আগামী ডিসেম্বর নাগাদ উদ্বোধন হতে যাচ্ছে স্বপ্নের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল। গত ৩ বছরে টানেল এলাকায় পাল্টে গেছে অনেক কিছু। অধিগ্রহণকৃত জমির উপর বিশাল সড়ক হয়েছে, কদিন পর সেই সড়কে চলবে বড় বড় গাড়ি। কিন্তু এখন পর্যন্ত টানেল প্রকল্পের আওতাধীন পুনবর্বাসন ক্ষতিপূরণ পায়নি প্রায় ৩০০ পরিবার। অথচ আর দুই দিন পরেই আগামী ৩১ অক্টোবর শেষ হচ্ছে পুনর্বাসন প্রকল্পের মেয়াদকাল।
জমি ভাগাভাগি নিয়ে মামলা, বিদেশে অবস্থান, করোনা পরিস্থিতিসহ নানা কারণে এখনো পর্যন্ত পুনর্বাসন ক্ষতিপূরণের প্রায় ২০০ কোটি টাকা আটকে আছে বলে জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্তরা। এ অবস্থায় প্রকল্পের মেয়াদ আরো ৫ বছর বাড়ানো জন্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন জানিয়েছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান। এর আগে গত ১৬ অক্টোবর ক্ষতিগ্রস্তরা স্থানীয় চেয়ারম্যান নোয়াব আলীর মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল প্রকল্পের উপ প্রকল্প পরিচালক (প্রশাসন ও পুনর্বাসন) ড. অনুপম সাহা বরাবর জনস্বার্থ বিবেচনায় পুনর্বাসন কার্যক্রমের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন জানান। এতে উল্লেখ করা হয়, ১৯৭৯-৮০ সাল থেকে বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য বৈরাগ ইউনিয়নের আশপাশের এলাকায় কয়েক দফা জমি অধিগ্রহণ করা হয়। উন্নয়নের স্বার্থে এখানকার মানুষ বরাবরই সহযোগিতা করে আসছে। সর্বশেষ টানেল প্রকল্পের জন্য বৈরাগ মৌজা থেকে ২০ হেক্টরের বেশি জায়গা অধিগ্রহণ করা হয়।
স্থানীয়রা জানান, মেয়াদ বাকি আছে মাত্র দুই দিন। কিন্তু অংশীদারদের মধ্যে ভাগাভাগি নিয়ে বিরোধ, প্রকৃত মালিকানা ও ভুল বিএস রেকর্ড নিয়ে আদালতে মামলা, নাবালক-নাবালিকাদের অভিভাবক নিযুক্ত সংক্রান্ত জটিলতা, করোনাকালীন অফিস আদালত বন্ধ থাকায় প্রয়োজনীয় নথিপত্র সংগ্রহে বিলম্ব, বিদেশে অবস্থানসহ নানা কারণে ক্ষতিগ্রস্ত এক তৃতীয়াংশ মানুষ এখন পর্যন্ত ক্ষতিপূরণের টাকা তুলতে পারেনি। এ কারণে পুনর্বাসন কার্যক্রমের মেয়াদ বাড়ানোর দাবি ক্ষতিগ্রস্তদের।
স্থানীয় বৈরাগ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নোয়াব আলী আজাদীকে বলেন, বৈরাগ এলাকার মানুষ অধিগ্রহণের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত। গত দুই বছর করোনার কারণে অনেক কিছুই স্বাভাবিক ছিল না। তাই পুনর্বাসনের মেয়াদ বাড়িয়ে সবার ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করার আবেদন জানাচ্ছি। তিনি বলেন, অন্তত ৩শ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের ২০০ কোটি টাকার মত ক্ষতিপূরণ এখনো আটকা আছে।
এ প্রসঙ্গে টানেল প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কেউই নাম প্রকাশ করে মন্তব্য করতে রাজি হননি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা বলেন, ৩১ অক্টোবর পুনর্বাসন প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। যে কোনো প্রকল্পের একটা নির্দিষ্ট মেয়াদকাল থাকতে হয়। কিছু মানুষ নিজেদের ভাগাভাগি নিয়ে সমঝোতায় পৌঁছতে না পেরে মামলায় জড়িয়েছেন। এই মামলা কবে নিষ্পত্তি হবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। আমরা ৬ মাস আগে থেকে এলাকায় মাইকিং করছি, ক্ষতিগ্রস্তরা যেন সমঝোতায় এসে টাকা উত্তোলন করে। ওই কর্মকর্তা বলেন, মেয়াদ শেষ হলেই যে ক্ষতিপূরণের টাকা আর পাওয়া যাবে না এমন নয়। সরকার ক্ষতিগ্রস্তদের ব্যাপারে সবসময় মানবিক। আইনের বিধিবিধান বিবেচনায় হয়ত বিকল্প কোনো ব্যবস্থা থাকবে।