মজুদ থাকা সত্ত্বেও কৃষিতে কমছে সারের ব্যবহার

দাম বাড়ায় কিনতে পারছেন না অনেক কৃষক উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার শঙ্কা

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ২১ অক্টোবর, ২০২২ at ৫:৪৪ পূর্বাহ্ণ

সারের মজুদ পর্যাপ্ত হলেও দাম বেড়ে যাওয়ায় কৃষিতে সারের ব্যবহার কমে যাচ্ছে। সার ক্রয়ে খরচ বেড়ে যাওয়ায় মাঠে সার প্রয়োগে হিমশিম খাচ্ছেন কৃষক। যা দেশের কৃষি উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। অপরদিকে সারে ভেজাল দেয়ার প্রবণতাও আশঙ্কাজনক পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে।
সূত্র জানিয়েছে, দেশে কৃষিতে ব্যাপকহারে সারের প্রয়োগ হয়ে আসছে বহুদিন ধরে। এক সময় জমিতে রাসায়নিক সারের তেমন ব্যবহার না থাকলেও ফলন হতো। কিন্তু এখন দিনে দিনে পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে যে রাসায়নিক সারের প্রয়োগ ছাড়া কোন উৎপাদনই সম্ভব নয়। ধানের পাশাপাশি বিভিন্ন সবজি উৎপাদনে প্রচুর সারের ব্যবহার হয়। এতে করে দেশে প্রতিদিনই বাড়ছে সারের ব্যবহার। সরকার সার নিয়ে কোন ধরনের ঝুঁকি নিতে চায় না বিধায় পর্যাপ্ত মজুদের বিষয়টি নিশ্চিত করে। দেশে বর্তমানে প্রায় ৫৭ লক্ষ ৫০ হাজার টন রাসায়নিক সারের চাহিদা রয়েছে। এরমধ্যে ২৬ লাখ ৫০ হাজার টন ইউরিয়া, ৭ লক্ষ টন টিএসপি, ৭ লক্ষ টন এমওপি এবং সাড়ে ১৬ লক্ষ ডিএপি সার ব্যবহার করা হয়।

সরকার ইউরিয়া সারের মূল্য কেজি প্রতি ৬ টাকা করে বৃদ্ধি করেছে। কৃষিতে ভর্তুকি কমানোর জন্য সরকার এই উদ্যোগ নিলেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। সরকার ইউরিয়ার মূল্য কেজি প্রতি ৬টাকা বাড়ালেও প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকদেরকে চড়া দামে সার কিনতে হচ্ছে। কোন কোন ক্ষেত্রে কেজি প্রতি ১০ টাকা হাতিয়ে নেয়ার ঘটনাও ঘটছে। এতে করে দেশে পর্যাপ্ত সারের মুজদ থাকলেও কৃষকদের তা কিনতে বেশ অসুবিধা হচ্ছে।

সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয় এবং বিসিআইসির দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, দেশে বর্তমানে ২০ লাখ টনেরও বেশি সারের মজুদ রয়েছে। চট্টগ্রামের সিইউএফএল এবং কাফকো থেকে প্রতিদিনই প্রচুর সার দেশের নানা অঞ্চলে পরিবাহিত হচ্ছে। পরিবহন জনিত সংকট থাকলেও সারের কোন সংকট নেই প্রত্যন্ত অঞ্চলে। তবে দাম বাড়তি প্রদানই কৃষির জন্য কাল হয়ে উঠতে পারে বলে কৃষকেরা মন্তব্য করেছেন।

গতকাল কয়েকজন কৃষকের সাথে আলাপকালে তারা বলেন, আগে একর প্রতি ৯ হাজার টাকার সার কিনলে হয়ে যেতো। এখন তা ১৩ থেকে ১৫ হাজারে গিয়ে ঠেকেছে। একর প্রতি ৪ থেকে ৬ হাজার টাকা খরচ বেড়ে যাওয়ায় বহু কৃষকই সারের ব্যবহার কমিয়ে দিয়েছে। প্রয়োজনের চেয়ে কম সার দেয়ায় ফসল উৎপাদনে এর প্রভাব পড়তে পারে বলেও একাধিক কৃষক মন্তব্য করেছেন।

অপরদিকে টিএসপি এবং ডিএপি সারে প্রচুর পরিমানে ভেজাল মেশানো হচ্ছে। দেশের নানা স্থানে বেশ কয়েকটি ভেজাল সারের ঘটনা ধরা পড়লেও জড়িতরা ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। প্রয়োজনের তুলনায় কম সার ব্যবহার এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভেজাল সার প্রয়োগ কৃষির জন্য কাল হয়ে দেখা দিতে পারে বলে উল্লেখ করে পতেঙ্গা অঞ্চলের কৃষক মোহাম্মদ শরফুদ্দীন দৈনিক আজাদীকে বলেন, সার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি জিনিস। এই ব্যাপারে সকলের সতর্ক থাকা উচিত। কারণ কৃষিকে বিপর্যয় আসলে দেশের অন্যান্য অনেক উন্নয়ন ম্লান হয়ে যাবে।

চট্টগ্রাম কৃষি বিভাগের শীর্ষ একজন কর্মকর্তা সারের ব্যবহার কিছুটা কমার কথা স্বীকার করে বলেছেন, সারের দাম বাড়ার পাশাপাশি মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে গেছে। এতে প্রান্তিক পর্যায়ের যে সব মানুষ কৃষির সাথে জড়িত তাদের অভাব দিনে দিনে প্রকট হচ্ছে। এই অবস্থায় সারের ব্যবহার না কমিয়ে তাদের উপায়ও নেই। বিষয়টি কৃষির জন্য কতটুকু ক্ষতির প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, রাসায়নিক সারের উপর ফলন বহুলাংশে নির্ভর করে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রকল্প ব্যয় বাড়ছে ১শ কোটি টাকা
পরবর্তী নিবন্ধসিইউএফএলের এমডি আট ঘণ্টা অবরুদ্ধ