মনোযোগ একটি মানসিক প্রক্রিয়া। মানুষের সব আচরণই পরিবর্তিত পরিবেশের সঙ্গে সংগতি বিধানের প্রচেষ্টা মাত্র। শিশুর ক্ষেত্রেও তাই। কোনো কিছু শিখতে হলে বিষয়টির প্রতি মনোযোগের প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি। পাঠ্য বিষয়টির প্রতি শিশু ঠিক মতো মনোযোগ দিতে না পারলে তা শেখা সম্ভব হয় না। শিশুকালে শিশুর মনোযোগ ইচ্ছা নিরপেক্ষ। জোর করে কোনো কিছুতে মনোযোগ দেয়া শিশুর পক্ষে সম্ভব নয়। এই জন্য ছোট বয়সে শিশুকে এমন বিষয় বা তথ্য শেখানো উচিৎ নয় যাতে জোর করে তাকে মনোযোগ দিতে হবে। রঙের প্রতি শিশুর মনোযোগ আকৃষ্ট হয়। তাই রঙচঙে ছবি ওয়ালা বই দিয়ে শিশুর মনোযোগ আকর্ষণ করে শিক্ষা দেয়া উচিৎ।
শিশুর শিক্ষাকে আগ্রহভিত্তিক করতে হলে তাকে আকর্ষণীয় করে তুলতে হবে। তবে এর অর্থ এই নয় যে, শিক্ষণীয় বিষয়ের যা কঠিন তা বাদ দিতে হবে, এবং যা সহজ ও চিত্রা কর্ষক তা দিয়ে শিক্ষাসূচি সাজাতে হবে। শিক্ষাকে সার্থক করে তুলতে হলে শিক্ষণীয় বিষয়ের প্রতি শিক্ষার্থীর কতটুকু আগ্রহ আছে তা প্রথমে দেখতে হবে। যে শিক্ষায় শিশু আগ্রহ বোধ করে না সে শিক্ষা ব্যর্থ হতে বাধ্য। এই কারণেই শিক্ষাকে আগ্রহ ভিত্তিক করে গড়ে তোলা আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থার প্রধান কর্মসূচি।
আবার আগ্রহ এবং মনোযোগ একই সূত্রে গাথা। যা ভিতরে আগ্রহ, বাইরে তা মনোযোগ। আগ্রহ হচ্ছে শিক্ষা ব্যবস্থার প্রকৃত পথ প্রদর্শক। যে বিষয়ের প্রতি মনোযোগ দিতে হবে তার প্রতি আন্তরিক আগ্রহ না থাকলে মনোযোগ আসতে পারে না। শিশুর মধ্যে যদি পাঠ গ্রহণের আগ্রহ থাকে তবে সেই পাঠ যতই কঠিন হউক না কেন, তা অতি সহজেই শিশু শিখবে। অবশ্য সেই পাঠ শিশুর মানসিক সামর্থ্যের মধ্যে হওয়া উচিৎ। অনেক সময় দেখা যায়, পাঠে শিশু মনোযোগ দিতে পারছে না, তাকে জোর করে পাঠে মনোযোগ আনতে হয়। আসলে কোনো বিষয় সম্পর্কে জানার আগ্রহ থাকলে তা শেখার জন্য স্বাভাবিকভাবে তার আগ্রহ জন্মাবে। এই ধারণার উপর ভিত্তি করেই শাস্তি ও পুরস্কার দেয়ার প্রথা যুগ যুগ ধরে আমাদের দেশে চলে আসছে। অনেক পিতামাতা বা শিক্ষক মনে করেন শাস্তির ভয়ে বা পুরস্কারের লোভে পাঠের প্রতি শিশুর আগ্রহ জন্মাবে। কিন্তু শাস্তি বা পুরস্কারের সাহায্যে যে আগ্রহ সৃষ্টি করা যায় তা কৃত্রিম, ক্ষণস্থায়ী ও দুর্বল। সেজন্য স্বাভাবিক আগ্রহ সৃষ্টি করতে হলে দেখতে হবে বিষয়টির প্রতি যেন সত্যিকার চাহিদা জন্মায়।
আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থায় শিশুর নানা চাহিদা গুলো ভালো ভাবে বিশ্লেষণ করা হচ্ছে এবং সেই চাহিদার সাথে সামঞ্জস্য রেখে শিক্ষার বিষয়, পদ্ধতি নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। ফলে পাঠ গ্রহণে শিশুর স্বাভাবিক আগ্রহ দেখা দেবে।
লেখক : প্রাক্তন শিক্ষক, সেন্ট মেরিস স্কুল, চট্টগ্রাম।