গৌরীশঙ্কর ভট্টাচার্য (১৮৩৬–১৮৫৯)। সাংবাদিক, সম্পাদক এবং লেখক। তিনি ১৮৩৬ সালে ভারতের প্রথম রাজনৈতিক সংগঠন বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং কিছুদিন তার সভাপতি ছিলেন। তিনি ১৭৯৯ সালে পশ্চিমবঙ্গের নৈহাটিতে জন্মগ্রহণ করেন। সঠিক জন্মতারিখ জানা যায় নি। তার পিতার নাম জগন্নাথ ভট্টাচার্য। তার খর্ব আকৃতির জন্য তিনি গুড়গুড়ে ভট্টাচার্য নামে পরিচিত ছিলেন। ছোটবেলায় বাপ মা মারা যাওয়ার পর তিনি নৈহাটিতে নীলমণি ন্যায়পঞ্চাননের চতুষ্পাঠীতে শিক্ষালাভ করেছিলেন। তিনি সংস্কৃতে বেশ পাণ্ডিত্য অর্জন করেন। বাংলাভাষা ছিলো অন্তপ্রাণ। সাংবাদিকতার মধ্যদিয়ে তিনি তার কর্মজীবন শুরু করেন। কলকাতায় আসার পর অল্প সময়ের মধ্যে তিনি সাংবাদিক হিসাবে প্রতিষ্ঠা পান। পত্রিকা সম্পাদনায় ও তিনি বেশ কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন। ইয়ং বেঙ্গলের মুখপত্র জ্ঞানান্বেষণ পত্রিকার কার্যত সম্পাদক, সম্বাদ ভাস্কর এবং সম্বাদ রসরাজ পত্রিকার পরিচালক ও হিন্দুরত্ন কমলাকর পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। তিনি সম্বাদ রসরাজ পত্রিকা দ্বারা ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের পাষণ্ড পীড়ন পত্রিকার সঙ্গে তর্কযুদ্ধে লিপ্ত হতেন। পত্রিকা সম্পাদনা করে তিনি অসাধারণ খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। তাঁর বেশ কিছু রচনায় রুচিহীন শব্দের প্রয়োগ দেখা যায়। গৌরীশঙ্কর ভট্টাচার্য তীব্র শ্লেষাত্মক রসরচনার মাধ্যমে স্বজাতীয় ইংরেজ নকলনবিস এবং বিদেশী দুর্নীতিপরায়ন শাসকদের আক্রমণ করতেন। এ অরুচিপূর্ণ রচনা এবং ব্যক্তিগত আক্রমণাত্ম নিবন্ধ প্রকাশের জন্য তার অর্থদণ্ড ও একাধিকবার কারাবাসও ঘটেছিল। তিনি রাজা রামমোহন রায়ের ব্রাহ্মসভা ছেড়ে রাধাকান্ত দেবের ধর্মসভায় যোগ দিলেও তিনি ছিলেন উদার ও সমাজ সচেতন। তিনি সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে এবং বিধবা–বিবাহের পক্ষে লেখালেখি করেছিলেন। তৎকালীন সময়ের আলোড়ন সৃষ্টিকারী ঘটনা দক্ষিণারঞ্জন মুখোপাধ্যায় ও বর্ধমানের বিধবা রাণী বসন্তকুমারীর রেজিস্ট্রি বিবাহে সাক্ষী ছিলেন। তার রচিত ও সম্পাদিত বইয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য – ভগবদগীতা, জ্ঞানপ্রদীপ, ভূগোলসার, নীতিরত্ন, কাশীরাম দাসের মহাভারত প্রভৃতি। ১৮৫৯ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন।