চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী এবং প্রতিবেশী নিউজিল্যান্ডের কাছে হার দিয়ে নিজেদের মাঠে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শুরু করেছিল স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া। তাই দ্বিতীয় ম্যাচটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল স্বাগতিকদের জন্য। এখন থেকে প্রতিটা দলের জন্য প্রতিটা ম্যাচে কেবলই জয় তুলে নিলে চলবে না। মাথায় রাখতে হবে রান রেটের বিষয়টিও। কারণ বৃষ্টির কারণে কখন যে কোন ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়ে যায় তা বলা মুশকিল। আর সে কাজটি যেন গতকাল দারুণভাবে সেরে নিল অস্ট্রেলিয়া।
তবে অস্ট্রেলিয়া বললে ভুল বলা হবে। বলা যায় একজন মার্কাস স্টয়নিসই দলের রান রেটকে নিয়ে গেলে অনেকদূর এগিয়ে। যদিও এক ম্যাচে হারা দল হিসেবে রান রেটের দিক থেকে এখনো শ্রীলংকার চাইতে পিছিয়ে অস্ট্রেলিয়া। তবে এই ম্যাচটি সামনে অনেকটাই কাজে দেবে স্বাগতিকদের। ম্যাচের প্রথমভাগে স্বাগতিক বোলাররা তেমন একটা চাপ সৃষ্টি করতে পারেনি লংকান ব্যাটসম্যানদের উপর। তবে তাণ্ডবটা চালিয়েছেন ব্যাট হাতে একজন স্টয়নিস। মূলত তারই তাণ্ডবে উড়ে গেল শ্রীলংকা। দ্বিতীয় ম্যাচে এসে দারুণ এক জয় তুলে নিল স্বাগতিকরা। ৭ উইকেটের জয়ে দারুণভাবে ছন্দে ফিরেছে অস্ট্রেলিয়া। গতকালের এমন জয়ে সেমি ফাইনালের আশা এখন আবার আশার আলো হয়ে জ্বলে উঠেছে। নিজেদের প্রথম ম্যাচে নিউজ্যিলান্ডের কাছে পাত্তা না পাওয়া অস্ট্রেলিয়া এবার পাত্তা দিল না শ্রীলংকাকে। প্রথম ম্যাচে আয়ারল্যান্ডকে উড়িয়ে দেওয়া লংকানরা এবার নিজেরাই উড়ে গেল ।
পার্থে টসে হেরে ব্যাট করতে নামা শ্রীলংকা শুরুতেই ধাক্কা খায়। দ্বিতীয় ওভারেই কুশল মেন্ডিসকে ফেরান প্যাট কামিন্স। ৫ রান করেন এই ওপেনার। দ্বিতীয় উইকেটে নিশাংকা এবং ধনঞ্জয়া ডি সিলভা মিলে যোগ করেন ৬৯ রান। ২৩ বলে ২৬ রান করা ধনঞ্জয়াকে ফিরিয়ে এ জুটি ভাঙ্গেন এস্টন আগার। তৃতীয় উইকেটে আশালাংকার সাথে আরো ২২ রান যোগ করেন নিশাংকা। টি-টোয়েন্টির সাথে অনেকটাই বেমানান ৪৫ বলে ৪০ রান করা নিশাংকা রান আউট হয়ে গেলে ভাঙ্গে এ জুটি। এরপর দ্রুতই উইকেট হারাতে থাকে শ্রীলংকা। তবে একপ্রান্ত ধরে রেখেছিলেন আশালাংকা। ৯৭ রানে ৩ উইকেট থেকে ১২০ রানে ৬ উইকেটে পরিণত হয় শ্রীলংকা। ১৮ ওভার শেষে লংকানদের সংগ্রহ ছিল ১২৬ রান। শেষ দুই ওভারে আরও ৩১ রান তুলে নেয় শ্রীলংকা। আর তাতেই ৬ উইকেটে ১৫৭ রানের চ্যালেঞ্জিং পুঁজি পেয়ে যায় এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়নরা। ১৫৭ রানে থামে শ্রীলংকার ইনিংস। আসালাঙ্কা আর চামিকা করুনারত্নে ১৫ বলে ৩৭ রানের ঝড়ো জুটি গড়ে। ২৫ বলে ৩টি চার এবং ২টি ছক্কার সাহায্যে ৩৮ রান করে অপরাজিত থাকেন আশালাংকা। ৭ বলে ২টি চারের সাহায্যে ১৪ রান করে অপরাজিত থাকেন করুনারত্নে। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে একটি করে উইকেট নিয়েছেন পাঁচ বোলার।
১৫৮ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে অ্যরন ফিঞ্চ এবং ডেভিড ওয়ার্নারের শুরুটা জুতসই হয়নি। চড়াও হতে গিয়ে থিকসানার বলে ফিরেন ১০ বলে ১১ রান করা ওয়ার্নার। দ্বিতীয় উইকেটে ৩৪ রান যোগ করেন ফিঞ্চ এবং মিচেল মার্শ। এজুটি ভাঙ্গেন ধনঞ্জয়া ডি সিলভা। তিনি ফেরান ১৭ বলে ১৮ রান করা মিচেল মার্শকে। এরপর মেক্সওয়েলকে নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন অধিনায়খ ফিঞ্চ। কিন্তু জুটিটা দীর্ঘ হতে দেননি করুনারত্নে। শুরু থেকেই ঝড় তুলতে থাকা মেক্সওয়েলকে ফেরান করুনারত্নে। ফিরে আসার আগে ১২ বলে ২টি চার এবং ২টি ছক্কার সাহায্যে ২৩ রান করে আসেন মেক্সওয়েল। ৮৯ রানে তিন উইকেট পতনের পর উইকেটে আসেন মার্কাস স্টয়নিস। এসেই ব্যাট হাতে তুলতে থাকেন ঝড়। শুধু ঝড়ই তুলেননি এই ব্যাটার। অপর প্রান্তে থাকা অধিনায়ক ফিঞ্চকে রীতিমত দর্শক বানিয়ে রাখলেন। বলতে গেলে বল খেলার সুযোগই পাননি ফিঞ্চ। স্টয়নিসের ব্যাটিং দেখে মনে হচ্ছিল তাদের যেন অনেক রান তুলতে হবে। ১৭ বলে হাফ সেঞ্চুরি পূরন করা স্টয়নিস শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন ১৮ বলে ৫৯ রান করে। এটি টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে কোন অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যানের দ্রুততম হাফ সেঞ্চুরি। যেখানে তিনি ৪টি চারের পাশাপাশি মেরেছেন ছয়টি বিশাল ছক্কা। অপরপ্রান্তে দর্শক হয়ে থাকা ফিঞ্চ অপরাজিত ছিলেন ৪২ বলে ৩১ রান করে। যেখানে তিনি একটি মাত্রও ছক্কা মেরেছেন। মাত্র ২৩ বলে ৬৯ রানের জুটি গড়েন ফিঞ্চ এবং স্টয়নিস। যেখানে ফিঞ্চের অবদান মাত্র ৮ রান। শেষ পর্যন্ত ২১ বল এবং ৭ উইকেট হাতে রেখে জয় তুলে নেয় স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া। ম্যাচ সেরার পুরষ্কার জিতেছেন মার্কাস স্টয়নিস।