রাঙ্গুনিয়ায় পাহাড় কেটে শতবর্ষী একটি ছড়া ভরাট করা হয়েছে। গাছ–বাঁশ কেটে বনভূমি ধ্বংসের অভিযোগ উঠেছে এক ইউপি মেম্বারের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ ভূমি দখলের উদ্দেশ্যেই ছড়াটি ভরাট করা হয়েছে। উপজেলার রাজানগর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য মোহাম্মদ সাহেদের বিরুদ্ধে লিখিতভাবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবরে এসব অভিযোগ করেন একই এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ জসিম।
অভিযোগে জানা যায়, রাজানগর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড এলাকায় শতবছর ধরে ইছামতী খালের শাখা ছড়াটি প্রবাহিত হয়ে আসছে। ছড়াটির পশ্চিমে মেঘাছড়ি ও পূর্বে ভরণছড়ি মৌজা। এর মধ্যে মেঘাছড়ি মৌজায় ১৯৮৬ সাল থেকে দুই একর কৃষি ও পাহাড়ি ভূমিতে ক্রয় সূত্রে ভোগ দখলে রয়েছেন পাশের ৫নং ওয়ার্ড ঠান্ডাছড়ি গ্রামের বাসিন্দা আহমদ হোসেনের পরিবার। এ জমিতে গাছের বাগান ও কৃষি কাজ করে আসছিলেন তারা। তাদের জায়গার পাশে শত বছর ধরে প্রবাহিত একটি ছড়া রয়েছে। এর পূর্ব পাশে বর্তমান ইউপি মেম্বার মোহাম্মদ সাহেদের মালিকানাধীন কিছু ভূমি রয়েছে। সমপ্রতি অভিযুক্ত সাহেদ ছড়ার পশ্চিম পাশের আহমদ হোসেনের মালিকানাধীন ভূমি দখলে নিতে এস্কেভেটর দিয়ে পাহাড় কেটে সমান করে সেই মাটি দিয়ে শতবর্ষী ছড়াটি ভরাট করে ফেলেন। কিছু মাটি পাশ্ববর্তী ইটভাটায় বিক্রি করে দেয়া হয়। এজন্য পাহাড়ে তার অন্তত দুইশ গাছ এবং বাঁশ কেটে ফেলেন ওই ইউপি সদস্য। এমনকি ছড়াটির মুখ বন্ধ করে পানির গতিপথ ঘুরিয়ে দিয়েছেন।
এই ব্যাপারে অভিযোগকারী মোহাম্মদ জসিম বলেন, গত ১৮ জানুয়ারি তার বাবা মারা যান। বাবা মারা যাওয়ার সুযোগে ইউপি মেম্বার সাহেদ ছড়া ভরাট করে জায়গা দখলে নিতে চাইছেন। খবর পেয়ে মাটি কাটায় বাঁধা দিতে গেলে তাকে দেশীয় অস্ত্রের মুখে তাড়িয়ে দেন। পরবর্তীতে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সামশুল আলম তালুকদারকে বিষয়টি জানালে চেয়ারম্যান ৫নং ওয়ার্ড ইউপি মেম্বার মো. বারেকের মাধ্যমে কাজটি বন্ধ করে দেন।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত ইউপি সদস্য মোহাম্মদ সাহেদ তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, কারো জায়গা দখল করা তার উদ্দেশ্য ছিল না। জনগণের স্বার্থে ছড়াটি ভরাট করে অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেয়া হয়েছে। মাটি কেটে সেই মাটি দিয়ে জনগণের চলাচলের জন্য সড়ক ভরাট করেছেন বলে দাবি করেন তিনি।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, রাজানগরের মেঘাছড়ি এলাকায় একটি পাহাড় কেটে সমতল ভূমিতে পরিণত করা হয়েছে। এর মাঝ বরাবর প্রবাহিত একটি ছড়াও ভরাট করে মুখ বন্ধ করে অন্যদিকে পানির গতিপথ ঘুরিয়ে দেয়া হয়। সেখানে কেটে ফেলা গাছ এবং বাঁশের কিছু নমুনাও রয়েছে। চলাচলের রাস্তা সেখানে দেখা যায়নি।
এসময় আহমদ হোসেন নামে পাশের একজন কৃষক ন্যাড়া ভূমিটি পাহাড় এবং সেখানে গাছ ছিল বলে সত্যতা নিশ্চিত করেন। জায়গাটি ইউপি সদস্য সাহেদ কেটে সমান করে ফেলেছেন বলে তিনি জানান।
এই ব্যাপারে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার শামসুল আলম তালুকদার বলেন, ইউপি মেম্বার হোক বা অন্য কেউ হোক, অন্যায় করলে কেউ পার পাবে না।
জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আতাউল গণি ওসমানী বলেন, বিয়য়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।