১৪ বছর আগে পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহে ৫৭ সেনা কর্মকর্তা হত্যাকাণ্ডের তদন্ত সুষ্ঠু হয়নি বলে দাবি করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, যে হত্যাকাণ্ডের দায়ে বিএনপি নেতা নাসিরউদ্দিন পিন্টুর সাজা হয়েছিল। খবর বিডিনিউজের।
রক্তাক্ত সেই বিদ্রোহের বার্ষিকীতে গতকাল ঢাকার বনানী সেনা কবরস্থানে নিহতদের স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা জানানোর পর এই দাবি করেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমরা মনে করি যে, এই ঘটনার যেভাবে তদন্ত হওয়ার দরকার ছিল, যেভাবে সুষ্ঠু তদন্তের মধ্য দিয়ে প্রকৃত অপরাধীদেরকে এবং এর পেছনে যারা ছিলেন তাদেরকে বের করে নিয়ে আসার যে তদন্ত প্রক্রিয়া হওয়া উচিৎ ছিল, সেটা দুর্ভাগ্যজনকভাবে সংঘটিত হয়নি। আমরা পত্র–পত্রিকায় দেখেছি যে, সেনাবাহিনী একটি তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করেছিল, সেটার পূর্ণাঙ্গ চেহারা দেশবাসী জানতে পারেনি। পরবর্তীকালে যে বিচারের ব্যবস্থা হয়েছে, সেই বিচারের ব্যবস্থায় আমরা দেখেছি– দুই বিষয়ে বিচার হয়েছে। সাজা হয়েছে কিছু মানুষের, কিছু মানুষের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে, কিছু মানুষকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ৭ হাজারের মতো সৈনিক যারা অনেকে দাবি করেন যে, তারা সম্পূর্ণভাবে নির্দোষ। এখন পর্যন্ত মামলাটার শুনানি শেষ করা হয়নি।
সেনাবাহিনীর মনোবল ভাঙার উদ্দেশে পিলখানায় সেনা কর্মকর্তাদের পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছিল বলে দাবি করেন বিএনপি মহাসচিব ফখরুল। তিনি বলেন, ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাকে অত্যন্ত নৃশংসভাবে তাদের পরিবার–পরিজনসহ হত্যা করা হয় এবং একটা ভয়াবহ নৃশংস ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করা হয়। এটা একটা চক্রান্ত ছিল দেশের স্বাধীনতা–সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে, আমাদের গর্বিত সেনাবাহিনীর মনোবলকে ভেঙে ফেলার জন্য। এই ঘটনার মধ্য দিয়ে যে প্রচেষ্টাটা চালানো হয়েছে, উদ্দেশ্য ছিল মূলত আমাদের যে গর্ব সেনাবাহিনী, তার মনোবলকে ভেঙে দেওয়া। আমাদের স্বাধীনতা–সার্বভৌমত্বকে রক্ষার জন্য যারা তাদের প্রাণ উৎসর্গ করেন, যারা শপথ নিয়েছেন তাদেরকে এভাবে সম্পূর্ণ নৃশংসভাবে, অন্যায়ভাবে, বেআইনিভাবে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা, এটা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের স্বাধীনতা–সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে একটা ষড়যন্ত্র ছিল।
ফখরুল বলেন, আমি কিছুদিন আগে কারাগারে ছিলাম। সেখানে দেখেছি যে, অনেক প্রাক্তন বিডিআরের সদস্য যাদেরকে এই মামলার সাথে সম্পৃক্ত করা হয়েছে তারা ১৩/১৪ বছর ধরে সেখানে মানবেতর জীবনযাপন করছে। তাদের পরিবার নষ্ট হয়ে গেছে, তাদের সমস্ত ভবিষ্যত নষ্ট হয়ে গেছে। আমরা এই দাবি করব, যে অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে আনা হয়েছে, জুডিশিয়ারি সমস্যাগুলো অতিদ্রুত সম্পাদন করে এদের একটা ব্যবস্থা করা উচিৎ, তাদের মুক্তি দেওয়া উচিত। এই বিষয়গুলো দেখে এই মানুষগুলোকে তাদের পরিবার পরিজনের কাছে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার একটা সুযোগ সৃষ্টি করা হোক।
সকাল সাড়ে ১০টায় বনানীর সামরিক কবরস্থানে বিএনপি মহাসচিবের নেতৃত্বে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন হয়। কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, সাবেক বিমানবাহিনী প্রধান অবসরপ্রাপ্ত এয়ার ভাইস মার্শাল ফখরুল আজম, অবসরপ্রাপ্ত রিয়ার এডমিরাল মুস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।












