয়ে তাহি হবে চিকিৎসক। সেই স্বপ্ন পূরণে মেয়েকে গড়ে তুলতে ভালো মানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি করাতে হবে। তাই দ্বীপ এলাকা কুতুবদিয়া থেকে চট্টগ্রাম শহরে আসেন সাকিয়াতুল। তাহি বর্তমানে চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজের ছাত্রী। আগামীবার এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিবেন। মায়ের স্বপ্নকে নিজের করে নিয়েছিলেন তিনি। তাই নিজেকে একটু একুট প্রস্তুতও করেছেন। অথচ একটি দুর্ঘটনা নিমেষেই যেন সব স্বপ্ন ধূলিসাৎ করে দিল। যে স্বপ্ন নিয়ে চট্টগ্রাম আসেন সে স্বপ্ন পুরণের আগেই নিথর দেহে কুতুবদিয়া ফিরলেন সাকিয়াতুল।
হাটহজারী প্রতিনিধি জানান, ২৩ বছরের কর্মস্থল বিদ্যালয়ের মাঠে গতকাল বিকেল ৫টায় সাকিয়াতুল কাউছারের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। ছিপাতলী ইউনিয়নের ৭ নং কাজীরখীল ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার মোহাম্মদ লোকমান আজাদীকে বলেন, এই শিক্ষিকা কর্মের প্রতি অত্যন্ত নিষ্ঠাবান ছিলেন। প্রতিদিন যথাসময়ে স্কুলে আসতেন। স্কুল ছুটির পর স্কুল থেকে যেতেন। স্কুল এলাকা নিম্নাঞ্চল হওয়ায় বর্ষা মৌসুমে সড়ক ঢলের পানিতে ডুবে গেলেও তাকে স্কুলে আসতে দেখেছি।
প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির নেতা প্রধান শিক্ষিক সৈয়দ নূরুল আবসার বলেন, শিক্ষিকা সাকিয়াতুল কাউছারের মধ্যে শিক্ষকতার সমস্ত গুণ বিরাজমান ছিল। শিক্ষিক সমাজের যে কোনো কর্মকাণ্ডে তার অগ্রণী ভূমিকা ছিল। পেশার প্রতি নিবেদিত এই শিক্ষিকার অকালে চলে যাওয়ায় শিক্ষক সমাজের যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে তা কোনো দিন পূরণ হবে না।
হাটহাজারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সাঈদা আলম বলেন, নিহত শিক্ষিকার বাড়ি কুতুবদিয়া উপজেলায় হলেও তিনি কমস্থল এলাকার মানুষকে আপন করে নিয়েছেন। দীর্ঘদিন একই স্কুলে কর্মরত থেকে এলাকার মানুষের মন জয় করে নিয়েছেন। তার কর্মদক্ষতার কারণে এলাকাবাসী ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি তাকে সম্মাননা প্রদান করে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছেন।
জানা গেছে, হাটহাজারী থেকে জানাজা শেষে সাকিয়াতুল কাউছারের মরদেহ নিয়ে কুতুবদিয়ার উদ্দেশ্যে রাওয়ানা হন স্বজনরা। গতকাল রাত ১১টায় কুতুবদিয়ায় দ্বিতীয় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।