বদির চার ভাইসহ ১০১ ইয়াবা কারবারির দেড় বছর করে জেল

অস্ত্র মামলায় খালাস, ৮৪ আসামি পলাতক

কক্সবাজার ও টেকনাফ প্রতিনিধি | বৃহস্পতিবার , ২৪ নভেম্বর, ২০২২ at ৯:৫০ পূর্বাহ্ণ

উখিয়া ও টেকনাফের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির চার ভাইসহ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে প্রথম দফায় আত্মসমর্পণকারী ১০১ ইয়াবা কারবারিকে মাদক মামলায় দেড় বছর করে জেল দিয়েছেন আদালত। অস্ত্র মামলায় তাদের খালাস দেয়া হয়েছে। গতকাল বুধবার দুপুরে কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল মামলা দুটির এ রায় ঘোষণা করেন।

রায় ঘোষণাকালে ১৭ আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন এবং বাকি ৮৪ আসামি পলাতক ছিলেন বলে জানান রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (পিপি) ফরিদুল আলম।
তিনি জানান, আসামিদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় এ মামলা থেকে সবাইকে বেকসুর খালাস প্রদান করেছেন আদালত। তবে, ইয়াবা মামলায় প্রত্যেককে এক বছর ৬ মাস সশ্রম কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা অর্থ দণ্ডাদেশ দেয়া হয়েছে। এ মামলায় ২০১৯ সালের ৭ আগস্ট মোহাম্মদ রাসেল নামে এক কারাগারে মৃত্যুবরণ করায় তাকে খালাস দিয়েছেন আদালত। আসামিপক্ষে প্রধান আইনজীবী ছিলেন মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর।

এদিকে, মামলার রায়ে আসামিদের আনন্দিত ও উল্লসিত দেখা গেছে। আদালত থেকে পুলিশ ভ্যানে নেওয়ার পথে তাদের অনেককেই হাত উচিয়ে দর্শকদের অভিবাদনও জানাতে দেখা যায়। ২০১৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি টেকনাফ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কাছে আত্মসমর্পন করেন ১০২ জন আত্মস্বীকৃত ইয়াবা কারবারি ও গডফাদার। এসময় তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হাতে সাড়ে ৩ লাখ ইয়াবা, ৩০টি দেশীয় তৈরি বন্দুক ও ৭০ রাউন্ড গুলি জমা দেন। এরপর ১০২ ইয়াবা কারবারির বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক আইনে টেকনাফ মডেল থানায় তৎকালীন পরিদর্শক (অপারেশন) শরীফ ইবনে আলম বাদী হয়ে দুটি মামলা করেন। মামলা দায়েরের পর সব আসামিকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কঙবাজার জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। ২০১৯ সালের ৭ আগস্ট কারাগারে মোহাম্মদ রাসেল নামে এক আসামির মৃত্যু হয়।

২০২০ সালের ২০ জানুয়ারি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কঙবাজারের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্ন ফারাহ এর আদালতে ১০১ আসামির বিরুদ্ধে মামলার অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন। একই বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি জেলা ও দায়রা জজ আদালতে এ মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। গত ৩০ অক্টোবর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা টেকনাফ থানার তৎকালীন পরিদর্শক (তদন্ত) এবিএমএস দোহার সাক্ষ্য প্রদানের মধ্য দিয়ে এই মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়। এরপর গত ১৪ ও ১৫ নভেম্বর আসামিদের পক্ষে সাফাই সাক্ষী ও যুক্তি-তর্ক শেষে গতকাল ২৩ নভেম্বর মামলার রায় ঘোষণার দিনক্ষণ ঠিক করা হয়। এ মামলায় মোট ২১ জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দেন।

আসামিরা হলো- সাবেক এমপি বদির ভাই আব্দুর শুক্কুর, বদির ভাই আমিনুর রহমান ওরফে আব্দুল আমিন, দিদার মিয়া, বদির ভাগ্নে মো. শাহেদ রহমান নিপু, আব্দুল আমিন, নুরুল আমিন, বদির ভাই শফিকুল ইসলাম ওরফে শফিক, বদির ভাই ফয়সাল রহমান, এনামুল হক ওরফে এনাম মেম্বার, একরাম হোসেন, ছৈয়দ হোসেন, বদির বেয়াই সাহেদ কামাল ওরফে শাহেদ, মৌলভী বশির আহমদ, আব্দুর রহমান, মোজাম্মেল হক, জোবাইর হোসেন, নুরুল বশর ওরফে কাউন্সিলর নুরশাদ, বদির ফুফাত ভাই কামরুল হাসান রাসেল, বর্তমানে টেকনাফ সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান ওরফে জিহাদ, মোহাম্মদ শাহ, নুরুল কবির, মারুফ বিন খলিল ওরফে বাবু, মোহাম্মদ ইউনুছ, ছৈয়দ হোসেন ওরফে ছৈয়দু, মোহাম্মদ জামাল ওরফে জামাল মেম্বার, মো. হাসান আব্দুল্লাহ, রেজাউল করিম ওরফে রেজাউল মেম্বার, মো. আবু তাহের, রমজান আলী, মোহাম্মদ আফছার, হাবিবুর রহমান ওরফে নুর হাবিব, শামসুল আলম ওরফে শামশু মেম্বার, মোহাম্মদ ইসমাঈল, আব্দুল গনি, মোহাম্মদ আলী, জামাল হোসেন, আব্দুল হামিদ, নজরুল ইসলাম, মোয়াজ্জেম হোসেন ওরফে দানু, মোহাম্মদ সিরাজ, মোহাম্মদ আলম, মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, হোসেন আলী, নুরুল কবির মিঝি, শাহ আজম, জাফর আহমেদ ওরফে জাফর, রুস্তম আলী, মোহাম্মদ হোছাইন, নুরুল আলম, শফি উল্লাহ, মো. জহুর আলম, মোহাম্মদ হুসাইন, মোহাম্মদ সিদ্দিক, রবিউল আলম, মঞ্জুর আলী, হামিদ হোসেন, মোহাম্মদ আলম, নুরুল আমিন, বোরহান উদ্দিন, ইমান হোসেন, মোহাম্মদ হারুন, শওকত আলম, হোছাইন আহম্মদ, মোহাম্মদ আইয়ুব, মো. আবু ছৈয়দ, মো. রহিম উল্লাহ, মোহাম্মদ রফিক, মোহাম্মদ সেলিম, নুর মোহাম্মদ, বদির খালাত ভাই মং অং থেইন ওরফে মমচি, মোহাম্মদ হেলাল, বদিউর রহমান ওরফে বদুরান, ছৈয়দ আলী, মোহাম্মদ হাছন, নুরুল আলম, আব্দুল কুদ্দুস, আলী আহম্মেদ, আলমগীর ফয়সাল ওরফে লিটন, জাহাঙ্গীর আলম, নুরুল আলম, সামছুল আলম শামীম, মোহাম্মদ ইউনুছ, নুরুল আফসার ওরফে আফসার উদ্দিন, মোহাম্মদ শাহজাহান আনছারী, মোহাম্মদ হোছাইন, নুরুল হুদা, শাহ আলম, আব্দুর রহমান, ফরিদ আলম, মাহবুব আলম, রশিদ আহমেদ, মোহাম্মদ তৈয়ব, জাফর আলম, মোহাম্মদ হাশেম ওরফে আংকু, আবু তৈয়ব, আলীনেওয়াজ, মোহাম্মদ আইয়ুব, কামাল হোসেন, নুরুল বশর ওরফে কালাভাই, আব্দুল করিম ওরফে করিম মাঝি, দিল মোহাম্মদ ও মো. সাকের মিয়া ওরফে সাকের মাঝি।

এ রায়ে রাষ্ট্রপক্ষ সন্তুষ্ট বলে জানান কঙবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ফরিদুল আলম। তিনি বলেন, ‘এজাহার ও চার্জশিটের দুর্বলতার কারণে আসামিদের সাজার পরিমাণ কম হয়েছে। তবে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়েছে। রায়ে আমরা সন্তুষ্ট।’

আসামি পক্ষের আইনজীবী সাবেক পিপি অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আত্মসমর্পণকারী আসামিদের প্রতীকী সাজা দিয়েছেন আদালত।’

পূর্ববর্তী নিবন্ধসৌদি গোলরক্ষককে ফ্ল্যাট দিতে চান সাবেক মেয়র মনজুর আলম
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে এসেছে মাধ্যমিকের ২ শতাংশ বই