ছুটির দিনে সাত হাজার পর্যটক!

রিসোর্ট-কটেজে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ

টেকনাফ প্রতিনিধি | শনিবার , ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ৪:৫৮ পূর্বাহ্ণ

সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে সেন্টমার্টিন হাজারো পর্যটকে গিজগিজ করে। চট্টগ্রামকক্সবাজার শহরসহ টেকনাফের দমদমিয়ার জেটিঘাট দিয়ে দৈনিক ৯টি জাহাজ এবং কায়ুকখালী (কেকে) খালের ঘাট দিয়ে অর্ধশতাধিক স্পিডবোট ও কাঠের ট্রলারে যাচ্ছেন অন্তত ৪/৫ হাজার পর্যটক। সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার ও শনিবার এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৬ থেকে ৭ হাজারে।

 

অর্ধেকের বেশি পর্যটক রাতযাপনের জন্য উঠেন দ্বীপের আড়াই শতাধিক হোটেলরিসোর্টকটেজে। পর্যটকদের অভিযোগ, মানুষের অত্যধিক চাপের অজুহাতে রিসোর্ট ও কটেজ মালিকেরা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন। খাওয়ার হোটেলগুলোতেও বেশ দাম গুণতে হচ্ছে।

গতকাল শুক্রবার দুপুর ১২টায় সেন্টমার্টিনের পূর্বউত্তর দিকের একমাত্র জেটিতে গিয়ে দেখা গেছে, চট্টগ্রামকক্সবাজার, টেকনাফ থেকে পর্যটক নিয়ে ছেড়ে আসা জাহাজগুলো ভিড়তে শুরু করেছে। সাড়ে ১২টার মধ্যে একে একে ভিড়েছে ৯টি জাহাজ। প্রতিটি জাহাজ থেকে নেমেছেন ৩৫০ থেকে ৬৫০ পর্যটক।

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সালাহউদ্দিন জানান, শুক্রবার অন্তত সাত হাজার পর্যটক এসেছেন। দুইতৃতীয়াংশ পর্যটক বিকেল তিনটার সময় জাহাজে আবার টেকনাফ ফিরে গেছেন। বাকিরা রাতযাপনের জন্য সেন্টমার্টিনে রয়ে গেছেন।

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, বৃহস্পতি, শুক্রবার ও শনিবার পর্যটকের সংখ্যা অন্যান্য দিনের তুলনায় বেশি। অন্যান্য দিন আসেন তিন থেকে চার হাজারের মত পর্যটক। বেশির ভাগই সকালে এসে বিকেলে ফিরে যান।

হোটেলকক্ষের অতিরিক্ত ভাড়া এবং রেস্তোরাঁগুলোর খাবারের উচ্চ দাম আদায় প্রসঙ্গে ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, এখানকার বেশিরভাগ হোটেলরেস্তোরাঁ মালিক ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ী। তারাই এসব নিয়ন্ত্রণ করেন।

এ ছাড়া পর্যটন মৌসুমে দ্বীপের মাছ, মাংস, তরিতরকারিসহ নিত্য প্রয়োজনীয় সবকিছু আনতে হয় টেকনাফকক্সবাজার থেকে। ট্রলারে বোঝাই করে নিত্যপ্রয়োজনীয় মালামাল আনতে অতিরিক্ত খরচ হয়। এ জন্য খাবারের দাম কিছুটা বেশি।

দেখা গেছে, দ্বীপের যেখানেসেখানে গড়ে ওঠা কোনো হোটেলে মূল্য তালিকা নেই। রেস্তোরাঁগুলোতে খাবারের দামের তালিকা ঝুলানো নেই। ভাড়া ও খাবারের মূল্য আদায় হয় ইচ্ছামতো। গলাচিপা ও দক্ষিণপাড়ায় নির্মিত কয়েকটি পরিবেশবান্ধব রিসোর্টের ভাড়া আদায় হচ্ছে ৯ থেকে ১৮ হাজার টাকা।

নির্জন এলাকার রিসোর্টগুলোতে তরুণতরুণীদের ভিড় বেশি। হোটেল ভাড়া ও রেস্তোরাঁর খাবার দাম নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের তৎপরতা নেই।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘সেন্টমার্টিনে মানুষ ভ্রমণ করতে আসে। তারা যাতে নিরাপদ ও আনন্দময় ভ্রমণ করতে পারে সেই লক্ষ্যে কাজ করে থাকে উপজেলা প্রশাসন। হোটেল ভাড়া বা খাবারের উচ্চ মূল্য ইত্যাদি বিষয়ে কেউ কোনো অভিযোগ করে থাকলে তা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

বিশেষ করে দুপুর ১২ টায় যখন দ্বীপে পর্যটকের আগমন ঘটে এবং বিকেল ৩ টার সময় যখন পর্যটকরা ফিরে যেতে থাকেন ওই সময়ে সেন্টমার্টিন জেটিঘাট থেকে বাজার হয়ে বিএন ইসলামিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ পর্যন্ত দ্বীপের প্রধান সড়কটি জুড়ে পর্যটকের গিজগিজ অবস্থা বিরাজ করে। পর্যটকদের এদিকসেদিক নিয়ে যাওয়ার জন্য এই সড়কে রয়েছে শত শত ব্যাটারিচালিত টমটম।

দ্বীপের পূর্বউত্তর ও পশ্চিম দিকের সৈকতেও পর্যটকের ভিড়। দ্বীপের অলিগলি দিয়ে হাঁটছেন অনেক পর্যটক। অনেকে দক্ষিণ দিকে গলাচিপা হয়ে ছেঁড়াদ্বীপও যাচ্ছেন টমটম ও পায়ে হেঁটে।

দ্বীপের পশ্চিম পাশের সৈকতঘেঁষে তৈরি হয়েছে তিনতলার হোটেল দ্য আটলান্টিক। হোটেলে কক্ষ আছে ৫২টি। সবকটি পর্যটকে ভরপুর। হোটেলের ব্যবস্থাপক আমজাদ হোসেন বলেন, প্রতিটা কক্ষের ভাড়া ৭ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা। অতিরিক্ত ভাড়া আদায় প্রসঙ্গে তিনি জানান, সব সময় এ রকম ভাড়াই তাঁরা আদায় করেন।

দ্বীপের অত্যাধুনিক তিনতলার হোটেল ব্লু মেরিনে কক্ষ আছে ৪১টি। সব কটিতে অতিথি আছেন। ভাড়া ৬ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা। হোটেলের ব্যবস্থাপক জাকির হোসেন বলেন, অনলাইনে কক্ষভাড়া বুকিং করা হয়। ভাড়া দেখেই পর্যটকেরা হোটেল ওঠেন। এ কারণে কেউ অভিযোগ তোলেন না। বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার অতিথির চাপ থাকে বেশি।

পাশের ফ্যান্টাসি কিংডম, প্রাসাদ প্যারাডাইস, সীমানা পেরিয়ে, হোটেল অবকাশ, কিংসুক, ডিমাস প্যারাডাইস, নীল দিগন্তসহ শতাধিক হোটেলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেখানেও অতিথিতে ঠাঁসা। কক্ষ খালি নেই। ভাড়া আদায় হচ্ছে ৩ হাজার থেকে ৯ হাজার টাকা।

কক্সবাজার থেকে পিকনিকে গিয়ে দারুণ দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে কক্সবাজার আইনজীবী সমিতির সদস্যদের। তাদের একজন এডভোকেট আব্দুস শুক্কুর বলেন, ‘যে হোটেলে আমাদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে সেখানে খাবারের মান যেমন নিম্ন, থাকার অবস্থাও করুন। এ যেন গলার কাটা।’

টেকনাফের ব্যবসায়ী জাফর আলম স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে ওঠেন উত্তর সৈকতের একটি কটেজে। কক্ষভাড়া ৪ হাজার টাকা গুণতে হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, কক্সবাজার কিংবা ঢাকার পাঁচ তারকা হোটেলের ভাড়াও এত না। পাশে সমুদ্র আছে বলেই পর্যটকেরা অতিরিক্ত ভাড়া দিয়েও রাত কাটাচ্ছেন ।

সেন্টমার্টিন হোটেল রিসোর্ট মালিক সমিতির সভাপতি আবদুর রহমান বলেন, গত একমাস ধরে টেকনাফ থেকে জাহাজ চলাচল শুরু হাওয়ায় পর থেকে সেন্টমার্টিন ভ্রমণের সুযোগ পাচ্ছেন পর্যটকেরা। এর আগে কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম থেকে একাধিক জাহাজে কিছু পর্যটক আসতেন। আগামী মার্চের মাঝামাঝি সময়ে মৌসুম শেষ হয়ে যাবে। এ কারণে হোটেলভাড়া কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ‘অলৌকিক’
পরবর্তী নিবন্ধমুরগি এখন ২০৫ টাকা