গৃহকরের ‘অনিয়ম ও দুর্নীতি’ দুদকে জানাবে সুরক্ষা পরিষদ

২৫ অক্টোবর থেকে মাসব্যাপী কর্মসূচি

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ২২ অক্টোবর, ২০২২ at ৫:৪৪ পূর্বাহ্ণ

‘গলা কাটা’ গৃহকর বাতিল করা না হলে হরতাল, নগর ভবন ঘেরাও এবং বন্দর অচল করে দেয়ার মতো কর্মসূচি ঘোষণা করবে চট্টগ্রাম করদাতা সুরক্ষা পরিষদ। তবে তার আগে প্রস্তাবিত পৌরকর এবং আপিল ঘিরে সংঘটিত ‘অনিয়ম ও দুর্নীতি’র চিত্র তুলে ধরে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ দেবে সংগঠনটি। আগামী ৩০ অক্টোবর স্মারকলিপি আকারে এ অভিযোগ দেয়া হবে। এতে সিটি কর্পোরেশনের ‘অনিয়ম’ খতিয়ে দেখার আহ্বান জানানো হবে। এ ছাড়া পর্যায়ক্রমে ২৫ অক্টোবর থেকে ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত টানা এক মাস ৪১ ওয়ার্ডে গণ মতবিনিময় সভা, ১৩ নভেম্বর স্থানীয় সরকার মন্ত্রীকে এবং সুবিধাজনক সময়ে মহানগরের আওতাধীন সংসদীয় আসনের সদস্যদের (এমপি) স্মারকলিপি দেয়া হবে। এতে করবিধি-১৯৮৬ বাতিলের দাবি জানানো হবে। ১৮ নভেম্বর কদমতলীতে আয়োজন করা হবে নাগরিক সংলাপ।

গতকাল গৃহকরের অনিয়ম তুলে ধরতে কদমতলীতে আয়োজিত গণশুনানি থেকে এ সব কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। কর্মসূচি ঘোষণা করে চট্টগ্রাম করদাতা সুরক্ষা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর আমির উদ্দিন বলেন, আইন বাতিল করতে হবে। মেয়র যদি আমাদের কথা না শুনেন মেয়রকে ঘেরাও করব। সরকার আমাদের কথা না শুনলে বন্দর অচল করে দেব। চট্টগ্রাম অচল করে দেব। চট্টগ্রামে দিনের পর দিন হরতাল দিয়ে আমাদের দাবি আদায় করে নেব।

গণশুনানিতে বক্তব্য রাখেন মুক্তিযোদ্ধা গবেষণা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান ডা. মাহফুজুর রহমান, পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সহ-সভাপতি প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া, সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি এডভোকেট আখতার কবির চৌধুরী, গণস্বাস্থ্য অধিকার রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব ডা. সুশান্ত বড়ুয়া, এডভোকেট ভুলন ভৌমিক ও চট্টগ্রাম করদাতা সুরক্ষা পরিষদের সভাপতি নুরুল আবছার। গণশুনানির ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন শহীদুল আলম স্বপন।

ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, ঘুষ দিলে ট্যাঙ কমে। তার মানে মেয়র সাহেব চাইলে ট্যাঙ কমিয়ে রাখতে পারেন। ঘুষ দিলে যদি কমে তাহলে এমনি কমবে না কেন। তিনি ঘুষ বন্ধে দৈর্ঘ্য-প্রস্থ মেপে গৃহকর ধার্য্যের প্রস্তাব দেন। প্রয়োজনে সেখানে ২ থেকে ১০ শতাংশ বাড়িয়ে দেয়া যেতে পারে। তিনি বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে নাম ধরে সবাই যেভাবে সোচ্চার হচ্ছেন সেটা ভালো দিক। পাড়ায় গিয়ে দুর্নীতিবাজদের নাম উচ্চারণ করতে পারলে লজ্জ্বায় হলেও দুর্নীতি ছেড়ে দিবে।

এডভোকেট আখতার কবির চৌধুরী বলেন, সেবা খাত থেকে দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে সিটি কর্পোরেশন। এ সময় তিনি সচেতন মানুষের নীরবতার কারণে দুর্নীতি করার সাহস করছে বলেও মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, ১৯৮৬ সালের করবিধি ভাড়ার উপর হলেও সারা দেশের কোথাও কার্যকর করা হয়নি। চট্টগ্রামে জনগণের আপত্তিতে সাবেক মেয়র বাস্তবায়ন করতে সাহস করেননি। যে আইনটি স্থগিত ছিল সেটা আবেদন করে প্রত্যাহার করিয়ে নেন বর্তমান মেয়র, শুধু চট্টগ্রামের জন্য। আবার তিনি ‘সাপ হয়ে ছোবল মারে এবং ওঝা হয়ে ঝাড়ে’ এর মত আপিলের পরামর্শ দিচ্ছেন। বর্তমান মেয়র দুঃসাহসী আচরণ করছেন। জাইকার একটি প্রকল্প পাওয়ার জন্য সম্ভবত দুঃসাহসটা দেখাচ্ছেন। আবারও স্থগিত করার আহ্বান জানাব।

তিনি বলেন, ফাইভ পার্সেন্টের বেশি লোক জানেই না আপিল করতে হবে। এক পর্যায়ে তাদের বিরুদ্ধে সার্টিফিকেট মামলা হবে। বাড়ি নিলাম হবে। মানে বাস্তুহীন করার উন্নত পদ্ধতির দিকে যাচ্ছে।

আখতার কবির চৌধুরী বলেন, ওনাকে আমরা (সিটি মেয়র) পরিচ্ছন্ন জননেতা বলে জানতাম। মানুষ দায়িত্বে না এলে আসলে বুঝা যায় না। কাজে না আসলে বুঝা যায় না। উনি এখন চট্টগ্রামের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জ্বনক ব্যক্তি হয়ে দাঁড়িয়েছেন।

তিনি বলেন, জনপ্রতিনিধি হলে সহ্য শক্তি ধারণ করা উচিত। নাগরিকরা নানা কথা বলতে পারেন। সহ্য শক্তি না থাকলে উচিত আগামীকালই পদত্যাগ করা। আপনাকে ওই চেয়ারে মানায় না। ঘুষখোর ও দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। তাদের সুরক্ষা দিচ্ছেন। যাদের ভোটে কথিত নির্বাচিত হয়েছেন তাদের উপর শোষণ চালানোর জন্য আপনার লোকদের লেলিয়ে দিয়েছেন। জনগণ একবার সচেতন হয়ে সোচ্চার হলে কী হবে ভেবে দেখেছেন কী?

সিটি কর্পোরেশনের মশার ওষুধ কেনায় দুর্নীতি হচ্ছে বলেও দাবি করেন তিনি। পাঁচ লাখ টাকার নিচে দফায় দফায় দরপত্র আহ্বান করে দুর্নীতি করা হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।

ডা. সুশান্ত বড়ুয়া বলেন, একজন বলেছেন জন্মনিবন্ধনের জন্যও ঘুষ চায়। কেন চাইবে। কেন মৃত্যু সনদের জন্য ঘুষ দিতে হবে। এটা সিটি মেয়রকে স্বচ্ছভাবে তদন্ত করতে হবে।

এডভোকেট ভুলন ভৌমিক বলেন, সিটি কর্পোরেশন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের পরিবর্তে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। ট্যাক্স দেয়ার পরও সুইপারকে আলাদা টাকা দিতে হয়। তিনি বলেন, যে আইনে আপিল করলে ট্যাঙ কমাবে সে আইনে বিনা আপিলে ট্যাক্স কমিয়ে দিন।

শহীদুল আলম স্বপন বলেন, আজকের গণশুনানি প্রতীকী। আমরা কোনো কর্তৃপক্ষ নই। তিনি বিদ্যমান ট্যাঙ থেকে ১০ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়ে বলেন, এতে কারো আপত্তি থাকবে না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসরকার জনভীতি রোগে আক্রান্ত : ফখরুল
পরবর্তী নিবন্ধট্যাক্স কমাতে ঘুষের প্রস্তাব