প্রকল্প ব্যয় বাড়ছে ১শ কোটি টাকা

রাউজান বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ ।। গ্যাস সংকটে ধীরগতি, নতুন ঠিকাদার নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন

| শুক্রবার , ২১ অক্টোবর, ২০২২ at ৫:৪৩ পূর্বাহ্ণ

আজাদী প্রতিবেদন
গ্যাস সংকটের কারণে রাউজান ৪৩৭ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে পিডিবি এগোচ্ছে ধীরগতিতে। নির্দিষ্ট সময়ে প্রথম ঠিকাদার কাজের সিকিউরিটি মানি জমা না দেয়ায় এবং প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শুরু না করায় চুক্তি বাতিল করে নতুন ঠিকাদার নিয়োগের বিষয়টি এখন প্রক্রিয়াধীন আছে বলে জানা গেছে। পুনঃদরপত্রে নিয়োগকৃত সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে নিয়োগ দেয়াসহ কার্যাদেশ দেয়ার জন্য সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে পাঠানো হয়েছে এবং পরবর্তী সভায় উপস্থাপন করা হবে বলে বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে। বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পের প্রথম ঠিকাদারের সাথে চুক্তি বাতিল হওয়ায় প্রকল্পের কাজ অনেক পিছিয়ে গেছে। বেড়েছে প্রকল্প ব্যয়ও।
সূত্র জানায়, নতুন করে প্রকল্পের জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হলে ৭টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করে। নির্ধারিত সময়ে ৭টি প্রতিষ্ঠানের কারিগরি প্রস্তাব উন্মুক্ত করা হয়। দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের কারিগরি প্রস্তাব যাচাই করে কারিগরি মূল্যায়ন প্রতিবেদন ও আর্থিক প্রস্তাব যাচাই করে প্রতিবেদন দাখিল করে। এতে সিএনটিআইসি-সিএমসি কনসোর্টিয়াম, চায়না সর্বনিম্ন দরদাতা বিবেচিত হয় বলে জানান রাউজান ৪৩৭ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মুন্সি বশির আহমেদ। তিনি জানান, দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সিএনটিআইসি-সিএমসি কনসোর্টিয়ামের নাম সুপারিশ করে। সমস্ত ইক্যুইপমেন্টের দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রকল্প ব্যয় ৭ শতাংশের মতো বেড়েছে। তবে এই মুহূর্তে গ্যাসের সংকট থাকায় প্রকল্প বাস্তবায়নে একটু সময় লাগবে। রাউজান তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পুরনো যে দুটো ইউনিট আছে সেই দুটি ইউনিটে এখন যে পরিমাণে গ্যাস লাগে তার অর্ধেক গ্যাস দিয়ে নতুন প্রকল্পে ৪৩৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। এটি দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে লেটেস্ট প্রযুক্তির বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এটি দেশের জন্য উন্নত প্রযুক্তির মডেল হবে। আধুনিক প্রযুক্তির এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মিত হলে একদিকে গ্যাস সাশ্রয় যেমন হবে অন্যদিকে উৎপাদন খরচও হবে কম। সূত্র জানায়, ডিপিপিতে প্রাক্কলিত দর ১৬৪৮ কোটি ৫২ লাখ ১৩ হাজার টাকার উল্লেখ রয়েছে। অন্যদিকে সিএনটিআইসি-সিএমসি কনসোর্টিয়াম কর্তৃক উদ্ধৃত দর ১৭৭৫ কোটি ২৬ লাখ ৪১ হাজার ৪০৮ টাকা দাখিল করা হয়েছে, যা ডিপিপিতে উল্লেখিত প্রাক্কলিত দরের চেয়ে ৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ বেশি। উল্লেখ্য, প্রকল্প বাস্তবায়ন পর্যায়ে ডিপিপি সংশোধন করে ডিপিপি মূল্যের অতিরিক্ত ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
সূত্র জানায়, ১ম সর্বনিম্ন দরদাতার প্রস্তাব অনুসারে বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদিত বিদ্যুতের প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টার উৎপাদন ব্যয় হবে ১ দশমিক ৪১ টাকা। উল্লেখ্য, ২০২০-২০২১ অর্থবছরে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদিত বিদ্যুতের প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টার গড় উৎপাদন ব্যয় ছিল ৩ দশমিক ১৭ টাকা। ফলে সার্বিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় কমানোর ক্ষেত্রে এই কেন্দ্রটি ভূমিকা রাখবে। এ সংক্রান্ত একটি ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদনের জন্য সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির পরবর্তী সভায় উপস্থাপন করা হবে। ২ হাজার ৮৭ কোটি টাকার এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পটির প্রথম টেন্ডার হয়েছিল ২০২০ সালের ২০ জানুয়ারি।
পিডিবি সূত্রে জানা গেছে, ৪২০ মেগাওয়াট রাউজান তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের আয়ুষ্কাল ২০২৩ সালে শেষ হচ্ছে। পিডিবির অর্থায়নে চায়না মেশিনারি ইক্যুপমেন্ট কর্পোরেশন ১৯৯৩ সালে গ্যাস নির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করে। ২১০ মেগাওয়াট সক্ষমতার দুই ইউনিটের একটি দীর্ঘদিন থেকে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বন্ধ রয়েছে। করোনার কারণে চায়না থেকে প্রকৌশলী আসতে না পারায় প্রায় এক বছর হয়ে গেলেও ত্রুটি সারানো সম্ভব হচ্ছে না। অন্যদিকে প্লান্টটির সক্ষমতাও কমে ৩৬০ মেগাওয়াটে নেমেছে। বর্তমানে গ্যাস সংকটের কারণে পুরো প্লান্টটি বন্ধ রয়েছে। পূর্ণ ক্ষমতায় উৎপাদনে গেলে প্লান্টটিতে দৈনিক ৯৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের প্রয়োজন হতো।
পিডিবি জানিয়েছে, চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কের রাউজানে বর্তমান তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র লাগোয়া পিডিবির নিজস্ব জায়গায় ৪৩৭ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন নতুন কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্টটি নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার চান নওফেল
পরবর্তী নিবন্ধমজুদ থাকা সত্ত্বেও কৃষিতে কমছে সারের ব্যবহার