ইসলামী ব্যাংকে আবার পর্যবেক্ষক বসিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেই সঙ্গে পর্যবেক্ষক বসালো ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকেও।
আজ সোমবার (১২ ডিসেম্বর) ব্যাংক দু’টিতে পর্যবেক্ষক দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক।
তিনি বলেন, “ইসলামী ব্যাংক ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে নতুন করে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।”
ইসলামী ব্যাংকে পর্যবেক্ষক হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালক আবুল কালাম এবং ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংকে মোতাসিম বিল্লাহকে নিযুক্ত করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
কোনো ব্যাংকের পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার আশঙ্কা থাকলে বা খারাপ হয়ে গেলে ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী ওই ব্যাংকে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দিতে পারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
নবনিযুক্ত পর্যবেক্ষকরা এখন বেসরকারি ব্যাংক দু’টির পর্ষদ, নির্বাহী ও নিরীক্ষা কমিটির সভায় অংশ নেবেন। বৈঠকের বিষয়বস্তু জানিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে প্রতিবেদন জমা দেবেন তারা।
ঋণ কেলেঙ্কারির জন্য এখন আলোচিত দু’টি বেসরকারি ব্যাংকই দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত।
ইসলামী ব্যাংকে পর্যবেক্ষক এক দশক আগেই বসিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। দুই বছর আগে সেই পর্যবেক্ষক অবসরে গেলে আর নতুন পর্যবেক্ষক দেওয়া হয়নি।
জঙ্গি অর্থায়নসহ নানা অভিযোগে ২০১০ সালের ডিসেম্বরে মাসে প্রথমবারের মতো ইসলামী ব্যাংকে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। এর কয়েক বছর পর ব্যাংকটির মালিকানায়ও পরিবর্তন আসে।
একটানা ১০ বছর ব্যাংকটিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক (বর্তমানে পরিচালক) পদ মর্যাদার একাধিক কর্মকর্তা পর্যবেক্ষক হিসেবে ছিলেন।
২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে ব্যাংকটিতে পর্যবেক্ষক দেওয়া বন্ধ রাখেন তৎকালীন গভর্নর ফজলে কবির। ব্যাংকটিতে পর্যবেক্ষক দেওয়ার বিপক্ষে তার অবস্থানের খবরও তখন এসেছিল।
কয়েকটি ব্যবসায়ী গ্রুপকে হাজার কোটি টাকা অঙ্কের একাধিক ঋণ দানে অনিয়মের খবরে ফের আলোচনায় এখন ইসলামী ব্যাংক। বিষয়টি আদালতেও গড়িয়েছে।
এ বিষয়ে ঋণ নেওয়া শিল্প গ্রুপটির বক্তব্য জানতে চাওয়ার পাশাপাশি বিতরণকৃত ঋণের বিষয়ে তদন্ত করতে বাংলাদেশ ব্যাংককে নির্দেশ দিয়েছে উচ্চ আদালত।
সেই নির্দেশনার আলোকে ইসলামী ব্যাংকের সাম্প্রতিক সময়ে বিতরণকৃত ঋণসহ একাধিক বিষয় খতিয়ে দেখতে চারটি পরিদর্শন দল গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
পরিদর্শন দল প্রধান কার্যালয়সহ সংশ্লিষ্ট শাখাগুলোতে পরিদর্শন চালিয়েছে, যার ভিত্তিতে একটি বিশেষ প্রতিবেদন তৈরি করে তা গভর্নর বরাবর জমা দেওয়ার পর্যায়ে রয়েছে।
দুর্বল ব্যাংকে নিয়মাচার পালন, ঋণ বিতরণে স্বচ্ছতা ও সুশাসন ফিরিয়ে আনতে পর্যবেক্ষক নিয়োগের রেওয়াজ থাকলেও গত জুলাই মাসে দায়িত্ব নেওয়ার পর তা থেকে বেরিয়ে ‘সমন্বয়ক’ নিয়োগের প্রথা চালু করেন বর্তমান গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।
পর্যবেক্ষকরা ব্যাংকের পরিচালক পর্ষদের সভা, নির্বাহী ও অডিট কমিটির বৈঠকে অংশ নেন। কিন্তু ‘সমন্বয়ক’ নিয়োগ দিলেও তাদের সেই ক্ষমতা দেননি নতুন গভর্নর।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক সাইফুর ইসলাম বেসরকারি ন্যাশনাল ব্যাংকে, শফিকুল ইসলাম পদ্মা ব্যাংকে (সাবেক ফারমার্স), নূরুল আমিন ওয়ান ব্যাংকে, আনোয়ার হোসেন এবি ব্যাংকে এবং ফোরকান হোসেন কমার্স ব্যাংকে সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করছেন।
এসব ব্যাংকে ঋণ বিতরণে অনিয়ম, খেলাপি বেড়ে যাওয়ার বিপরীতে আদায় কম হওয়া, আমানত কমে যাওয়ার মতো ঘটনা দেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
গভর্নরের দায়িত্ব নেওয়ার পর রউফ তালুকদার গত অগাস্টে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, ১০টি দুর্বল ব্যাংক চিহ্নিত করেছেন তারা।
প্রত্যেকটি ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের একটি পরিকল্পনা দেওয়ার কথাও জানিয়েছিলেন তিনি। তবে ওই ১০ ব্যাংকের নাম প্রকাশ করেননি।