নদী রক্ষায় নাগরিক সমাজকে ওয়াচ ডগের ভূমিকা পালন করার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি– বেলা’র প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। এর মধ্য দিয়ে প্রশাসনের উপর ইতিবাচক চাপ সৃষ্টি হবে বলেও মনে করেন তিনি। বলেন, প্রশাসনের কেউ কেউ আমাদের আন্দোলনকে রোমান্টিক দুঃখবোধ বলে ঠাট্টা করেন। কিন্তু আমাদের লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে হবে। সত্য ও ন্যায়ের জয় হলে আমাদের জয় হবেই। এটা মনে রাখতে হবে। এ সময় তিনি নদী রক্ষায় কমিউনিটি লেবেলে রিচার্স ও মনিটরিং বৃদ্ধি করা দরকার বলেও মন্তব্য করেন।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় নদী বিষয়ক এক কর্মশালায় এসব কথা বলেন বেলা’র প্রধান নির্বাহী। গতকাল বুধবার নগরের একটি রেস্তোরাঁয় এ কর্মশালার আয়োজন করে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)। এতে দেশের অর্থনীতির প্রাণ কর্ণফুলী নদী ছাড়াও হালদা নদী, ফেনী নদী, কক্সবাজারের বাঁকখালী, মাতামুহুরীসহ চট্টগ্রাম বিভাগের প্রধান প্রধান নদীগুলোর ভয়াবহ দখল–দূষণ এবং সমস্যা–সম্ভাবনা নিয়ে ভিডিওচিত্র প্রকাশ করা হয়।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, নদী জীবন্ত সত্তা। নদীকে বাঁচাতে হবে। যে নদী ধ্বংস করে, সে জাতীয় স্বার্থকে ক্ষুণ্ন করছে। আমরা যদি নদী বাঁচাতে কথা না বলতাম, তাহলে অনেক আগেই বুড়িগঙ্গা আবাসিক এলাকা হয়ে যেত। বাঁকখালীও হয়তো আরও ১০ বছর আগে শেষ হয়ে যেত। তাই সোচ্চার হতে হবে।
তিনি বলেন, দখল–দূষণের কারণে দেশের কোনো নদী ভালো নেই। দখলকারীদের মীর জাফরের পুরস্কার দেওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি। বেলা’র প্রধান নির্বাহী বলেন, দখল–দূষণে নদীর রূপ হারিয়ে গেছে। উন্নয়নের নামে নদী মেরে ফেলা হচ্ছে। তারপরও হতাশা, ক্ষোভ, রাগ ঝেড়ে তরুণদের এগিয়ে আসতে হবে। আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে দমানোর অপকৌশল চালানো হয়। ভয়–ভীতি উপেক্ষা করে দেশের স্বার্থে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি।
তিনি বলেন, কঙবাজারের বাঁকখালী নদী দখল–দূষণে প্রাণহীন হয়ে পড়েছে। আদালতের নির্দেশনা উপেক্ষা করে পৌরসভার আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত করা হয়েছে। প্যারাবন ধ্বংস করে নদীর জায়গা দখল করা হচ্ছে। মনে হচ্ছে কঙবাজারে কোনো প্রশাসন নেই। একইভাবে সাঙ্গু নদীর পরিবেশ–প্রতিবেশ ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে।
কর্মশালায় কর্ণফুলী নদীসহ বিভিন্ন নদী বিপর্যয়ের চিত্র তুলে ধরেন সাংবাদিক আলীউর রহমান। হালদা নদীর দখল–দূষণ, সমস্যা ও সম্ভাবনার চিত্র তুলে ধরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মঞ্জুরুল কিবরিয়া। সাঙ্গু নদীর চিত্র তুলে ধরেন সিনিয়র সাংবাদিক জসীম উদ্দিন চৌধুরী সবুজ। বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. শফিক হায়দার চৌধুরী ও পরিকল্পিত ফোরাম চট্টগ্রাম এর সহ–সভাপতি প্রকৌশলী সুভাষ চন্দ্র বড়ুয়া। ড. মঞ্জুরুল কিবরিয়া বলেন, স্থানীয় মানুষ না দাঁড়ালে বাইরে থেকে এসে নদী রক্ষা করা যাবে না।