প্রশাসনে চট্টগ্রামের নারী

ড. নাজনীন কাউসার চৌধুরী (রুনা)

| মঙ্গলবার , ৭ মার্চ, ২০২৩ at ৫:১৪ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৫০ শতাংশ নারী। তাদের উন্নয়নকেবল তাদের পরিবারের নয়, একইসাথে সমাজ ও দেশের উন্নয়ন। এ উপলব্ধি থেকে নারীর ক্ষমতায়ন ও নারীর অবস্থার উন্নয়নের ওপর সরকার অধিক গুরুত্ব আরোপ করেছে। উল্লেখ্য, স্বাধীনতার মহান স্থপতি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মনেপ্রাণে নারীপুরুষের সাংবিধানিক অধিকারকে গুরুত্ব দিয়েছিলেন এবং নারীপুরুষের সমঅধিকারে বিশ্বাস করতেন। নারীপুরুষ সমানভাবে এগিয়ে না এলে কোনো দেশের উন্নতি সম্ভব নয়, তিনি তা উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। ‘আমার দেখা নয়াচীন’ গ্রন্থে তিনি লিখেছেন– ‘নয়াচীনের মেয়েরা আজকাল জমিতে, ফ্যাক্টরিতে, কলকারখানাতে, সৈন্যবাহিনীতে দলে দলে যোগদান করছে। সত্য কথা বলতে গেলে, একটা জাতির অর্ধেক জনসাধারণ যদি ঘরের কোণে বসে শুধু বংশবৃদ্ধির কাজ ছাড়া আর কোনো কাজ না করে তা হলে সেই জাতি দুনিয়ায় কোনো দিন বড় হতে পারে না। নয়াচীনে পুরুষ ও নারীর সমান অধিকার কায়েম হওয়াতে আজ আর পুরুষ জাতি অন্যায় ব্যবহার করতে পারে না নারী জাতির ওপর।’ একই গ্রন্থে তিনি এও বলেছেননয়াচীনের উন্নতির প্রধান কারণ পুরুষ ও মহিলা আজ সমানভাবে এগিয়ে এসেছে দেশের কাজে। সমানভাবে সাড়া দিয়েছে জাতি গঠনমূলক কাজে। তাই জাতি আজ এগিয়ে চলেছে উন্নতির দিকে।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১০, ১৯, ২৭, ২৮ এবং ২৯ এর মাধ্যমে নারীর সমান অধিকার ও সুযোগের সমতা নিশ্চিত করা হয়েছে এবং অনুচ্ছেদ ৯, ৬৫() এবং ৬৫() এর মাধ্যমে স্থানীয় সরকার কাঠামোতে নারীর ক্ষমতায়ন ও নারীর অবস্থার উন্নয়নের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। নারীর অগ্রযাত্রা ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন পরিকল্পনায় নারীর রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষমতায়নকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান ও নারীর অগ্রযাত্রা ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন পরিকল্পনায় নারীর ক্ষমতায়ন ও জেন্ডার অসমতা দূরীকরণে নারীর মানবিক সক্ষমতা বৃদ্ধি, অর্থনৈতিক উপকার বৃদ্ধি, কন্ঠস্বর ও প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধি এবং উন্নয়নের জন্যে সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে কৌশলগত উদ্দেশ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। নারীর রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষমতায়নের ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান করে বিভিন্ন উন্নয়ন পরিকল্পনা, বিভিন্ন নীতিমালা, বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা এবং বিভিন্ন ধরনের সচেতনতা সৃষ্টির কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। নারী শিক্ষার প্রসারে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান, প্রশিক্ষণ ও আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, সহজ শর্তের ক্ষুদ্রঋণের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা ছাড়াও অসহায়অবহেলিতপ্রতিবন্ধী নারী ও দরিদ্র কর্মজীবী মায়েদের সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের আওতায় আনা হয়েছে। নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে আইনি কাঠামো প্রণয়ন এবং জেন্ডার সংবেদনশীল বাজেট ও উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন ইত্যাদি কার্যক্রম বাস্তবায়নের মাধ্যমে সরকার নারী উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখছে। রাজনীতি (মাননীয় প্রধানমন্ত্রী/ মাননীয় স্পিকার/ বিরোধী দলীয় নেত্রী/ নির্বাচিত সংসদ সদস্য/ স্থানীয় সরকার), সরকারি চাকুরি (প্রশাসন/ কূটনীতি/ সেনাবাহিনী/ পুলিশ/ বিচার), শিক্ষা (ভিসি/ প্রোভিসি/ শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান), সংস্কৃতি, ক্রীড়া, ব্যাংকিং, ব্যবসাসহ সকল শ্রেণিপেশা আজ নারীর পদচারণায় মুখরিত।

নারীর এ পদচারণায় প্রশাসন ক্যাডারে চট্টগ্রামের নারীদের অবস্থান কেমনএ নিয়ে আলোচ্য প্রবন্ধে আলোকপাত করা হয়েছে। আলোচ্য প্রবন্ধে বিসিএসপ্রশাসন ক্যাডারে বর্তমানে কর্মরত নারীদের ওপরই মূলত আলোচনা এবং এ প্রবন্ধের সকল বিশ্লেষণ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় হতে ২৯ আগস্ট ২০২২ তারিখে প্রাপ্ত তথ্যের আলোকেই করা হয়েছে।

প্রশাসন ক্যাডারে নারীর অংশগ্রহণ ও চট্টগ্রামের নারী : সংবিধানের ২৯() অনুচ্ছেদে ‘প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ লাভের ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা থাকিবে’ বিধানের আওতায় স্বাধীনতার পর হতে ননক্যাডার সরকারি চাকুরিসহ বিভিন্ন পেশায় বিভিন্ন পর্যায়ের নারীরা নিয়োগের সুযোগ পেতে শুরু করলেও বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসপ্রশাসন ক্যাডারে মেয়েদের পদচারণা শুরু হয় ১৯৮২ সাল থেকে। তারই ধারাবাহিকতায় বর্তমানে প্রশাসন ক্যাডারে কর্মরত কর্মকর্তাদের সংখ্যা বিশ্লেষণে দেখা যায়, বর্তমানে মোট ৫৮২৭ জন কর্মকর্তার মধ্যে ১৫১৭ জন কর্মকর্তা নারী। বর্ণিত ১৫১৭ জন নারীর মধ্যে ৬৯ জন কর্মকর্তা চট্টগ্রাম জেলার। অর্থাৎ বর্তমানে কর্মরত কর্মকর্তাদের মধ্যে ২৬ শতাংশ কর্মকর্তা নারী এবং এই ২৬ শতাংশ নারীর মধ্যে ৫ শতাংশ নারী চট্টগ্রাম জেলার বাসিন্দা। সমতার বিবেচনায় এ হার আপাতদৃষ্টিতে কম মনে হলেও ইতিবাচক দিক হলো সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে এ হার ১৯৮২ সালের তুলনায় ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে।

প্রশাসন ক্যাডারে নারী ও পুরুষের প্রতিনিধিত্ব : সরকারি চাকুরিতে বিশেষত প্রশাসন ক্যাডারে বিভিন্ন পদে কর্মরত মোট ৫৮২৭ জন কর্মকর্তার সংখ্যা পর্যালোচনায় দেখা যায়মোট ৪৩১০ জন পুরুষ ও ১৫১৭ জন নারী। পুরুষদের মধ্যে সিনিয়র পর্যায়ে (যুগ্মসচিব হতে সচিব পদে) ১০৪৩ জন (২৪.২ শতাংশ), মধ্যম পর্যায়ে (উপসচিব পদে) ১২৭০ জন (২৯.৫ শতাংশ) এবং জুনিয়র পর্যায়ে (সহকারী সচিব/ প্রধান ও সিনিয়র সহকারী সচিব/ প্রধান পদে) ১৯৯৭ জন (৪৬.৩ শতাংশ) কাজ করছেন। অপরদিকে, নারীদের মধ্যে সিনিয়র পর্যায়ে (যুগ্মসচিব হতে সচিব পদে) ২০৫ জন (১৩.৫ শতাংশ), মধ্যম পর্যায়ে (উপসচিব পদে) ৩৫৫ জন (২৩.৪ শতাংশ) এবং জুনিয়র পর্যায়ে (সহকারী সচিব/ প্রধান ও সিনিয়র সহকারী সচিব/ প্রধান পদে) ৯৫৭ জন (৬৩.১ শতাংশ) কাজ করছেন।

প্রশাসন ক্যাডারে ১৯৮২ সালের তুলনায় ধীরে ধীরে নারীর অংশগ্রহণ/ প্রতিনিধিত্ব বাড়লেও তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, উচ্চ পর্যায়ের নারীর মোট প্রতিনিধিত্ব ৪৭ শতাংশ, যেখানে সিনিয়র পর্যাযে প্রতিনিধিত্ব ১৪ শতাংশ ও মধ্যম পর্যায়ে প্রতিনিধিত্ব ২৩ শতাংশ। অপরদিকে, পুরুষের মোট প্রতিনিধিত্ব ৫৪ শতাংশ, যেখানে সিনিয়র পর্যায়ে প্রতিনিধিত্ব ২৪ শতাংশ ও মধ্যম পর্যায়ে প্রতিনিধিত্ব ৩০ শতাংশ। অর্থাৎ সিনিয়র ও মধ্যম পর্যায়ে নারীর প্রতিনিধিত্ব পুরুষের তুলনায় যথাক্রমে ১০ শতাংশ ও ৭ শতাংশ কম। সামগ্রিকভাবে উচ্চ পর্যায়ে নারীর প্রতিনিধিত্ব পুরুষের তুলনায় ৭ শতাংশ পিছিয়ে। অপরদিকে, জুনিয়র পর্যায়ে নারীর মোট প্রতিনিধিত্ব ৬৩ শতাংশ এবং পুরুষের মোট প্রতিনিধিত্ব ৪৬ শতাংশ। অর্থাৎ জুনিয়র পর্যায়ে নারীর প্রতিনিধিত্ব পুরুষের তুলনায় ১৭ শতাংশ বেশি। এ থেকে একটি বিষয়টি লক্ষণীয়জুনিয়র পর্যায়ে নারীর অংশগ্রহণ পুরুষের অংশগ্রহণের তুলনায় অনেক বেশি হলেও উচ্চ পর্যায়ে তথা সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় এখনও নারীর প্রতিনিধিত্ব পুরুষের তুলনায় অনেক কম। তাই সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় নারীর প্রতিনিধিত্ব বাড়ানো প্রয়োজন।

প্রশাসন ক্যাডারে চট্টগ্রাম জেলার নারীদের প্রতিনিধিত্ব : প্রশাসন ক্যাডারে চট্টগ্রাম জেলার নারীর অংশগ্রহণ/ প্রতিনিধিত্ব পর্যালোচনা করলে দেখা যায়চট্টগ্রাম জেলার ৬৯ জন নারী প্রশাসন ক্যাডারে কর্মরত রযেছেন। প্রশাসন ক্যাডারে বর্তমানে কর্মরত কর্মকর্তাদের মধ্যে ২৬ শতাংশ নারী। আর এই ২৬ শতাংশ নারীর মধ্যে চট্টগ্রাম জেলার নারীদের প্রতিনিধিত্ব রয়েছে ৫ শতাংশ। উল্লেখ্য, প্রশাসন ক্যাডারে কর্মরত মোট ১৫১৭ জন নারীর মধ্যে সিনিয়র পর্যাযে (যুগ্মসচিব হতে সচিব পদে) ২০৫ জন, মধ্যম পর্যায়ে (উপসচিব পদে) ৩৫৫ জন এবং জুনিয়র পর্যায়ে (সহকারী সচিব/ প্রধান ও সিনিয়র সহকারী সচিব/ প্রধান পদে) ৯৫৭ জন কাজ করছেন। অপরদিকে, প্রশাসন ক্যাডারে কর্মরত চট্টগ্রাম জেলার ৬৯ জন নারীর মধ্যে সিনিয়র পর্যায়ে (যুগ্মসচিব হতে সচিব পদে) ৮ জন, মধ্যম পর্যায়ে (উপসচিব পদে) ১১ জন এবং জুনিয়র পর্যায়ে (সহকারী সচিব/ প্রধান ও সিনিয়র সহকারী সচিব/ প্রধান পদে) ৫০ জন কাজ করছেন। যার মধ্যে রয়েছেন১ জন সচিব, ২ জন অতিরিক্ত সচিব, ৫ জন যুগ্মসচিব, ১১ জন উপসচিব, ৩১ জন সিনিয়র সহকারী সচিব/প্রধান এবং ১৯ জন সহকারী সচিব/প্রধান। তথ্য পর্যালোচনায় আরো দেখা যায়, প্রশাসন ক্যাডারে কর্মরত চট্টগ্রাম জেলার ৬৯ জন নারীর মধ্যে সিনিয়র পর্যায়ে ১২ শতাংশ, মধ্যম পর্যায়ে ১৬ শতাংশ এবং জুনিয়র পর্যায়ে ৭২ শতাংশ।

নারীদের শিক্ষকতার পাশাপাশি অনেক চ্যালঞ্জিং পেশায় আসার জন্যে ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়েছে। যেটির একটি বাস্তব প্রতিফলন জুনিয়র পর্যায়ে চট্টগ্রামের নারীদের আধিক্য। তবে, সামগ্রিকভাবে প্রশাসন ক্যাডারে কর্মরত চট্টগ্রাম জেলার নারীরা বিভিন্ন পদে প্রশাসন ক্যাডারে কর্মরত মোট পুরুষ ও নারীর তুলনায় এখনও অনেক পিছিয়ে রযেছেন। প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বাড়লেও সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় নারীর ক্ষমতায়ন ও জেন্ডার সমতা নিশ্চিতকরণে অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে।

উপসংহার : সামপ্রতিক সময়ে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি উচ্চতর করার সাথে সাথে আর্থসামাজিক খাতে বিশেষত স্বাস্থ্য, শিক্ষা, দারিদ্র্য বিমোচন, নারীর ক্ষমতায়ন, সামাজিক সুরক্ষা প্রভৃতি খাতে বাংলাদেশ বিপুল অগ্রগতি অর্জন করেছে। সংবিধানের আলোকে সমতা, সাম্য এবং উন্নয়নসহ সকল বিষয়ের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে বিভিন্ন উন্নয়ন পরিকল্পনা সফলভাবে বাস্তবায়নের ফলে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে সফলতা অর্জন করেছে ও উন্নয়নশীল বিশ্বের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। দারিদ্র্য হার হ্রাস, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় জেন্ডার সমতা আনয়ন, প্রাথমিক শিক্ষায় ভর্তির হার বৃদ্ধি, শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার হ্রাস, পাঁচ বছরের নীচে শিশুমৃত্যু হ্রাস, টিকা দানের কাভারেজ বৃদ্ধি, সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ইত্যাদি ক্ষেত্রে ব্যাপক অগ্রগতি অর্জন করেছে।

জেন্ডার বৈষম্য হ্রাসে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ বর্তমানে শীর্ষ অবস্থানে আছে। বিশেষ করে, নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন, শিক্ষা ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্র নারীর সম্পৃক্তির বিচারে বাংলাদেশের অবস্থান ক্রমশ উন্নতি লাভ করছে। আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক সূচকের প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীর সমতা বজায় রাখার উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। নারীর স্বাস্থ্যগত, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে সফলতা অর্জনের জন্য বাংলাদেশ বেশ ক’টি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও পুরস্কার অর্জন করেছে।

বাংলাদেশ ইতোমধ্যে স্বল্পোন্নত দেশ হতে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার সকল ক্রাইটেরিয়া পূরণ করেছে। জাতিসংঘ ইতোমধ্যে বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ হতে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার সুপারিশ প্রদান করেছে। ২০৩০ সালে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং ২০৪১ সালে উন্নত দেশে উন্নীত হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ, সাথে রয়েছে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা ‘ডেল্টা প্ল্যান ২১০০’। সরকারের সকল পরিকল্পনার সফল বাস্তবায়নে সকল দপ্তরসংস্থাকে সাথে নিয়ে প্রশাসন ক্যাডার প্রত্যক্ষভাবে কাজ করে যাচ্ছে, যেখানে নারীপুরুষ নির্বিশেষে অংশগ্রহণ করছে।

প্রশাসন ক্যাডারে ১৯৮২ সালের তুলনায় ধীরে ধীরে নারীর অংশগ্রহণ/ প্রতিনিধিত্ব বাড়লেও উচ্চ পর্যাযে নারীর মোট প্রতিনিধিত্ব পুরুষের মোট প্রতিনিধিত্ব এর তুলনায় এখনও অনেক কম। জুনিয়র পর্যায়ে নারীর অংশগ্রহণপুরুষের অংশগ্রহণের তুলনায় অনেক বেশি হলেও উচ্চ পর্যায়ে তথা সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় এখনও নারীর প্রতিনিধিত্ব পুরুষের তুলনায় অনেক কম। তাই সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় নারীর প্রতিনিধিত্ব বাড়ানো প্রয়োজন। অপরদিকে, প্রশাসন ক্যাডারে কর্মরত মোট নারীর মধ্যে চট্টগ্রামের নারীদের বিভিন্ন পর্যায়ে/পদে প্রতিনিধিত্বের হার অনেকটা কম। সেটি কিভাবে বাড়ানো যায়তাও বিবেচনায় আনা প্রয়োজন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের সদর দপ্তর নিউইয়র্ক আয়োজিত ‘ফোর্থ ওয়ার্ল্ড কনফারেন্স অন উইমেন’ এর ২৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর ভার্চুয়াল বৈঠকে বলেছেন, ‘আমি ২০৪১ সাল নাগাদ কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ ৫০ ভাগ উন্নীত করার অঙ্গীকার করতে চাই’। প্রধানমন্ত্রীর এই অঙ্গীকারটি ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন হবেএ প্রত্যাশা করছি।

লেখক : সরকারি কর্মকর্তা, অর্থনীতিবিদ, গবেষক ও কলামিস্ট

পূর্ববর্তী নিবন্ধপুকুরে ডুবে দুই বোনের মৃত্যু
পরবর্তী নিবন্ধআন্তর্জাতিক নারী দিবস কাল