এক সময় বিশ্ব ক্রিকেটে প্রতাপশালী দল ছিল জিম্বাবুয়ে। কিন্তু কালের বিবর্তনে জিম্বাবুয়ের সে শক্তিমত্তা হারিয়ে গেছে এখন। এক সময় প্রায় প্রতি বছরই এক বা একাধিক দ্বি-পাক্ষিক সিরিজে মুখোমুখী হতো বাংলাদেশ ও জিম্বাবুয়ে। কিন্তু এখন শক্তিমত্তা, র্যাংকিং সব মিলিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে গেছে অনেকটাই। তবে দীর্ঘ ২৫ বছরের দ্বৈরথে একবারও বিশ্বকাপের মঞ্চে মুখোমুখী হয়নি এই দুই দেশ। অবশেষে এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ঘুচতে যাচ্ছে সেই অপেক্ষা। প্রথমবারের মত বিশ্বকাপে মুখোমুখী হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ও জিম্বাবুয়ে। ব্রিজবেনের গাব্বা স্টেডিয়ামে আগামীকাল রোববার জিম্বাবুয়ের মুখোমুখী হবে সাকিব আল হাসানের দল। খেলা শুরু হবে বাংলাদেশ সময় সকাল ৯টায়। জিম্বাবুয়ে ও বাংলাদেশ জিতেছে একটি করে ম্যাচ।
তবে জিম্বাবুয়ে এখনো পর্যন্ত হারেনি। কারণ দুই ম্যাচের অপরটি বৃষ্টির কারণে পরিত্যক্ত হওয়ায় তাদের পয়েন্ট দুই ম্যাচ থেকে তিন। তাই সেমি-ফাইনালে ওঠার আশা বাঁচিয়ে রাখতে দুই দলের জন্যই ম্যাচটি ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে পাকিস্তানের বিপক্ষে অসাধারণ জয়ের পর দারুণ সম্ভাবনা জেগেছে জিম্বাবুয়ের। ১৯৯৭ সালে কেনিয়ায় প্রেসিডেন্টস কাপে প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচে দেখা হয় এই দুই দলের। এরপর থেকে প্রায় নিয়মিতই দুই দল খেলে আসছে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ। এই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই প্রথম টেস্ট ম্যাচ জিতেছিল বাংলাদেশ। এই দলের বিপক্ষেই ২০০৬ সালে জিতেছিল প্রথম টি-টোয়েন্টি। খুলনার সেই ম্যাচ দিয়ে এই সংস্করণে অভিষেক হয়েছিল দুই দলের। টি-টোয়েন্টিতে এখন পর্যন্ত দুই দল খেলেছে ১৯ ম্যাচে। যেখানে বাংলাদেশের জয় ১২টি আর বাকি সাতটিতে জিতেছে জিম্বাবুয়ে। তবে দুই দলের মধ্যকার সবশেষ সিরিজটি জিম্বাবুয়ে জিতেছে ২-১ ব্যবধানে। ওয়ানডেতে ৮১ ম্যাচে মুখোমুখী হয়ে বাংলাদেশের ৫১ জয়ের বিপরীতে জিম্বাবুয়ের জয় ৩০ ম্যাচে। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে নির্দিষ্ট কোনো প্রতিপক্ষের বিপক্ষে এর চেয়ে বেশি ম্যাচ খেলেনি বাংলাদেশ। এছাড়া দুই দল টেস্ট খেলেছে ১৮টি। সেখানেও ৮-৭ ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। তিন সংস্করণ মিলিয়ে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১১৮টি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। যা আর কোনো দলের বিপক্ষে খেলার রেকর্ড নেই। কিন্তু দীর্ঘ ২৫ বছরে ওয়ানডে বা টি-টোয়েন্টি কোনো সংস্করণের বিশ্বকাপেই মুখোমুখী হয়নি এ দুই দল।
শক্তি আর সামর্থে এগিয়ে থেকে বাংলাদেশ দল বিশ্বকাপে খেলতে গেলেও মাঠের লড়াইয়ে কিন্তু এগিয়ে জিম্বাবুয়ে। অস্ট্রেলিয়ায় চলতি বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত তিনটি ম্যাচ জিতেছে জিম্বাবুয়ে। তিনটিতেই ম্যাচ সেরার পুরস্কার জিতেছেন সিকান্দার রাজা। পার্থে গত বৃহস্পতিবার সুপার টুয়েলভের ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে অবিস্মরণীয় জয়ের ম্যাচে ২৫ রানে ৩ উইকেট নেন তিনি। পাকিস্তানকে হারানোর আগে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বৃষ্টির কল্যাণে ১ পয়েন্ট পেয়েছে জিম্বাবুয়ে। সুপার টুয়েলভে জিম্বাবুয়ের বাকি তিন ম্যাচের দুইটিতে প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডস। তাই তাদের সামনে রয়েছে শেষ চারের টিকেট পাওয়ার বেশ ভালো সুযোগ। তবে এভাবে ভাবতে রাজি নন দলটির প্রাণভোমরা সিকান্দার রাজা। বরং একটি একটি করে ম্যাচের দিকে তাকিয়ে তারা। পাকিস্তানকে হারানোর পর সংবাদ সম্মেলনে সেমি-ফাইনালে খেলার সম্ভাবনার কথা জিজ্ঞেস করা হলে রাজা জানান, এখন শুধু বাংলাদেশ ম্যাচ নিয়ে চিন্তা করবেন তারা।
জিম্বাবুয়ের ঠিক বিপরীত অবস্থায় রয়েছে বাংলাদেশ। নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করলেও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে একেবারে উড়ে গেছে সাকিব আল হাসানের দল। তাই জিম্বাবুয়ের মুখোমুখী হওয়ার আগে নিজেদের পরিকল্পনা শুধরে নেওয়ার কথাই বললেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। সিডনিতে গত বৃহস্পতিবার দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হারের পর সংবাদ সম্মেলনে সাকিবের কাছে প্রশ্ন ছিল, ১০৪ রানের পরাজয়ে দলের আত্মবিশ্বাসে ধাক্কা লাগল কি না। জবাবে অভিজ্ঞ এই বাঁহাতি স্পিনার বলেন, হতাশা আসা স্বাভাবিক। তবে তার চোখ এখন সামনের ম্যাচে। দুদিন পরে আমাদের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ। ওই ম্যাচের দিকে পূর্ণ মনোযোগ দিতে হবে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচ থেকে বেশ কিছু পরিকল্পনা করতে হবে। কিছু পরিকল্পনায় বদল আনতে হতে পারে। ভিন্ন কন্ডিশনে ভিন্ন প্রতিপক্ষের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করতে হবে।