গ্রেপ্তার এড়াতে কখনো সবুজ, কখনো নারায়ণ

ধর্ষণ মামলা

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ২৭ জানুয়ারি, ২০২৩ at ৯:০৪ পূর্বাহ্ণ

এ যেন অনেকটা ‘আয়নাবাজি’ চলচ্চিত্রের কাহিনী। কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের সুপন চন্দ্র দেবনাথ চট্টগ্রামে এসে মো. সবুজ নাম ধারণ করেন। আবার চট্টগ্রাম থেকে পালিয়ে নারায়ণ নাম ধারণ করে এক স্বর্ণকারের দোকানে কারিগরের চাকরিও করেন। পরিবারের সঙ্গে ঝগড়া করে নামঠিকানা এমনকি ধর্মীয় পরিচয় গোপন করে এভাবেই নিজেকে লুকিয়ে রেখেছিলেন তিনি।

শেষ পর্যন্ত খুলশী থানা পুলিশের জালে ধরা পড়তেই হয় তাকে। গত বুধবার কুমিল্লা সদরের ছাতিপট্টি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে আজাদীকে নিশ্চিত করেছেন খুলশী থানার ওসি সন্তোষ কুমার চাকমা।

ওসি সন্তোষ চাকমা জানান, ২০২০ সালের ২৯ জুন নগরীর লালখান বাজারে ১৪ বছরের এক কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে খুলশী থানায় মামলা দায়ের করেছিলেন আক্রান্তের মা। ওই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে ছয় মাস কারাবাস করেন তিনি। তার বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছিল মো. সবুজ নামেই। পরে জামিন পেয়ে গা ঢাকা দেন।

ধর্ষণের সেই ঘটনায় ২০২২ সালের ১৬ অক্টোবর চট্টগ্রামের নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল৬ তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। সম্প্রতি আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানার পর পুলিশ অভিযানে নেমে জানতে পারে তার নামঠিকানাধর্ম বদলের কাহিনী। তিনি জানান, কুমিল্লায় একটি স্বর্ণকারের দোকানে কাজ নিয়েছিলেন সুপন ওরফে সবুজ। তার অবস্থান শনাক্তের পর বাদীকে নিয়ে গিয়ে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত এ যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়।

তখন জানা যায়, কুমিল্লা সদরে স্বর্ণকারের দোকানে কাজ নেওয়ার সময় নিজের নাম পুনরায় পরিবর্তন করে ‘নারায়ণ’ নাম ধারণ করেছিলেন তিনি। শুধু তাই নয়, নিজের ঠিকানাও গোপন করেছিলেন।

ওসি জানান, পরিবারের সঙ্গে ঝগড়া করে চট্টগ্রামে চলে যাওয়ার আগে সুপন নোয়াখালী সদরে একটি স্বর্ণের দোকানে কাজ করতেন। চট্টগ্রাম নগরীতে করতেন দিনমজুরের কাজ; থাকতেন লালখান বাজারের টাংকির পাহাড়ে।

সেখানে নামঠিকানা ও ধর্মীয় পরিচয় গোপন রেখে নিজের পরিচয় দিয়েছিলেন মো. সবুজ, বাবার নাম মো.আক্কাস, মায়ের নাম শেফালী বেগম এবং ঠিকানা ব্যবহার করেন ফেনীর দাগনভূঁঞা উপজেলা। ধর্ষণের ঘটনার সময় তাকে এ নামেই জানতেন প্রতিবেশীরা।

আদালতের পরোয়ানা আসার পর ফেনীর ঠিকানায় যোগাযোগ করা হলে স্থানীয় পুলিশ সেটা ভুল বলে জানায়। এরপর খুলশী থানা পুলিশের একটি দল সবুজ নামেই তাকে গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু করে। তবে বর্ণিত ঠিকানায় এই নামে কাউকে পাওয়া যায়নি। তখন আমরা তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় আসামির অবস্থান শনাক্ত করি। মামলার বাদীকে নিয়ে কুমিল্লায় সেই অবস্থানে গিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করি।

বাদী নিজে তাকে শনাক্ত করেন। তিনি বলেন, বুধবার গ্রেপ্তারের সময় প্রথমে নিজের নাম নারায়ণ বলেই দাবি করেন সুপন ওরফে সবুজ। পরে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে নিজের আসল নাম ও ঠিকানা জানান এবং পরিচয়পত্র দেখান। তাকে চট্টগ্রামে আনার পর বৃহস্পতিবার নামঠিকানা ও ধর্ম উল্লেখ করে আদালতে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে বলে জানান ওসি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআবদুল হাকিম মাইজভাণ্ডারী ছিলেন বিনয়ের প্রতীক ও ত্যাগের দৃষ্টান্ত
পরবর্তী নিবন্ধআবাসন শিল্পকে এগিয়ে নিতে এপিক বিরাট ভূমিকা রাখছে : মেয়র