চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে র্যাব-৭ এর অভিযানে অস্ত্রসহ ৪ জলদস্যুকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এ সময় তাদের কাছ থেকে ৪টি দেশীয় তৈরি আগ্নেয়াস্ত্র, গোলাবারুদ, ২টি হাতুড়ি, ৩টি দা, ১টি কিরিচ, ২টি শাবল, ডাকাতিকৃত জাল এবং দস্যুতাবৃত্তিতে ব্যবহৃত ট্রলার জব্দ করা হয়।
গ্রেফতারকৃত জলদস্যুরা হলো বাঁশখালীর গণ্ডামারার পশ্চিম বড়ঘোনার আলী আহম্মেদের ছেলে মো. কাইছার ওরফে কালু (২৫), বড়ঘোনার মৃত আহম্মেদ সাবা এর ছেলে মো. জাহিদ (২৫), মৃত আলী চাঁনের ছেলে মো. সেলিম (৪০) ও তার ছেলে মো. ইকবাল হোসেন (১৫)।
র্যাব সদস্যরা গতকাল মঙ্গলবার জলদস্যুদের গ্রেফতারে বাঁশখালী উপজেলার গণ্ডামারা, বড়ঘোনা, বাংলাবাজার ও শীলকূপে অভিযান চালায়।
গ্রেফতার জলদস্যুরা ট্রলার ডাকাতি, মারধর ও জেলে নিখোঁজের ঘটনায় জড়িত বলে র্যাব সূত্রে জানা যায়।
আজ বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে চট্টগ্রাম নগরীর চান্দগাঁও ক্যাম্পে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৭ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মাহবুব আলম এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, “গত ১৭ ফেব্রুয়ারি বরগুনার ১৮ জন জেলে একটি ট্রলার নিয়ে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে যান। ওইদিন দিবাগত রাতে পাথরঘাটা থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্ব দিকে একটি ট্রলার থেকে জলদস্যুরা তাদের ট্রলারে ফাঁকা গুলি ছুড়তে থাকে। ভয়ে ট্রলারে থাকা জেলেরা চিৎকার শুরু করে। জলদস্যুরা দ্রুত জেলেদের ট্রলারে উঠে ১৮ জনকে কুপিয়ে আহত করে। জলদস্যুদের কবল থেকে বাঁচতে ৯ জেলে সাগরে ঝাঁপ দেয়। এ সময় জলদস্যুরা ট্রলার থেকে সবকিছু লুট করে পালিয়ে যায়।”
এরপর অন্য একটি ট্রলারের জেলেরা আহতাবস্থায় ৯ জনকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। তাদের মধ্যে গুরুতর আহত দু’জনকে শনিবার রাতে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
গত সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারি) সমুদ্রে ঝাঁপ দেয়া ৯ জেলের মধ্যে ৪ জনকে সাগর থেকে উদ্ধার করে পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করানো হয়। বিকেলে সাড়ে ৩টায় তাদের মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়। এখনো নিখোঁজ রয়েছেন ৫ জেলে। ঘটনাটি সারাদেশে ব্যাপক চাঞ্চল্য ও আলোড়ন সৃষ্টি করে।
তিনি আরও বলেন, “এ ঘটনার সাথে জড়িতদের ধরতে র্যাব-৭, র্যাব-৮, র্যাব-১৫ এবং র্যাব ফোর্সেস সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা যৌথভাবে কাজ শুরু করে। এক পর্যায়ে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানা যায়, ট্রলারে ডাকাতির ঘটনায় জড়িতরা বাঁশখালীতে অবস্থান করছে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল দিবাগত রাতে বাঁশখালী উপজেলার গণ্ডামারা, বড়ঘোনা, বাংলাবাজার, শীলকূপ এবং তার আশেপাশের এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৪ জলদস্যুকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাদের দেখানো জায়গা থেকে ৪টি আগ্নেয়াস্ত্র, গোলাবারুদ, ২টি হাতুড়ি, ৩টি দা, ১টি কিরিচ, ২টি শাবল, ডাকাতিকৃত জাল ও দস্যুতাবৃত্তিতে ব্যবহৃত বোট উদ্ধার করা হয়। এছাড়া গ্রেফতার কালুর কাছ থেকে একটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয় যা ডাকাতি হওয়া ট্রলারের এক জেলের।”
র্যাবের অধিনায়ক লে. কর্নেল মাহবুব আলম আরও বলেন, “তারা আগে বাঁশখালী, পেকুয়া, মগনামা এবং কুতুবদিয়া এলাকার উপকূলীয় অঞ্চলে ডাকাতি করত। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অধিকতর তৎপরতার কারণে তারা ওই এলাকা ছেড়ে বরিশাল, বরগুনা এবং খুলনা উপকূলীয় অঞ্চলে ডাকাতি শুরু করেছে। এ অঞ্চলে ডাকাতি করে ডাকাতির মালামাল কক্সবাজার নিয়ে বিক্রি করত। বরগুনার পাথরঘাটা এলাকার ট্রলার থেকে তারা ২০ লাখ টাকার মালামাল লুট করে।”