অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত অর্ধশতাধিক পরিবার এখনো ক্ষতিপূরণ পায়নি

বিএম কন্টেনার ডিপো

সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি | বৃহস্পতিবার , ১০ নভেম্বর, ২০২২ at ৯:৩৩ পূর্বাহ্ণ

সীতাকুণ্ডে বিএম কন্টেনার ডিপো ট্র্যাজেডিতে প্রাণ হারান উপজেলার সলিমপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ সলিমপুর এলাকার বাসিন্দা ও ডিপোর ক্রেনচালক আবদুল মনির হোসেন (৩০)। মনির যখন নিহত হন, তখন তাঁর স্ত্রী রহিমা আক্তার (২২) ছিলেন সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ও শেষ অবলম্বন মনিরের মৃত্যুতে দিশেহারা হয়ে পড়েন তাঁর স্ত্রী রহিমা। স্বামীর মৃত্যুর পর বাবার বাড়িতে আশ্রয় নেন। সেখানে গত আগস্টে পুত্রসন্তানের জন্ম দেন তিনি। শিশুসন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায় দিন কাটছে তাঁর। দুর্ঘটনার পর ডিপো কর্তৃপক্ষ ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দিলেও তা এখনো পাননি। ক্ষতিপূরণ পেতে প্রতিদিন সম্ভাব্য সব স্থানে দৌঁড়ঝাঁপ করছেন। কিন্তু দিন শেষে নিরাশ হয়ে ফিরছেন।

শুধু রহিমা আক্তার নন, দুর্ঘটনার সাড়ে চার মাস পার হলেও এখনো ক্ষতিপূরণ পায়নি অর্ধশতাধিক হতাহতের পরিবার। ক্ষতিপূরণ পেতে দীর্ঘ সময় দৌঁড়ঝাঁপের পর কোনো প্রতিকার না পেয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। পাশাপাশি অভিযোগ নিয়ে দ্বারস্থ হয়েছেন সীতাকুণ্ড প্রেসক্লাবেও।

দুই মাস বয়সী শিশুকে কোলে নিয়ে সীতাকুণ্ড প্রেসক্লাবে আসা রহিমা আক্তার অভিযোগ করেন, ক্ষতিপূরণ পেতে ডিপো কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করেছেন। কিন্তু শত চেষ্টার পরও কোনো সাড়া না পেয়ে বাঁচার তাগিদে স্বামীর বাড়ি ছেড়ে বাবার বাড়ি চলে যান। সন্তানের ভরণপোষণ ও চিকিৎসা ব্যয় নিয়ে চরম সংকটে পড়েছেন।

বিস্ফোরণে আহত উপজেলার ভাটিয়ারি এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ ফারুক বলেন, তিনি ১০ বছর ধরে এ ডিপোতে ডেস্ক সুপারভাইজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। দুর্ঘটনার পর এক মাসের বেশি সময় চিকিৎসায় কয়েক লাখ টাকা খরচ হয়েছে। ডিপো কর্তৃপক্ষ তাঁকে হাসপাতালে দেখতে গিয়ে মাত্র পাঁচ হাজার টাকা দেন। সেই সময় যথাযথ চিকিৎসার প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ক্ষতিপূরণের টাকা দিয়ে দেবে বলেও আশ্বাস দেওয়া হয়। কিন্তু এখনো ক্ষতিপূরণের টাকার জন্য কর্তৃপক্ষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন তিনি। দুর্ঘটনায় আহত নোয়াখালীর মামুন, আমিরুল ইসলাম, নূর হোসেন, বিধান দে, জাহাঙ্গীর, নোমান ও বরিশালের মফিজ, মুরাদসহ একাধিক ব্যক্তি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিস্ফোরণের পরে চিকিৎসা ব্যয়সহ সংসারের ভরণপোষণের খরচ মেটাতে দীর্ঘ ভোগান্তিতে পড়লেও কর্তৃপক্ষ পাশে দাঁড়ায়নি। উল্টো কর্তৃপক্ষের ঘোষিত ক্ষতিপূরণের টাকা চাইতে গিয়ে একাধিকবার বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়েছে। তাই বাধ্য হয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেছেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, দুর্ঘটনার পর বিএম কর্তৃপক্ষ হতাহত অনেককেই ক্ষতিপূরণ দিয়েছে। তবে শনাক্তে জটিলতার কারণে এখনো কিছু মানুষ ক্ষতিপূরণ পাননি। বিষয়টি নিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন। যাঁরা ক্ষতিপূরণ পাননি, তাঁদের তালিকা করে দ্রুত ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

বিএম কন্টেনার লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক মঈনুল আহসান খান জানান, উত্তরাধিকার সনদের জটিলতার কারণে নিহত তিনজনের পরিবারকে এখনো ক্ষতিপূরণ দিতে পারেননি। পাশাপাশি তালিকা প্রণয়নে কিছু জটিলতার কারণে এখনো ক্ষতিপূরণ পাননি বেশ কয়েকজন আহত ব্যক্তি। যাঁরা এখনো ক্ষতিপূরণ পাননি, তাঁদের শিগগির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।

গত ৪ জুন রাতে সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি ইউনিয়নের বিএম কনটেনার ডিপোতে আগুন লাগে। এতে সীতাকুণ্ড ও কুমিরা ফায়ার সার্ভিসের ১৩জন কর্মীসহ ৫১জন নিহত হন। আহত হন ২৩০ জনের বেশি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধগ্যাস পাইপ লাইনের কাজের কারণে দীর্ঘ যানজট
পরবর্তী নিবন্ধকর্ণফুলীতে সড়কের পাশে মিলল অজ্ঞাত ব্যক্তির লাশ